বাজেটে সংবাদপত্র প্রসঙ্গে

14

করোনা মহামারির কারণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত শিল্পগুলোর মধ্যে সংবাদপত্র শিল্প অন্যতম। বিজ্ঞাপনের আয় প্রায় শূন্যের কোঠায়। পত্রিকার পাঠক কমে গেছে বিপুল সংখ্যায়। পত্রিকা বিক্রি থেকে আসা আয়ও নেই বললেই চলে। অথচ সাংবাদিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতাসহ মাসিক পরিচালনা ব্যয়, অফিসভাড়া, ব্যবস্থাপনা ব্যয় ইত্যাদি একই রকম আছে। এ অবস্থায় আয়-ব্যয়ের মধ্যে সামঞ্জস্য না থাকায় অনেক সংবাদপত্র স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। কিছু সংবাদপত্র এরই মধ্যে তাদের মুদ্রিত সংস্করণের প্রকাশ বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে। এমন পরিপ্রেক্ষিতে সংবাদপত্র মালিকদের সংগঠন নিউজ পেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (নোয়াব) পক্ষ থেকে ২০২০-২১ সালের বাজেটে পাঁচ দফা সুযোগ চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু বাজেট প্রস্তাবে সেসবের কোনো উল্লেখই নেই। এমনকি করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত অন্য অনেক শিল্পকে এর আগে বিশেষ প্রণোদনা প্রদান করা হলেও সংবাদপত্র শিল্পে তা দেওয়া হয়নি। দেশের সংবাদপত্র শিল্পের স্বার্থে এমন আচরণ মোটেও কাম্য নয়।
সংবাদপত্র শিল্পের স্বার্থে যে পাঁচ দফা প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল সেগুলো হলো ১. সংবাদপত্রের করপোরেট ট্যাক্স ৩৫ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা, ২. নিউজপ্রিন্ট আমদানির ওপর ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) বাদ দেওয়া, ৩. বিজ্ঞাপন আয়ের ওপর কর (টিডিএস) ৪ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ করা, ৪. উৎসস্থলে কাঁচামালের ওপর ৫ শতাংশের বদলে অগ্রিম কর (এআইটি) শূন্য শতাংশ করা এবং ৫. কর্মীর আয়কর থেকে প্রতিষ্ঠানকে দায়মুক্ত করা ও তাঁর বাড়িভাড়ার পুরোটাই করমুক্ত করা। এই পাঁচ দফা দাবি সম্পূর্ণ মানা হলেও রাজস্ব আয়ে তেমন কোনো পরিবর্তনই হতো না। আর আংশিক বাস্তবায়ন করা হলে তো তার কোনো প্রভাবই পড়ত না রাজস্ব আয়ে। তার পরও পাঁচ দফা দাবি সম্পূর্ণ উপেক্ষা করা এবং আগে প্রণোদনায় সংবাদপত্রকে অন্তর্ভুক্ত না করার পেছনে কী যুক্তি কাজ করেছে, তা আমাদের বোধগম্য নয়।
উন্নত গণতান্ত্রিক দেশে সংবাদপত্রকে প্রকৃত অর্থেই বিকল্প সংসদ হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। জনগণের ভাবনা, মতামত ও প্রত্যাশা তুলে ধরে বলে সরকার পরিচালনায় সংবাদপত্রকে সহায়ক ব্যবস্থা বিবেচনা করা হয়। সে কারণে সেসব দেশে সংবাদপত্র যাতে ভালোভাবে চলতে পারে তার জন্য সরকারগুলোও নানাভাবে সহায়তা করে। আমাদের মতো দেশগুলোতে তেমনটা দেখা যায় না। সংবাদপত্রে সরকারের সমালোচনা করা হলে সরকারে থাকা লোকজন ক্ষুব্ধ হয় এবং সংবাদপত্রের কণ্ঠরোধের চেষ্টা করে। এটা ভালো ধারা নয়। এতে সুস্থ সমালোচনার বদলে অসুস্থ সমালোচনা বৃদ্ধি পায়। আমরা মনে করি, সুস্থ ধারার মত প্রকাশের স্বার্থে সরকার নোয়াবের পাঁচ দফা দাবি বিবেচনায় নেবে এবং প্রস্তাবিত বাজেটে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনবে।