আবাসন ও নির্মাণ শিল্প রক্ষায় উদ্যোগ নিন

11

করোনা মহামারির কারণে সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিরও আজ বিপর্যস্ত অবস্থা। এখানে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত খাতগুলোর মধ্যে অন্যতম নির্মাণ ও আবাসন শিল্প খাত। একই সঙ্গে স্থবিরতা নেমে এসেছে এ খাতের সঙ্গে সাড়ে চার শর বেশি সংযোগ শিল্পে। এসব উপখাতের মধ্যে আছে সিমেন্ট, রড, ইলেকট্রিক যন্ত্রপাতি, টাইলস, রং, পাইপ ফিটিংস, স্যানিটারি ইত্যাদি। থমকে গেছে এসব খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোটি মানুষের জীবন ও জীবিকা। হুমকির মুখে পড়েছে দেড় লাখ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ। দ্রুত এ খাত উদ্ধারের উদ্যোগ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে।
দেশে প্রতিবছর প্রায় ২০ হাজার ফ্ল্যাট বেচাকেনা হতো। লেনদেনের পরিমাণ ছিল ২৫ হাজার কোটি টাকার বেশি। এখন বেচাকেনা নেই বললেই চলে। তদুপরি লকডাউন ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে গিয়ে মার্চ মাস থেকে বন্ধ রয়েছে নতুন নির্মাণ। ফলে নির্মাণশিল্পের সঙ্গে জড়িত ৩৫ লাখ শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছে। আবাসন ও নির্মাণ খাতে অচলাবস্থা থাকায় চাহিদা কমে গেছে রড, সিমেন্ট, সিরামিকসহ অন্যান্য পণ্যের। ফলে সেসব খাতেও বাড়ছে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ। শুধু স্টিল খাতেই গত তিন মাসে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া সিমেন্ট খাতে গত মার্চ ও এপ্রিল মাসে খুচরা বাজারমূল্য অনুযায়ী ক্ষতি হয়েছে প্রায় এক হাজার ৭০০ কোটি টাকা। আবাসন ও নির্মাণ খাতের কাজ বন্ধ থাকার পাশাপাশি সরকারের মেগাপ্রকল্পগুলোর কাজও প্রায় বন্ধ। থমকে আছে অন্যান্য অবকাঠামো উন্নয়নের কাজও। ফলে ৯০ শতাংশ সিমেন্ট কারখানারই উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। অথচ এই সিমেন্টশিল্প দেশের নিজস্ব চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি একটি রপ্তানিমুখী খাত হয়ে উঠেছিল। ডেভেলপাররা ব্যাংক থেকে বিপুল অঙ্কের ঋণ নিয়ে নির্মাণকাজ অর্ধেক করে বসে আছে। এতে ঋণের সুদ বাবদ বিপুল ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে তাদের। মন্দা পরিস্থিতির কারণেও প্লট, ফ্ল্যাটের ক্রেতা কমে গেছে। জানা যায়, সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের নিবন্ধন ব্যয় অনেক বেশি। রয়েছে ভ্যাট-ট্যাক্সেও অতিরিক্তি চাপ। বর্তমান পরিস্থিতিতে এ খাতের সাবলীলতা ফিরিয়ে আনা অত্যন্ত জরুরি। এ জন্য নিবন্ধন ফি, ভ্যাট-ট্যাক্স উল্লেখযোগ্য হারে কমাতে হবে। সেই সঙ্গে নতুন প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করতে হবে। আগামী অর্থবছর থেকে বিনা শর্তে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ফ্ল্যাট, প্লট বা জমি কিনতে অপ্রদর্শিত অর্থ বা কালো টাকা বিনিয়োগ করার সুযোগ রাখতে হবে। এই উদ্যোগটি আবাসন খাতের জন্য মঙ্গল বয়ে আনতে পারে। আগামী অর্থবছর থেকে বিনা শর্তেই নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ফ্ল্যাট, প্লট বা জমি কিনতে অপ্রদর্শিত অর্থ বা কালো টাকা বিনিয়োগ করার সুযোগ দেওয়া হলে আবাসন খাতের জন্য ভালো হবে। পাশাপাশি এ খাতের ব্যবসায়ীদের উত্থাপিত দাবিগুলো সুবিবেচনায় নিতে হবে।