কদমতলী বাস টার্মিনালে দফায় দফায় দু’পক্ষের সংঘর্ষে রণক্ষেত্র, আহত ৩০, ফাঁকা গুলিবর্ষণ

28
দক্ষিণ সুরমার কদমতলীতে পরিবহন শ্রমিকদের দুপক্ষের সংঘর্ষের কিছু চিত্র ও ঘটনাস্থলে আইন শৃংখলা বাহিনীর এ্যাকশন। ছবি- মামুন হোসেন

স্টাফ রিপোর্টার :
নগরীর দক্ষিণ সুরমা কদমতলী কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে পরিবহন শ্রমিকদের বিবদমান দু’পক্ষের দফায় দফায় সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়ে পুলিশসহ অন্তত: ৩০ জন আহত হয়েছেন। এ সময় সংঘর্ষ থামাতে পুলিশ ফাঁকা গুলিবর্ষণ ও র‌্যাব টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে প্রায় ঘন্টাব্যাপী এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এদিকে সন্ধ্যার দিকে ফের সংঘাতে জড়ায় দুইপক্ষ। দ্বিতীয় দফায়ও সংঘর্ষ থামাতে পুলিশ বেশ কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, শ্রমিকদের কল্যাণ তহবিলের প্রায় ২ কোটি টাকা শ্রমিক নেতা সেলিম আহমদ ফলিক আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ ওঠেছে। এ টাকার কোনো হিসাবও তিনি দিতে পারছেন না বলে শ্রমিকদের অভিযোগ। এরই প্রতিবাদে গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১টার দিকে দক্ষিণ সুরমার বাবনা পয়েন্টে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন কার্যালয়ের বাইরে অবস্থান নেন শ্রমিকরা। তারা ওই শ্রমিক নেতার বিরুদ্ধে শ্লোগান দিতে থাকেন। এক পর্যায়ে বিকেল ৪টার দিকে পরিবহন শ্রমিকরা দুটি পক্ষে অবস্থান নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এ সময় তারা লাঠিসোটাসহ বিভিন্ন ধরনের দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। সংঘর্ষ চলাকালে শ্রমিক নেতার মালিকানাধীন মিতালী পরিবহনের একটি বাস ও এনা পরিবহনের কাউন্টারে ভাঙচুর চালানো হয়।
বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা জানান, ঈদের আগে কল্যাণ তহবিলের টাকা থেকে পরিবহন শ্রমিকদের ঈদ উপহার হিসেবে খাদ্যসামগ্রী প্রেরণের দাবি জানিয়েছিলেন কয়েকজন শ্রমিক নেতা। কিন্তু দেয়া হয়নি। পরে তার কাছে তহবিলের প্রায় আড়াই কোটি টাকার হিসাব চাওয়া হলে তিনি ৪১ লাখ টাকার হিসাব দেন।
শ্রমিকদের অপর একটি পক্ষের দাবি, প্রথমদফা সংঘর্ষ থেমে যাওয়ার পর সন্ধ্যার দিকে এনা বাস কাউন্টার ভবনের ছাদ থেকে বিক্ষোভকারী শ্রমিকদের লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুঁড়া হয়, এ সময় পুনরায় সংঘর্ষ বেঁধে যায়। সংঘর্ষ থামাতে আন্দোলনকারী শ্রমিকদের লক্ষ্য করে পুলিশ ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে বলে অভিযোগ তাদের।
দুই দফা সংঘর্ষে উভয়পক্ষে অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন। ভাংচুর করা হয়েছে বেশ কয়েকটি গাড়ি। পুলিশ, র‌্যাব ও পরিবহন মালিক সমিতির নেতারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেন। পরে ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়ন সিলেট জেলা শাখার সভাপতি আবু সরকারের মধ্যস্থতায় দুপক্ষ সমঝোতায় রাজি হয়। দুই দিনের মধ্যে কল্যান তহবিলের টাকা বিষয়টি সমাধানের আশ্বাসে রাস্তা ছাড়েন শ্রমিকরা।
এ ব্যাপারে পরিবহন শ্রমিকদের সংগঠন মিতালী শ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক মিলাদ আহমদ রিয়াদ বলেন, শ্রমিকদের কল্যাণ তহবিলের প্রায় আড়াই কোটি টাকা থাকার কথা। কিন্তু সেলিম আহমদ ফলিক আমাদের হিসাব দিয়েছেন মাত্র ৪১ লাখ টাকার। বাকি ২ কোটি টাকা তিনি আত্মসাৎ করেছেন। শ্রমিকদের কল্যাণ তহবিলের পুরো টাকার হিসাব না দিলে তাকে কার্যালয়ে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না। সংঘর্ষের বিষয়ে সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সেলিম আহমদ ফলিককেও বারবার চেষ্টা করে পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে দক্ষিণ সুরমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খায়রুল ফজল জানান, সংঘর্ষ থামাতে পুলিশ ১০ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ও র‌্যাব ৩ রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে।
দক্ষিণ সুরমা থানা পুলিশের সহকারি কমিশনার (এসি) মো. ইসমাইল বলেন, সংঘর্ষ থামাতে পুলিশ কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে। তবে কত রাউন্ড গুলি ছুঁড়া হয়েছে তা এই মুহূর্তে বলা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, সংঘর্ষে পুলিশসহ ৮/১০ জন আহত হয়েছেন। তবে ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আবু সরকার প্রায় ৩০ জন আহত হওয়ার কথা জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে এসএমপি’র অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া এন্ড কমিউনিটি সার্ভিস) মোঃ জেদান আল মুসার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে এবং পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। তিনি বলেন, এ ঘটনায় কোন মামলা বা আটক নেই বলে জানান তিনি।