যুক্তরাষ্ট্রের ২৫ শহরে কার্ফু, ভাংচুর-লুটপাট

8

কাজিরবাজার ডেস্ক :
যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের মিনিয়াপোলিস শহরে পুলিশ কর্মকর্তা ডেরেক শভিনের (৪৪) হাতে জর্জ ফ্লয়েড (৪৬) নামের এক কৃষ্ণাঙ্গ নিহতের ঘটনায় গর্জে উঠেছে পুরো দেশ। গত ২৫ মে জর্জ ফ্লয়েড নিহত হন। তার বিচারের দাবিতে চলমান বিক্ষোভ শনিবার রণক্ষেত্রে রূপ নেয়। মিনিয়াপোলিস থেকে শুরু হওয়া বিক্ষোভ অন্তত ১৬ অঙ্গরাজ্যেও ৩০ শহরে ছড়িয়ে পড়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সহিংস হয়ে ওঠায় ২৫ শহরে কার্ফু জারি করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। এছাড়া ন্যাশনাল গার্ডকে নয় শহরের নিরাপত্তার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
মার্কিন পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ওপর চলন্ত গাড়ি তুলে দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। কোন কোন শহরে নিরস্ত্র বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে গুলি চালানো হয়। গুলিতে একজন নিহত ও অন্তত তিন জন আহত হয়েছেন। কয়েকটি শহরের পুলিশ ও সরকারী ভবনে আগুন দিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম উপকূলের লস এ্যাঞ্জেলসের পূর্ব উপকূলের মিয়ামি, উত্তরের শিকাগোসহ বিভিন্ন শহরের রাস্তায় নেমে আসা বিক্ষোভকারীরা ফ্লয়েডের শেষ বলা কথা ‘আমি শ্বাস নিতে পারছি না’ প্রতিধ্বনি তুলে স্লোগান দেয়। প্রথমে শান্তিপূর্ণভাবে শুরু হলেও বিক্ষোভকারীরা এক পর্যায়ে সড়ক অবরোধ ও অগ্নিসংযোগ করে, তারপর দাঙ্গা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়। কয়েকটি শহরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট ব্যবহার করে। বেভারলি হিলস, লস এ্যাঞ্জেলস, ডেনভার, মিয়ামি, আটলান্টা, শিকাগো, মিনিয়াপোলিস, ফিলাডেলফিয়া, কলম্বাস, সল্ট লেক সিটি, সিয়াটল শহরের লোকজনকে ঘরের বাইরে বের না হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে সেনাবাহিনী। লস এ্যাঞ্জেলসে স্থানীয় সময় শনিবার রাত ৮টা থেকে রবিবার ভোর সাড়ে ৫টা পর্যন্ত কার্ফু জারি করা হয়। এ সময় শহরটিতে থাকা সবাইকে ঘরে অবস্থান করতে বলা হয়েছে। গত সপ্তাহের সোমবার ফ্লয়েডের গাড়িতে জাল নোট থাকার খবর পেয়ে তাকে আটক করতে যায় পুলিশ। গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, সেখানে পুলিশের এক কর্মকর্তা ফ্লয়েডের ঘাড়ের ওপর হাঁটু দিয়ে তাকে মাটিতে চেপে ধরেছেন। সেসময় ফ্লয়েডকে ‘আমি শ্বাস নিতে পারছি না’ বলতে শোনা যায়। এ্যাম্বুলেন্সে করে পরে হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানকার চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ফ্লয়েডের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পরপরই মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের প্রধান শহর মিনিয়াপোলিসে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। উত্তাল হয়ে ওঠা বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। বিক্ষোভকারীরা কয়েকটি ভবন ও গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। ফ্লয়েডের মৃত্যুর ঘটনায় মিনিয়াপোলিস পুলিশ বিভাগ তাদের চার কর্মকর্তাকে তাৎক্ষণিকভাবে বরখাস্ত করে। এদের মধ্যে ফ্লয়েডের ঘাড়ে হাঁটু তুলে দেয়া ডেরেকও রয়েছে। শনিবার বিক্ষোভকারীরা দ্বিতীয় দিনের মতো হোয়াইট হাউসের সামনে জড়ো হয়। এর উল্টো পাশে অবস্থিত লাফায়েত্তে পার্কের নিরাপত্তা বেষ্টনী ভাঙ্গার চেষ্টা করে তারা। বিক্ষোভকারীদের ওপর পিপার স্প্রে, টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেট ছোড়ে পুলিশ। তাদের পিছু হটতে বাধ্য করার চেষ্টা করা হয়। বিক্ষুব্ধরাও পুলিশকে লক্ষ্য করে বোতলসহ বিভিন্ন বস্তু নিক্ষেপ করতে থাকে। সন্ধ্যার দিকে একটি ভাগাড়ে আগুন ধরিয়ে দেয় তারা। কমান্ডিং জেনারেল উইলিয়াম ওয়াকার এক বিবৃতিতে জানান, বিক্ষোভ দমাতে রাত ৯টার দিকে ইউএস পার্ক পুলিশের সহযোগিতা চাওয়ার জন্য ডিসি ন্যাশনাল গার্ডকে নির্দেশ দিয়েছেন সেনা সচিব রায়ান ম্যাককার্থি। এর আগে বিক্ষোভকারীদের কাউকে কাউকে সিক্রেট সার্ভিসের গাড়ির ওপরে এবং আইসেনহোয়ার এক্সিকিউটিভ অফিস ভবন সংলগ্ন নিরাপত্তা বুথে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। সন্ধ্যা ৬টা বাজার আগ মুহূর্তে পুলিশ তাদের রাস্তা থেকে সরে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিতে থাকে। তাদের ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়ারও চেষ্টা করে। সন্ধ্যা ৭টার দিকে বিক্ষোভকারীরা লাফায়েত্তে পার্কের বিপরীত পাশে অবস্থান নিয়ে সিক্রেট সার্ভিস ও পার্ক পুলিশের সদস্যদের লক্ষ্য করে গালি ও স্লোগান দিতে থাকে। পুলিশ সদস্যরা পার্কে স্থাপিত নিরাপত্তা বেষ্টনীর পেছনে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকে। বেষ্টনীগুলোকে আরও শক্তভাবে আটকে রেখে বিক্ষোভকারীদের ওপর পিপার স্প্রে ছুড়তে থাকে তারা। পিপার স্প্রেতে ভারি হয়ে ওঠে হোয়াইট হাউসের বাতাস। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ফ্লয়েডের মৃত্যুর ঘটনাকে ‘ভয়ানক ব্যাপার’ বলে অ্যাখ্যা দিয়েছেন। নিহত আফ্রিকান-আমেরিকানের পরিবারের সঙ্গে কথা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। শুক্রবার গ্রেফতার হওয়া পুলিশ কর্মকর্তা শভিনের বিরুদ্ধে ফ্লয়েডকে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। সোমবার তাকে আদালতে হাজির করার কথা। তবে প্রতিবাদকারীরা এতে সন্তুষ্ট নয়। ফ্লয়েডের মৃত্যুর সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত চার পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধেই অভিযোগ আনার দাবি তুলেছে তারা। যদিও ফ্লয়েডের পরিবার জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাদের কথা শোনার প্রয়োজনই মনে করেননি। এমনকি তাদের কোন কথাও বলতে দেননি। তিনি বারবার তাদের কথা এড়িয়ে গেছেন।