লিবিয়ায় সেই মর্মান্তিক ঘটনার বর্ণনা দিলেন বেঁচে যাওয়া এক বাংলাদেশী

13

কাজিরবাজার ডেস্ক :
লিবিয়ায় ২৬ বাংলাদেশিকে স্থানীয় এক মানবপাচারকারীর পরিবারের সদস্যরা গুলি করে হত্যা করে। এদের সঙ্গে চার আফ্রিকান অভিবাসীও হত্যার শিকার হয়েছেন। আর গুলিবিদ্ধ হয়েছেন আরও ১১ বাংলাদেশি। এদেরই মধ্যে এক বাংলাদেশি সেই ভয়াল ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন।
বর্তমানে তিনি একজন লিবিয়ানের আশ্রয়ে আত্মগোপনে আছেন। তিনি টেলিফোনে ঢাকাস্থ লিবায়ান বাংলাদেশ দূতাবাসকে জানান, ঘটনার ১৫ দিন আগে বেনগাজি থেকে মরুভূমি পাড়ি দিয়ে কাজের সন্ধানে মানবপাচারকারীরা এসব বাংলাদেশিকে ত্রিপোলির পথে রওয়ানা দেয়। পথে তিনিসহ মোট ৩৮ জন বাংলাদেশি মিজদাহ শহরের কাছে লিবিয়ান মিলিশিয়া বাহিনীর একদল দুষ্কৃতকারীর হাতে জিম্মি হন।
মুক্তিপণ আদায়ের লক্ষ্যে জিম্মিকারী অমানবিক নির্যাতন চালালে একপর্যায়ে অপহৃত ব্যক্তিরা মূল অপহরণকারী লিবিয়ানকে হত্যা করেন। এর প্রতিশোধ নিতে লিবিয়ান মিলিশিয়া বাহিনী তাদের ওপর এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করে যাতে আনুমানিক ২৬ জন বাংলাদেশি নিহত হয় এবং আরও ১১ জন বাংলাদেশি হাতে-পায়ে, বুকে-পিঠে গুলিবিদ্ধ হন।
শুক্রবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক বার্তায় এসব তথ্য জানানো হয়।
বার্তায় জানানো হয়, গত বৃহস্পতিবার লিবিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর মিজদাহতে (ত্রিপলি থেকে ১৮০ কিলোমিটার দক্ষিণে) কমপক্ষে ২৬ জন বাংলাদেশিকে লিবিয়ান মিলিশিয়া গুলি করে হত্যা করার তথ্য পাওয়া গিয়েছে।
তাৎক্ষণিকভাবে দূতাবাস থেকে অনুসন্ধানে জানা যায়, লিবিয়ার মিলিশিয়া বাহিনী অপহরণকৃত বাংলাদেশিদের ওপর এলোপাতাড়ি গুলি চালালে আনুমানিক ২৬ জন বাংলাদেশি ঘটনাস্থলে নিহত হন। এই ঘটনায় সৌভাগ্যক্রমে প্রাণে বেঁচে যাওয়া এক বাংলাদেশির সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়। তিনি জানান, এই সংবাদ পাওয়ার বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা মিজদাহ হাসপাতালের পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।
এছাড়া মৃতদেহগুলো মিজদাহ হাসপাতালের মর্গে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেন।
আহতদের পরবর্তী সময়ে দূতাবাসের সহায়তায় উন্নততর চিকিৎসার জন্য ত্রিপোলির বিভিন্ন হাসপাতালে আনা হয়েছে।
গুরুতর আহত তিনজনের শরীর থেকে গুলি বের করার জন্য অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আহতদের উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিতের জন্য বাংলাদেশ দূতাবাস লিবিয়ার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং আইওএম লিবিয়ার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ বজায় রাখছে এবং তারা আহত ব্যক্তিদের জন্য সম্ভাব্য সহায়তা দিচ্ছে।
মিশনের কর্মকর্তারা আহতদের কাছ থেকে ঘটনার বিশদ বিবরণসহ নিহতদের পরিচয় জানার চেষ্টা করছেন বলেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বার্তায় উল্লেখ করা হয়।
মর্মান্তিক এই ঘটনায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন গভীর শোক প্রকাশ করেছেন এবং আহতদের সুচিকিৎসার নিশ্চিতকরণে দূতাবাসকে ইতিমধ্যে নির্দেশনা দিয়েছেন।
ইতিমধ্যে দূতাবাস লিবিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে পুরো ঘটনার তদন্তসহ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারসহ দোষীদের যথাযথ শাস্তি এবং ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার জন্যও অনুরোধ করা হয়েছে।
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে লিবিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মিজদাহের সুরক্ষা বিভাগকে অপরাধীদের গ্রেপ্তার এবং তাদের বিচারের আওতায় আনার জন্য সমস্ত পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে।
বাংলাদেশ দূতাবাস দ্রুততম সময়ে আহতদের চিকিৎসা ব্যবস্থা, মানবপাচারে জড়িতদের বিবরণ এবং লিবিয়ান সরকার কর্তৃক এ বিষয়ে গৃহীত পদক্ষেপের বিস্তারিত প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে।