নতুন এমপিওভুক্ত ৪৩০টি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীরা এখনই বেতন পাবেন না

437

কাজিরবাজার ডেস্ক :
নতুন এমপিওভুক্ত দেশের ৪৩০টি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রায় ৩ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী এখনই বেতন-ভাতা পাবেন না। আর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রায় এক হাজার কম্পিউটার ল্যাব সহকারীও রয়েছেন এই তালিকায়। এসব শিক্ষক-কর্মচারীরা ২০২০-২০২১, ২০২১-২০২২ এবং ২০২২-২০২৩ অর্থবছর থেকে নতুন নিয়োগের মাধ্যমে এমপিও আবেদন করতে পারবেন। তবে যাদের বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) সনদ নেই কিংবা সুপারিশ নেই সেসব শিক্ষকদের বেতন পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, নতুন এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৪৩০টি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বাংলা, ইংরেজি, চারু ও কারুকলা বিষয়ের শিক্ষক, কম্পিউটার ল্যাব সহকারী, নৈশপ্রহরী এবং পরিচ্ছন্নতাকর্মী এখনই এমপিওভুক্তির সুযোগ পাবেন না। ২০১৮ সালের জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী তাদের নির্ধিারিত সময়ে বিধিসম্মতভাবে নিয়োগ সম্পন্ন করে বেতন-ভাতার আবেদন জানাতে হবে।
আর মাধ্যমিক পর্যায়ের কম্পিউটার ল্যাব সহকারীও এখন এমপিওভুক্ত হতে পারবেন না। কারণ এসব পদের বিপরীতে এখনও নিয়োগ ও এমপিওভুক্তির জন্য আবেদনের সময় হয়নি।
নীতিমালা অনুযায়ী এসব শিক্ষক-কর্মচারীরা ২০২০-২০২১, ২০২১-২০২২ এবং ২০২২-২০২৩ অর্থবছর থেকে নিয়োগ ও এমপিও আবেদন করতে পারবেন। যদি কোনও প্রতিষ্ঠান আগে থেকেই নিয়োগ দিয়ে থাকে তাহলে তারাও এমপিওভুক্তি নিয়ে ঝামেলায় পড়বে।
জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক বলেন, ২০১৮ সালের জনবল কাঠামো এবং এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী নতুন এমপিওভুক্ত নিম্ন মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দেওয়া হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের নতুন জনবল ও এমপিও নীতিমালার আলোকে নিম্ন মাধ্যমিক স্তরের এসব বিষয়ের শিক্ষক নিয়োগের সুযোগ এখনও তৈরি হয়নি। যদিও আগে থেকেই প্রায় সব নিম্ন মাধ্যমিক পর্যায়ের প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া আছে। এসব শিক্ষক-কর্মচারীরা না জেনেই এমপিওভুক্তির আশায় দৌড়াদৌড়ি করছেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকেও আগে এ বিষয়ে কিছুই জানানো হয়নি। আবার অনেক প্রতিষ্ঠানের প্রধানও বিষয়টি ভালোভাবে জানেনই না। ফলে তারা আশা করেছিলেন, গত জুলাই থেকেই তারা বেতন-ভাতা পাবেন। একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই অভিযোগ করেন।
নিম্ন মাধ্যমিক স্তরের মিরপুরের আদর্শ স্কুলের প্রধান শিক্ষক রাশিদা বেগম বলেন, বাংলা ও ইংরেজিসহ সব বিষয়েই শিক্ষকদের এমপিও আবেদন করছি।
অথচ ২০১৮ সালের নীতিমালার আলোকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের ২০১৯ সালের ৩০ মে জারি করা আদেশ অনুযায়ী নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ইংরেজি, ভৌত বিজ্ঞান এবং কম্পিউটার ল্যাব সহকারী পদে নিয়োগ দেওয়া যাবে আগামী জুলাই মাস (২০২০-২০২১ অর্থ বছরে) থেকে। নিয়োগ পাওয়ার পর এমপিওভুক্তির আবেদন করতে পারবেন তারা।
ওই আদেশে বলা হয়, ২০১৮ সালের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (স্কুল কলেজ) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী বৃদ্ধিপ্রাপ্ত নতুন পদে বর্ণিত সময়ে ও বেতন কোডে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগের জন্য নির্দেশ দেওয়া হলো।
আদেশ বর্ণিত সময় অনুযায়ী বাংলা বিষয়ের সহকারী শিক্ষক, নৈশপ্রহরী ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের নিয়োগ দেওয়া যাবে ২০২১ সালের (২০২১-২০২২ অর্থ বছরে) জুলাই মাস থেকে। নিয়োগের পর তারা এমপিওভুক্তির আবেদন করতে পারবেন। আর চারু ও কারুকলা নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক সব প্রতিষ্ঠানেই নিয়োগ দেওয়া যাবে ২০২২ সালের জুলাই থেকে (২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে)। নিয়োগের পর এমপিও আবেদন করতে হবে।
এছাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়েও ভৌত বিজ্ঞানের শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া যাবে আগামী জুলাই থেকে (২০২০-২০২১ অর্থ বছরে)। নিয়োগের পর এমপিও আবেদন করতে হবে।
২০১০ সালের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে একজন প্রধান শিক্ষক, একজন সহকারী শিক্ষক (গণিত ও সাধারণ বিজ্ঞান), একজন সহকারী শিক্ষক (সমাজ বিজ্ঞান), একজন সহকারী শিক্ষক (কৃষি/গার্হস্থ্য), একজন সহকারী শিক্ষক ধর্ম (তবে ভিন্ন ভিন্ন ধর্মের জন্য ভিন্ন ভিন্ন শিক্ষক থাকবে), একজন সহকারী শিক্ষক শরীরচর্চা এবং একজন নিম্নমান সহকারী কম্পিউটার অপারেটর থাকবে। এছাড়া থাকবে একজন এমএলএসএস (গার্ড/মালী/ঝাড়ুদার)। আর বালিকা নিম্ন মাধ্যমিক হলে আরও একজন আয়া নিয়োগ দেওয়া যাবে।
এর আগে আলাদা করে বাংলা ও ইংরেজি শিক্ষক নিয়োগের সুযোগ ছিল না নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। সমাজ বিজ্ঞানের শিক্ষক দিয়ে বাংলা ও ইংরেজি বিষয় পড়ানো হতো। তবে ২০১০ সালের বিধিমালার ২০১৩ সালের সংশোধনীতে নতুন করে বলা হয়, বাংলা, ইংরেজি ও সমাজ বিজ্ঞানের জন্য একজন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া যাবে।
সর্বশেষ ২০১৮ সালের নীতিমালায় একজন প্রধান শিক্ষকসহ আলাদা সব বিষয়ের শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বাংলা, ইংরেজি, সামাজিক বিজ্ঞান (আগে ছিল সমাজ বিজ্ঞান), কৃষি, গার্হস্থ্য, গণিত, ভৌত বিজ্ঞান, সহকারী শিক্ষক ধর্ম (প্রাপ্যতা অনুযায়ী প্রতিটি ধর্মের জন্য), শারীরিক শিক্ষা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, চারু ও কারুকলা, কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর (সরকার কর্তৃক প্রদত্ত কম্পিউটার ল্যাব চালু থাকলে), অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর, নিরাপত্তাকর্মী, পরিচ্ছন্নতাকর্মী এবং নৈশপ্রহরী। আর নিম্ন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় হলে একজন আয়া।