বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকরা সংকটে

15

করোনার কারণে বৈশ্বিক অর্থনীতি আজ মহাসংকটে। বিশ্বমন্দা গ্রাস করছে বহু সম্ভাবনা। মানুষের জীবনযাত্রা আজ চরম হুমকির মুখে। বাংলাদেশও এই সংকটের বাইরে নয়। দীর্ঘ সময়ের লকডাউনের কারণে অনেকেরই অনাহারে-অর্ধাহারে থাকার কিংবা পথে বসার উপক্রম হয়েছে। সবচেয়ে বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে মানুষ গড়ার কারিগর হিসেবে পরিচিত শিক্ষকসমাজ, বিশেষ করে বেসরকারি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের লাখ লাখ শিক্ষক। সরকারি বা এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা মাসিক বেতন-ভাতা পেলেও কিছুই পাচ্ছেন না নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কিন্ডারগার্টেন বা বিভিন্ন কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কয়েক লাখ শিক্ষক-কর্মচারী। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষকরা বেতন পান খুবই সামান্য অথবা কিছুই পান না। তাঁদের আয়ের প্রধান উৎস হচ্ছে প্রাইভেট টিউশনি। বর্তমানে সেই টিউশনিও বন্ধ রয়েছে। তাঁরা পড়েছেন এক মহাসংকটে।
দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব হওয়ায় গত ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১০ লাখের মতো শিক্ষক-কর্মচারী। অন্য সময় স্কুলের সামান্য বেতন ও টিউশনির অর্থ দিয়ে এই শিক্ষকদের সংসার চলত। এখন স্কুল বন্ধ থাকায় ছাত্রদের মাসিক বেতন বা অন্যান্য ফি আদায় হচ্ছে না বললেই চলে। ফলে বেশির ভাগ স্কুল থেকেই শিক্ষকদের বেতন দেওয়া হচ্ছে না। টিউশনিও বন্ধ। এই শিক্ষকরা এখন কী করবেন? একই অবস্থা কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোতে। প্রায় ছয় লাখ শিক্ষক এসব কিন্ডারগার্টেনে কর্মরত। এসব প্রতিষ্ঠানের শতভাগই নির্ভরশীল শিক্ষার্থীদের টিউশন ফির ওপর। এখন সে টিউশন ফি আদায় হচ্ছে না। ফলে শিক্ষকদের বেতনও হচ্ছে না। শুধু তা-ই নয়, বেশির ভাগ কিন্ডারগার্টেন চলে ভাড়া করা বাড়িতে। অনেক প্রতিষ্ঠান বাড়িভাড়াও দিতে পারছে না। এ অবস্থা কয়েক মাস স্থায়ী হলে অনেক প্রতিষ্ঠান স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবস্থাও বিশেষ ভালো নয়। এখানেও একই সমস্যা। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় অভিভাবকরা টিউশন ফি দিতে আগ্রহী হচ্ছেন না। ফলে প্রধান কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ই শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন দিতে পারছে না।
শিক্ষাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন, এমন পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হলে দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। তাই দ্রুত শিক্ষক-কর্মচারীদের রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। একই সঙ্গে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকেও রক্ষা করতে হবে। প্রয়োজনে এসব প্রতিষ্ঠানের জন্য বিশেষ প্রণোদনার ব্যবস্থা করতে হবে।