ধাপে ধাপে ফিরিয়ে আনা হবে কুয়েতে আটকাপড়া বাংলাদেশীদের

10

কাজিরবাজার ডেস্ক :
ধাপে ধাপে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে কুয়েতে আটকাপড়া সাড়ে চার হাজার বাংলাদেশী। এদের প্রথম দলটি ফিরছে আজ। প্রতি সপ্তাহে অন্তত দুুটো ফ্লাইটে তাদের ফেরানোর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। এ জন্য ও জাজিরা এয়ারওয়েজের ফ্লাইট চার্টার্ড করা হয়েছে। ইতোমধ্যে কুয়েতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এস এম আবুল কালাম এ বিষয়ে সুস্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন- কুয়েতের চারটি বন্দী শিবিরে থাকা এসব বাংলাদেশীর জন্য সর্বাত্মক সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে এবং সবাইকেই দেশে পাঠানো হবে। প্রথম দফায় কুয়েত এয়ারলাইন্স ও জাজিরা এয়ারওয়েজের ফ্লাইটে প্রায় ১ হাজার ৮০০ বাংলাদেশী দেশে ফিরবে।
জান গেছে- তেল সমৃদ্ধ ওই দেশটির বন্দী শিবিরে যারাই আটকা পড়েছেন তাদের বেশিরভাগই অবৈধ শ্রমিক হিসেবে পরিচিত। তারা দীর্ঘদিন ধরেই দেশটিতে নানা ধরনের ভোগান্তির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলেন। এ অবস্থায় হঠাৎ করোনাভাইরাসের পরিপ্রেক্ষিতে কুয়েত সরকার গত মাসে অবৈধ অভিবাসীদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে। ওই ক্ষমার আওতায় বাংলাদেশের চার হাজার ৬০৭ জন আত্মসমর্পণ করে গত মাসের শুরু থেকে অবস্থান করছেন দেশটির চারটি বন্দী শিবিরে। খাবারের সঙ্কট, দেশে ফেরা নিয়ে অনিশ্চয়তা আর বিনা চিকিৎসায় কয়েকজন সহকর্মীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে শিবিরে থাকা বাংলাদেশের কর্মীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। এদের কেউ কেউ গত সপ্তাহে মিসরীয় কর্মীদের আয়োজিত বিক্ষোভে যোগ দেয়।
এ বিষয়ে সেখানকার বাংলাদেশ দূতাবাস জানিয়েছে- কুয়েতের বন্দী শিবিরে থাকা চার হাজার ছয় শ’ জনের বাইরে আরও ১৭৩ জন বাংলাদেশী দেশে ফেরার অপেক্ষায় আছেন। এরা বিভিন্ন অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে কারাদ- ভোগ করেছেন। করোনাভাইরাসের কারণে দেশটির সরকার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করার ফলে ওই ১৭৩ জন বাংলাদেশীও দেশে ফেরার সুযোগ পাচ্ছেন। করোনা তা-বে কুয়েতে গত এপ্রিলে অবৈধ অভিবাসীদের জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে দেশটির সরকার। সাধারণ ক্ষমায় প্রায় ৫ হাজার অবৈধ অভিবাসী বাংলাদেশী নিবন্ধন করেছে। তাদের মধ্যে আজ মঙ্গলবার ও আগামীকাল বুধবার ফিরবে বড় দুটো দল। প্রাথমিক পর্যায়ে কুয়েত ও জাজিরার ফ্লাইটে সর্বমোট ১ হাজার ৮০০ প্রবাসী দেশে ফেরার কথা রয়েছে। পরের ফ্লাইটগুলোতে বাকিরা ফিরবেন। সাধারণ ক্ষমায় নিবন্ধনকৃত প্রবাসীদের বিমান টিকেট ও থাকা খাওয়া কুয়েত সরকার বহন করছে। এসব প্রবাসী পুনরায় নতুন ভিসায় কুয়েতে যেতে পারবে।
এ বিষয়ে কুয়েতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এসএম আবুল কালাম বলেন- সাধারণ ক্ষমার আওয়তায় নিবন্ধনকৃত প্রবাসীদের আমরা যতো দ্রুত সম্ভব দেশে পাঠাতে চাই। আমাদের কাছে কয়েকজন প্রবাসী তাদের থাকা খাওয়ার সমস্যা নিয়ে অভিযোগ করেছেন- আমরা সেটা কুয়েত সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে চিঠির মাধ্যমে জানিয়েছি। ফ্লাইটগুলোতে বয়স্ক, নারী ও শিশুদের আগে সিরিয়াল দিতে অনুরোধ জানিয়েছি। দেশে যাওয়ার সময় বাংলাদেশ সরকারের শর্ত মোতাবেক এদের কুয়েত সরকার কোভিট-১৯ সনদ প্রদান করবে। যাদের কাছে এই সনদ থাকবে না, দেশে পৌঁছানোর পর তাদের বাংলাদেশ সরকারের নির্ধারিত কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। প্রতি সপ্তাহে ধাপে ধাপে সবাইকে নিয়ে যাওয়া হবে। করোনা পরিস্থিতির ফলে কুয়েতে প্রায় ৪০ হাজার প্রবাসী কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। এদের মধ্যে যাদের সমস্যা একটু বেশি, আমরা তাদের বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ত্রাণ ও এখানে বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যবসায়ীদের কাজ থেকে সহায়তা নিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করব। এখন পর্যন্ত আমরা কুয়েতে বিভিন্ন অঞ্চলের প্রায় ৫ হাজার প্রবাসীকে ত্রাণ সহায়তা দিয়েছি। আমরা চেষ্টা করছি এ মাসের মধ্যে তা না হলে আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহেই যাতে বন্দী শিবিরে থাকা সবাইকে দেশে পাঠিয়ে দেয়া যায়।
উল্লেখ্য কুয়েতের বন্দীশিবিরে গত এক মাস ধরে এসব বাংলাদেশীরা চরম মানবেতর জীবনযাপন করছেন। সেখানকার ক্যাম্পে থাকা বাংলাদেশীদের অভিযোগ-পবিত্র রমজান মাসেও তাদের কাটাতে হচ্ছে উপোস। ইফতার সেহরির সময়েও ন্যূনতম খাবার দেয়া হচ্ছে না। বাংলাদেশীরা ক্যাম্পে এতটাই মানবেতর অবস্থায় রয়েছেন, এমনও রাত গেছে, একটি চিপস খেয়ে তাদের সেহরি করতে হয়েছে। ইতোমধ্যে সেখানে বিনা চিকিৎসায় দুজন বাংলাদেশী মারা গেছেন। এ সব নিয়ে ক্যাম্পে থেকে তারা ক্ষোভ-বিক্ষোভও করেছেন। বিক্ষোভে অংশ নেয়ার অপরাধে আরও ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে তাদের। এ অবস্থায় তাদের ফিরিয়ে আনার সুসংবাদ দেয়া হলে স্বস্তির নিশ্বাস নেমে আসে।