ইউরোপে সুযোগ খুঁজছে বাংলাদেশ

11

কাজিরবাজার ডেস্ক :
করোনাভাইরাসের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ইউরোপ মহাদেশ। মোট ৪০ লাখ করোনা রোগীর মধ্যে ১৬ লাখ এবং ২ লাখ ৭৬ হাজার নিহতের মধ্যে দেড় লাখই ইউরোপের। এক লাখেরও বেশি আক্রান্ত হয়েছে এমন ১০টি দেশের মধ্যে ছয়টি দেশও এই মহাদেশে। সংক্রমণ রোধে গত মার্চ থেকে কারফিউ ও লকডাউনের মতো পদক্ষেপ নিয়েছে ইউরোপীয় দেশগুলোর সরকার। আন্তঃইউরোপ ছাড়া সব ধরনের আন্তর্জাতিক বিমান যোগাযোগ স্থগিত করেছে প্রায় সবকটি দেশ। এর ফলে নিজস্ব অর্থনীতির পাশাপাশি তাদের সঙ্গে বাণিজ্যিক যোগাযোগ রাখা বাংলাদেশের মতো আরও অনেক দেশও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
একক মহাদেশ হিসেবে ইউরোপই হচ্ছে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রফতানি বাজার। এই মহাদেশে বাংলাদেশের রফতানির পরিমাণ এক হাজার কোটি ইউরোরও বেশি। শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার থাকায় বাংলাদেশের পণ্যের বিশেষ করে তৈরি কাপড়ের চাহিদা আছে ইউরোপের বাজারে। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে এর ওপরেও বড় প্রভাব পড়েছে। তবে সেখানকার পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে কীভাবে চলমান চ্যালেঞ্জকে সুযোগে রূপান্তরিত করা যায় তা নিয়ে গত সপ্তাহে ইউরোপে অবস্থিত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করেছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। নতুন সুযোগ অন্বেষণ, তৈরি পোশাক শিল্পের অর্ডার রক্ষা ও অভিবাসীদের সুরক্ষা দেওয়ার ওপর জোর দেন তিনি।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তৈরি পোশাক শিল্প আমাদের অগ্রাধিকার। তবে এটি ইউরোপের সক্ষমতার ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল।’
উদাহরণ হিসাবে তিনি বলেন, ‘ইউরোপের একটি কোম্পানি বাংলাদেশে ৩৮টি কোম্পানিতে অর্ডার দিয়েছিল কিন্তু সেটি দেউলিয়া হয়ে গেছে। এখন ওই কোম্পানিকে কিছু বলা অবান্তর, কারণ তার অর্ডারের আর কোনও মূল্য নেই।’
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘যেসব জায়গায় সম্ভব, সেই জায়গায় আমরা দেনদরবার করতে থাকবো। আসলে সমস্যাটি তো বাস্তব, কারণ যে কোম্পানি দেউলিয়া হয়ে গেছে তার তো কিছুই নাই।’ আমরা বিজিএমইএ, বিকেএমইএ এবং অন্যদের সঙ্গে নিয়ে বৈঠক করবো দূতাবাসগুলোর সঙ্গে এবং কোভিড পরবর্তী কৌশল করতে পারবো বলে আশা করছি।
নতুন সুযোগের অন্বেষণ
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘এর আগেও বিভিন্ন বৈঠকে বিষয়টি আমি তুলেছি- কীভাবে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে খাপ খাইয়ে নেওয়া যায় এবং নতুন সুযোগ কাজে লাগানো যায়। পিপিই বা অন্য ধরনের সামগ্রী আমাদের তৈরি পোশাক খাত বানাতে সক্ষম এবং এগুলোর চাহিদা এখন অনেক বেশি।’
ইউরোপে নার্সের চাহিদা আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দেশের ঘাটতি পূরণ করে যদি বাকি নার্সদের দক্ষতা বৃদ্ধি ও ভাষা শিক্ষা দিতে পারি, তবে আগামীতে প্রচুর সুযোগ আছে।’ দেশে নার্সিং শিক্ষার সার্টিফিকেট যাতে বিদেশে স্বীকৃতি পায় সেজন্য কাজ করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন পররাষ্ট্র সচিব। এছাড়া ওয়েল্ডার্স বা প্লাম্বারের মতো পেশাজীবীর বিদেশে চাহিদা আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের এখন থেকে এসব বিষয়ে চিন্তা করতে হবে।’
অভিবাসন
মধ্যপ্রাচ্যে তেলের দাম কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এসব দেশে কাজ করা বাংলাদেশিসহ বিদেশি শ্রমিকদের দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তবে ইউরোপে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। এ বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘ইউরোপ থেকে ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে তেমন চাপ নেই। তারা আপাতত ঝামেলায় আছে, কারণ বেশিরভাগই সেবাখাত, পর্যটন খাতে কাজ করে।’
আগামী দুই বা তিন মাস অভিবাসীদের কষ্ট হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কিন্তু তারা দলে দলে ফেরত আসবে এটি মনে হচ্ছে না। আমাদের প্রধান উদ্বেগ হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্য এবং মালদ্বীপ।’
উল্লেখ্য, ইউরোপে অবস্থিত বেশিরভাগ বাংলাদেশি সেবাখাতে কর্মরত। এদের মধ্যে গ্রিসে অল্প সংখ্যক কৃষি শ্রমিকও আছেন।