এমপিভুক্ত শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী অনলাইনে যে সময় আবেদন করতে পারবেন

5

কাজিরবাজার ডেস্ক :
নতুন এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের হাজারও শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী নির্ধারিত সময়ে অনলাইনে আবেদন করতে পারেননি। এ নিয়ে চরম হতাশায় পড়েছেন তারা। তবে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) জানিয়েছে নতুন এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নির্ধারিত সময় ছাড়াও যেকোনও সময় অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন।
দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে জানানো হচ্ছে- মাউশির ইলেক্ট্রনিক ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (ইএমআইএস) সেলের সার্ভারে প্রবেশ করতে না পারায় শিক্ষক-কর্মচারীরা আবেদন করতে পারেননি। নির্ধারিত সময় গত ৬ মে পর্যন্ত হাজারও শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এমপিওভুক্তির জন্য অনলাইনে আবেদন করতে চেয়ে ব্যর্থ হয়েছেন। এমনকি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার থেকে প্রতিটি ধাপেই ইএমআইএস সেলের সার্ভারে ঢুকতে সমস্যা হয়েছে। ফাইল সেন্ড করতে বেগ পেতে হচ্ছে তাদের।
রাজধানীর মিরপুর বাংলা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ বিষয়ের শিক্ষক ফেরদৌসী মোজাম্মেল বলেন, ‘গত ৫ মে পর্যন্ত চেষ্টা করে শিক্ষক হিসেবে নিবন্ধন করতে পেরেছি। তবে ইএমআইএস সেলের সার্ভার সমস্যার কারণে প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্রসহ আবেদন সেন্ড করতে পারিনি।’
এদিকে রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার নওপাড়া ইউনিয়নের শিবপুর বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘নির্ধারিত সময় ৬ মে পর্যন্ত আমিসহ মোট দুই জন শিক্ষকের আবেদন করা সম্ভব হয়েছে। শুক্রবার (৮ মে) একজনের আবেদন করার চেষ্টা করছি মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের মাধ্যমে। অন্য শিক্ষক-কর্মচারীদের কেউ আবেদন করতে পারেননি। ইএমআইএস সেলের সার্ভারের সমস্যার কারণে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।’ সময় বাড়িয়ে না দিলে শিক্ষক-কর্মচারীরা সমস্যায় পড়বেন বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ গোলাম মো. ফারুক জানিয়েছেন, ‘বিধি মোতাবেক নিয়োগ পাওয়া শিক্ষক-কর্মচারীরা মে মাসের নির্ধারিত সময়ে আবেদন করতে ব্যর্থ হলে পরবর্তীতে নির্ধারিত সময়ে যথাযথ প্রক্রিয়ায় আবেদন করতে পারবেন। এছাড়া যেকোনও সময় তারা আবেদন করতে পারবেন। তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যারা আবেদন করতে পারেননি, তাদের আবেদন নিষ্পত্তি হবে মে মাসের পর।’
এদিকে মাঠ পর্যায় থেকে শিক্ষা কর্মকর্তারা আবেদন সেন্ড করতে ঝামেলায় পড়ছেন কিনা জানতে চাইলে নীলফামারী জেলার জলঢাকা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার চঞ্চল কুমার ভৌমিক বলেন, ‘সমস্যা হচ্ছে, তবে অব্যাহতভাবে চেষ্টা চালালে করা যাচ্ছে। কাগজপত্র সংগ্রহ করে আবেদন করতেও দেরি হয়েছে শিক্ষকদের। তবে এখন কেউ আবেদন না করতে পারলেও পরেও করতে পারবেন, এতে সমস্যা নেই।’
মাউশি সূত্রে জানা গেছে, যারা নির্ধারিত সময়ে আবেদন করতে পারেননি তাদের আগামী ১০ জুনের মধ্যে অবশ্যই আবেদন করতে হবে। তা না হলে বেতন-ভাতা পেতে আরও একমাস পিছিয়ে যাবেন তারা। তবে সবাই বেতন-ভাতা পাবেন গত বছরের জুলাই থেকে। মাউশির মহাপরিচালক বলেন, ‘১৩ মে’র পর চাপ কমে গেলে অনলাইনে এমপিও আবেদন করতে কারও কোনও সমস্যা হবে না। তবে আবেদন যখনই করুক না কেনও, বেতন গত বছরের জুলাই থেকেই দেওয়া হবে।
গত বছর অক্টোবরে দুই হাজার ৭৩৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা) এমপিওভুক্তির তালিকা প্রকাশ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এসব প্রতিষ্ঠান যাচাই-বাছাই শেষে প্রায় ছয় মাস পর চূড়ান্ত করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিও কোডসহ বেতনভাতা ছাড়ের নির্দেশ দেয় মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের ওই নির্দেশের পর গত ২ থেকে ৪ মে’র মধ্যে শিক্ষক-কর্মচারীদের অনলাইনে বেতনভাতার আবেদন করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপর আবেদনের সময় বাড়িয়ে ৬ মে করা হয়। তবে এই সময়ের মধ্যে হাজারও শিক্ষক অনলাইনে আবেদন করতে পারেননি।
বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি ও এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ লিয়াজোঁ ফোরামের মুখপাত্র মো. নজরুল ইসলাম রনি বলেন, ‘সারাদেশ থেকে শিক্ষকরা ফোন করে জানাচ্ছেন, তারা সার্ভার সমস্যার কারণে এমপিও আবেদন করতে পারেননি। হাজারও শিক্ষক আবেদন করতে ব্যর্থ হয়েছেন।’ এ অবস্থায় আবেদনের সময় বাড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।