মহান মে দিবস আজ

19
আজ মহান মে দিবস। শ্রমজীবী মানুষের আন্দোলন-সংগ্রামের অনুপ্রেরণার উৎস এই দিন। প্রতি বছর বিভিন্ন ভাবে এই দিবসকে পালন করা হলেও এ বছর সম্পূর্ণ ভিন্ন রূপ। ভয়াল করোনা ভাইরাসের বিস্তার রোধে সারাদেশে সাধারণ ছুটি চলাকালেও এসব শ্রমিকের ঘরে থাকার সুযোগ নেই। পেটের দায়ে প্রতিদিন কাকডাকা ভোরে নেমে পড়েন সড়কে। এই পরিস্থিতিতে দু’চার জনের কপালে কাজ ঝুটলেও বেশির ভাগই শূন্য হাতে বাড়ি ফিরতে হয়। ছবিটি সিলেট নগরীর মদিনা মার্কেট থেকে তোলা। ছবি- মামুন হোসেন

কাজিরবাজার ডেস্ক :
মহান মে দিবস আজ। আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস। শ্রমিক অধিকারের এ দিবসটি এমন সময় পালিত হতে যাচ্ছে যখন বাংলাদেশসহ বিশ্বের লাখ লাখ শ্রমিকের জীবন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। করোনার প্রভাবে কলকারখানা ও উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। শ্রমিকরা কর্মহীন হয়ে পড়ছে। এর প্রভাবে দেশের অর্থনীতি ঝুঁকিতে রয়েছে। ফলে শ্রমিকদের সামনে এখন মানবেতর জীবন যাপনের হাতছানি।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো মে দিবসটি যথাযথভাবে পালিত হয়ে থাকে। কিন্তু করোনার কারণে দিবসটি পালনে এবার নেই বিশেষ কোন কর্মসূচী আলোচনা সভা ও র‌্যালি। অনেকটা অনাড়ম্বরভাবে পালিত হতে যাচ্ছে দিবসটি। এদিকে মহান মে দিবস উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের রাজপথে যে আন্দোলন হয়েছিল তারই ১৩৪তম বার্ষিকী আজ। আজকের এই দিন এলেই শ্রমিকের অতীত ইতিহাসের কথা সামনে চলে আসে। চলে আসে অমানবিক অত্যাচার আর নির্যাতনের ইতিহাস। এই আন্দোলনের ফলেই শ্রমিকরা পেয়েছে তাদের ৮ ঘণ্টা শ্রমের অধিকার।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) বলেছে, অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতিতে কর্মরত বিশ্বের প্রায় ১৬০ কোটি মানুষ করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে জীবিকা হারানোর তাৎক্ষণিক ঝুঁকিতে রয়েছে। এই সংখ্যা বিশ্বের মোট শ্রমশক্তির অর্ধেক। বুধবার জাতিসংঘের এই সংস্থাটির প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই চিত্র উঠে এসেছে।
করোনাভাইরাস মহামারীতে বিশ্বজুড়ে আক্রান্ত হয়েছে ৩১ লাখেরও বেশি মানুষ। এর মধ্যে দুই লাখ ২০ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে বন্ধ রাখা হয়েছে বহু দেশের অর্থনীতি। ফলে চাকরির ওপর তৈরি হয়েছে মারাত্মক ঝুঁকি। আইএলও’র সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে সেই ঝুঁকির চিত্রই উঠে এসেছে। আইএলও বলেছে বিশ্বের মোট ৩৩০ কোটি শ্রমজীবী মানুষের মধ্যে অনানুষ্ঠানিক শ্রমজীবীরাই সবচেয়ে বেশি দুর্বল। তাদের শ্রমের সুরক্ষা নেই, ভাল চিকিৎসাসেবা পাওয়ার সুযোগ নেই, এমনকি বাড়িতে থেকেও কাজের সুযোগ নেই।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অবিচার ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে জোরালো সংগ্রামের শপথ নেয়ার দিন এই মে দিবস।। শুধু অধিকার প্রতিষ্ঠার দিন নয়, তাদের আন্দোলন সংগ্রামের অনুপ্রেরণার উৎস এই দিন। যাদের ঘামের বিনিময়ে সচল রয়েছে অর্থনীতির চাকা সেই শ্রমিকদের শোষণ বঞ্চনার অবসান ঘটার স্বপ্ন দেখার দিনও বটে।
শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠার এই দিন এমনি আসেনি। দিনটি প্রতিষ্ঠার পেছনে রয়েছে রক্তঝরা ইতিহাস। তাই ইতিহাসের পাতায় এর গুরুত্ব অপরিসীম। ১৮৮৯ সালের ১৪ জুলাই ফ্রান্সে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনে ১ মে শ্রমিক দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। পরবর্তী বছর অর্থাৎ ১৮৯০ সাল থেকে ১ মে বিশ্বব্যাপী পালন হয়ে আসছে ‘মে দিবস’ বা ‘আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস’।
মে মাসের প্রথম দিনটি পৃথিবীর অনেক দেশে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস হিসেবে পালিত হয়। এই দিনটি মে দিবস নামেও পরিচিত। বেশ কিছু দেশে মে দিবসকে ‘লেবার ডে’ হিসেবে পালন করা হয়। বাংলাদেশে মে দিবস নামেই পালিত হয়ে আসছে।
গণসঙ্গীত পরিষদের সহায়তা কার্যক্রম ॥ মহান মে দিবস আজ শুক্রবার। সারা বিশ্বের শ্রমজীবী মানুষের জন্য অনন্য একটি দিন। দিবসটি উপলক্ষে প্রতিবছরই আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ গণসঙ্গীত সমন্বয় পরিষদ। তবে মহামারী করোনার কারণে এবার ভিন্নভাবে দিবসটি উদযাপন করবে পরিষদ। আনুষ্ঠানিকতার পরিবর্তে সংগঠনের পক্ষ অসহায় মানুষের দাঁড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মানজার চৌধুরী সুইটের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।