বঙ্গবন্ধুর প্রত্যক্ষ ঘাতক মোসলেহ উদ্দিন আটক

10

কাজিরবাজার ডেস্ক :
ভারতের কলকাতায় গ্রেফতার হয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আরেক পলাতক খুনী রিসালদার (বরখাস্ত) মোসলেহউদ্দিন খান। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, আমরা খোঁজ খবর নিচ্ছি, নিশ্চিত হওয়ার পরই এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে জানাবে সরকার। ভারতের গোয়েন্দাদের সহযোগিতায় রিসালদার (বরখাস্ত) মোসলেহউদ্দিন খানকে পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনায় তার আস্তানা থেকে আটক করা হয় এবং বাংলাদেশের গোয়েন্দাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে, যা করোনাভাইরাসের কারণসহ জটিলতার কারণে গোপন রাখা হয় বলে কলকাতার সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের দাবি।
গুলির শব্দ শুনে বঙ্গবন্ধু যখন বিষয়টি জানার জন্য ধানমণ্ডির ৩২নং বাড়ির নিচে নামছিলেন সেই সময় সিঁড়িতে বঙ্গবন্ধুকে নিজ হাতে গুলি করে হত্যা করে এই খুনী মোসলেহউদ্দিন। দীর্ঘদিন মোসলেহউদ্দিন খান পশ্চিমবঙ্গের গোবরডাঙ্গার ঠাকুরনগর এলাকার চাঁদপাড়া রোডের একটি বাড়িতে বসবাস করতেন। ওই এলাকায় ‘ডাক্তার দত্ত’ নামে পরিচিত ছিল এবং ‘ইউনানী ফার্মাসী’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানে আয়ুর্বেদ ও হোমিও চিকিৎসা করত। ঠাকুরনগর এলাকার চাঁদপাড়া রোডের ডাক্তার দত্ত নামের পরিচয় দিয়ে প্রায় চার দশক ধরে বসবাস করছিলে মোসলেহউদ্দিন। সপরিবারে জাতির পিতার আরেক খুনী ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) আবদুল মাজেদ কলকাতার পার্কস্ট্রিট থেকে নিখোঁজ হওয়ার পর মাত্র ১৩ দিন আগে ঢাকায় গ্রেফতার হয়ে পর ফাঁসি কার্যকর করার ঘটনার পর আরেক খুনী মোসলেহউদ্দিন খানের গ্রেফতারের খবরটি জানা গেল।
ঢাকার গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা ভারতের গোয়েন্দা সংস্থার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আরেক খুনী রিসালদার মোসলেহউদ্দিনকে আটক করার খবর পাওয়া গেছে। পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনার বনগ্রাম থেকে তাকে আটক করা হয়েছে। গত চল্লিশ বছর ধরে তিনি সেখানেই বসবাস করতেন বলে জানা গেছে। গত ১১ এপ্রিল ফাঁসি কার্যকর হওয়া আরেক খুনী ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) মাজেদের সঙ্গেও নিয়মিত যোগাযোগ ছিল মোসলেহ উদ্দিনের। বঙ্গবন্ধুকে সরাসরি গুলি করে হত্যাকারী জঘন্য খুনী রিসালদার মোসলেহউদ্দিন গোয়েন্দাদের হাতে আটক হয়েছে। এমন একটি তথ্য জানা গেলেও কাদের হাতে আটক হয়েছে সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে মোসলেহউদ্দিন ভারতীয় গোয়েন্দাদের কাছে আটক থাকতে পারে এমন তথ্যও জানা গেলেও কোন কর্মকর্তা নিশ্চিত করে কিছু বলছেন না।
ঢাকার গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনী ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) আব্দুল মাজেদ পুলিশের হাতে গ্রেতফার হওয়ার পর গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদে মোসলেহউদ্দিন সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানায়। খুনী মোসলেহ উদ্দিনের স্ত্রী ও সন্তানদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছে গোয়েন্দারা। এরপরই গোয়েন্দারা তার অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হয়। তবে হঠাৎ করেই পশ্চিমবঙ্গে নিখোঁজ হন মোসলেহউদ্দিন। উত্তর চব্বিশ পরগনার ঠাকুরনগর রেলস্টেশন এলাকায় অপরিচিত কিছু ব্যক্তির সঙ্গে তাকে সর্বশেষ দেখা যায়। দীর্ঘদিন মোসলেহউদ্দিন গোবরডাঙ্গার ঠাকুরনগর এলাকার চাঁদপাড়া রোডের একটি বাড়িতে বসবাস করতেন। ওই এলাকায় ‘ডাক্তার দত্ত’ নামে পরিচিত ছিল এবং ‘ইউনানী ফার্মাসী’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানে আয়ুর্বেদ ও হোমিও চিকিৎসা করতেন। ওই এলাকায় প্রায় ৪০ বছর ধরে বসবাস করছিল মোসলেহউদ্দিন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যাকান্ডে যে কয়েকজন সেনা কর্মকর্তা অংশ নেয় তার মধ্যে রিসালদার মোসলেহউদ্দিন অন্যতম। গুলির শব্দ শুনে বঙ্গবন্ধু যখন বিষয়টি জানার জন্য নিচে নামছিলেন সেই সময় সিঁড়িতে বঙ্গবন্ধুকে নিজ হাতে গুলি করে হত্যা করে মোসলেহউদ্দিন খান। এরপর অন্য খুনীদের সঙ্গে বঙ্গভবনে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। সেনা প্রশাসক জেনারেল জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসার পর তাকে তেহরান ও জেদ্দা দূতাবাসে দায়িত্ব দিয়ে পাঠান। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর অন্য খুনীদের সঙ্গে তিনিও দেশ ছেড়ে থাইল্যান্ড হয়ে পাকিস্তানে পালিয়ে যায়। এরপর জার্মানিতে রাজনৈতিক আশ্রয় নেয়। তার কয়েক বছর পর চলে আসে ভারতে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনার ঠাকুরনগর এলাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করে খুনী মোসলেহউদ্দিন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সোমবার বলেছেন, আমরা শুনেছি, কিন্তু কনফার্ম করে বলতে পারছি না। নিশ্চিত হলে তখন জানাব। মোসলেহউদ্দিন আটক হয়েছে কি না জানতে চাইলে গণমাধ্যমকে এ কথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। মোসলেহউদ্দিন আটক হওয়ার খবর শোনার পর বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ভারতে যোগাযোগ করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, যোগাযোগে তো আমাদের লোক লেগেই আছে।
ঢাকার গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেন, মোসলেহউদ্দিন সন্দেহে ভারতে একজনকে আটক করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ চলছে এবং নিশ্চিত হলে সরকারীভাবে ঘোষণা করা হবে। ভারতীয় গোয়েন্দা সূত্রের বরাত দিয়ে আনন্দবাজার লিখেছে, লকডাউনের সময় সেখান থেকে মোসলেহউদ্দিনকে বাংলাদেশে আনা সমস্যা হতে পারে বলে ঢাকা বিষয়টি ভারতীয় গোয়েন্দাদের জানায়। ভারতীয় গোয়েন্দারা এই খুনীকে কার্যত তাড়িয়ে সীমান্তের কোন একটি অরক্ষিত এলাকা দিয়ে বাংলাদেশের গোয়েন্দাদের হাতে তুলে দিয়েছে। তবে সরকারীভাবে এ বিষয়ে কিছুই স্বীকার করা হয়নি।
গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭৫-এর ১৫ আগষ্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ধানমন্ডির ৩২নং বাড়িতে হানা দেয়া দলটির সামনের সারিতে ছিল মোসলেহউদ্দিন। অনেকের দাবি, মোসলেহউদ্দিনই গুলি করে হত্যা করেছিল বঙ্গবন্ধুকে। গ্রেফতারের পর ফাঁসি কার্যকর হওয়া খুনী মাজেদকে জেরা করে বাংলাদেশের গোয়েন্দারা মোসলেহ উদ্দিনের ভারতে অবস্থানের তথ্য পান। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার দায়ে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত যে ছয় আসামি দীর্ঘদিন ধরে পলাতক ছিল, তাদের মধ্যে মোসলেহউদ্দিন একজন। ওই ছয়জনের মধ্যে অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন আবদুল মাজেদ ৭ এপ্রিলে গ্রেফতার হওয়ার পর গত ১১ এপ্রিল মধ্যরাতে কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে তার ফাঁসি কার্যকর করা হয়। মাজেদ পরিচয় গোপন করে ২০ বছরের বেশি সময় ধরে কলকাতায় পালিয়ে ছিল। তার মতো মোসলেহউদ্দিনও ভারতে পালিয়ে ছিলেন এবং উত্তর চব্বিশ পরগনা থেকে তাকে আটক করা হয়ে থাকতে পারে বলে ভারতীয় বাংলা দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত খবরের সূত্রে গোয়েন্দা সংস্থার দাবি।
গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী প্রতিবেশী দেশের একটি বাজারে আনার পর মোস্টওয়ান্টেড মোসলেহউদ্দিনকে ধরেছে ঢাকার গোয়েন্দা পুলিশ। ডাঃ দত্ত ছদ্মনাম নিয়ে দীর্ঘ সময় এই এলাকায় হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা হিসেবে কাজ করত ওই ব্যক্তি। তাকে সীমান্ত পার করিয়ে বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়েছে। ফাঁসির আগে মাজেদ জেরায় কবুল করে তার কলকাতা ও পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন কনট্রাক্ট। সেই কনট্রাক্টের সূত্র ধরেই বঙ্গবন্ধুর অপর খুনী তৎকালীন সেনাকর্মী মোসলেহ উদ্দিনের গোপন ঠিকানার সন্ধান পায় বাংলাদেশ সরকার। এরপর দ্রুত প্রতিবেশী দেশটির সরকার ও সেই অঙ্গরাজ্যের পুলিশের সঙ্গে যৌথ অভিযানের পরিকল্পনা করা হয়। মোসলেহউদ্দিন নিজের নাম পাল্টে ডাঃ দত্ত নাম নিয়ে দীর্ঘ সময় পশ্চিমবঙ্গে ছিল। তার আনাগোনা ছিল উত্তর ২৪ পরগনা জেলার ঠাকুরনগরে। তবে এই বিষয়ে ভারত ও বাংলাদেশ সরকার কিছুই বলেনি।
উচ্চপদস্থ কূটনৈতিক অফিসার ॥ মুজিবুর রহমানকে খুনের ঘটনার পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে আবির্ভাব হয় সেনাকর্তা জিয়াউর রহমানের। তিনি হন রাষ্ট্রপতি। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসার পর বিভিন্ন সময়ে বঙ্গবন্ধুর খুনীদের বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোতে চাকরি মিলে ছিল। মোসলেহউদ্দিন পরে তেহরান ও জেদ্দার দূতাবাসে চাকরি পায়।
পলায়ন ॥ ১৯৯০ এর দশকে প্রথমবার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। তারপরেই আত্মগোপনে চলে যায় বঙ্গবন্ধুর খুনীরা। মোসলেহউদ্দিন থাইল্যান্ড হয়ে পাকিস্তানে পালিয়ে যায়। এরপর জার্মানিতে রাজনৈতিক আশ্রয় নেয়।
গোয়েন্দারা বিভিন্ন সূত্রে জেনেছেন, মোসলেহউদ্দিন ও মাজেদ ভারতে আত্মগোপন করেছিল। পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনার ঠাকুরনগর এলাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে মোসলেহউদ্দিন। ২০১৮ সালে সে বাংলাদেশে গিয়ে পরিবারের সঙ্গে কয়েকদিন ছিল বলেও জানা দিয়েছে।
কে এই মোসলেহউদ্দিন ॥ রিসালদার মোসলেহউদ্দিন খান শুধু সপরিবারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের সঙ্গে নয়, কারাগারে চার নেতা হত্যার সঙ্গেও জড়িত ছিল। মোসলেহউদ্দিন ’৭৫-এ বঙ্গবন্ধুর হত্যাকা-ের পর নরসিংদী জেলার শিবপুরের দত্তেরগাঁও এলাকায় বাড়ি করে স্থায়ীভাবে বসবাস করছিলেন। ’৯৬ সালের আগ পর্যন্ত কোন সরকারই মোসলেহ উদ্দিনের বিরুদ্ধে তদন্তের উদ্যোগ নেয়নি। বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনী রিসালদার মোসলেমউদ্দিন নিজের নাম-পরিচয় বদলে ফেলার পর তার নতুন নাম রাখা হয়েছে রফিকুল ইসলাম খান। নতুন এ নাম যুক্ত করেই তার পরিবারের সব সদস্য জাতীয় পরিচয়পত্র পায়। এমনকি খুনী পিতার নাম বদলে তার সন্তানরা নানা প্রতিষ্ঠানে চাকরি ও ব্যবসা বাণিজ্য করছে নির্বিঘ্নে। দিব্যি ঘুরছে দেশ-বিদেশেও। মোসলেহ উদ্দিনের পাঁচ ছেলে ও এক মেয়ের জাতীয় পরিচয়পত্রে সবকিছু ঠিক থাকলেও শুধু পিতার নাম বদল করা হয়েছে। মোসলেহ উদ্দিনের নামের জায়গায় লেখা হয়েছে রফিকুল ইসলাম খান। বহু বছর ধরে পরিবারের সঙ্গে তার বাবার কোন ধরনের যোগাযোগ নেই পরিবারের দাবি। তবে ২০১৮ সালে গোপনে ছদ্মবেশে নরসিংদীর রায়পুরার বাড়িতে এসে গেছে এমন দাবি গোয়েন্দা সংস্থার।
গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি সরকারের সময় তার বাড়িতে সার্বক্ষণিক পুলিশী নিরাপত্তা থাকত। ’৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার তদন্ত শুরু হলে তার বাড়িসহ বেশকিছু সম্পত্তি রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াফত করা হয়। একপর্যায়ে খুনী রিসালদার মোসলেহউদ্দিন পালিয়ে যান। তার পরিবারের সদস্যরাও দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়েন। অনেকেই নিরাপদ স্থানে গা ঢাকা দেন। মোসলেহ উদ্দিনের পরিবারের সদস্যরা ফের নরসিংদী এলাকায় ফিরে আসেন। কিন্তু এবার মোসলেহ উদ্দিনের ৫ ছেলে ও এক মেয়ের সবাই কৌশলে পিতার নাম বদলে নিতে সক্ষম হন। জাতীয় পরিচয়পত্র থেকে শুরু করে সরকারী সব ধরনের কাগজপত্রে তাদের পিতার নাম হয়ে যায় রফিকুল ইসলাম খান। নতুন পরিচয়ে তারা সমাজের মূল ধারায় মিশে যান খুব সহজে। চাকরি ও ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু করেন নতুন করে। মোসলেহ উদ্দিনের বড় ছেলে সাজিদুল ইসলাম খান নরসিংদী শহরের টাউনহল মোড়ে হোটেল ব্যবসা করছে। ২য় পুত্র শফিকুল ইসলাম খান চাকরি নেন জেনারেল ফার্সাসিটিক্যালস কোম্পানিতে। ৩য় ছেলে মাহমুদুল ইসলাম খান সিনিয়র আরএসম পদে চাকরি পান এ্যালকো ফার্মাসিটিক্যালসে। ৪র্থ পুত্র মজিদুল ইসলাম খান পরিবারিক সম্পত্তি দেখাশোনা করে এবং পঞ্চম পুত্র মহিদুল ইসলাম খান নদী কনস্ট্রাকশন লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছে উঁচু পদে। মোসলেহ উদ্দিনের একমাত্র মেয়ে সানাজ খানের বিয়ে হয় নরসিংদীতেই। তার স্বামী আবদুল মান্নান ভূঁইয়া এখন দক্ষিণ কারারচর মৌলভী তোফাজ্জল হোসেন উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক।
গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যাকা-ের মিশনে অংশ নেয় তার মধ্যে মোসলেহউদ্দিন অন্যতম। গুলির শব্দ শুনে বঙ্গবন্ধু যখন বিষয়টি জানার জন্য নিচে নামছিলেন সেই সময় সিঁড়িতে বঙ্গবন্ধুকে নিজ হাতে গুলি করে হত্যা করে এই মোসলেহউদ্দিন। ঠা-া মাথার এ খুনী জেলহত্যা মামলারও আসামি। এরপর অন্য খুনীদের সঙ্গে সে বঙ্গভবনে দায়িত্বপালন করে। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসার পর তাকে তেহরান ও জেদ্দা দূতাবাসে দায়িত্ব দিয়ে পাঠান। তখন সে দুই-একবার আসেন বলেও জানা গেছে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর অন্য খুনীদের সঙ্গে সে ছেড়ে থাইল্যান্ড হয়ে পাকিস্তানে পালিয়ে যায়। এরপর জার্মানিতে রাজনৈতিক আশ্রয় নেয়। কয়েক বছর পর যায় ভারতে। সেখানে উত্তর চব্বিশ পরগনার ঠাকুরনগর এলাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। সর্বশেষ ২০১৮ সালে সে বাংলাদেশে এসে পরিবারের সঙ্গে কয়েকদিন ছিল। বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনী ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) আব্দুল মাজেদ পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদে মোসলেহউদ্দিন সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানায়। এ সময় গোয়েন্দারা মোসলেহউদ্দিন স্ত্রী ও সন্তানদের জিজ্ঞাসাবাদ করে। তার অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হয় গোয়েন্দারা। এরপরই রিসালদার (বরখাস্ত) মোসলেহউদ্দিন গ্রেফতারের খবরটি পাওয়া গেছে, যদিও সরকারীভাবে কেউই এখনও পর্যন্ত বিষয়টি স্বীকার বা অস্বীকার কোনটাই করেনি।
যোগাযোগ করছে বাংলাদেশ ॥ পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, সপরিবারে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আরেক খুনী রিসালদার (বরখাস্ত) মোসলেহউদ্দিন আহমেদ ভারতে ধরা পড়েছে কিনা তা নিশ্চিতে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করছে বাংলাদেশ। সোমবার বিকেলে তিনি সাংবাদিকদের জানান, সংবাদমাধ্যমের মারফতে আমরাও বিষয়টি জেনেছি। তবে সরকারীভাবে বিষয়টি জানি না। এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, এ বিষয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। নয়াদিল্লীতে আমাদের হাইকমিশনের মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে ভারত সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ চলছে। তবে এখনও আমরা নিশ্চিত হতে পারিনি। আমরা নিশ্চিত হলেই আপনাদের জানাব।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, গত ৭ এপ্রিল হঠাৎ করেই বঙ্গবন্ধু হত্যার দায়ে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামি ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) আবদুল মাজেদকে রাজধানীর মিরপুর এলাকা থেকে গ্রেফতার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ১২ এপ্রিল তার ফাঁসি কার্যকর হয়। এদিকে সোমবার ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকা ‘মুজিবের আরেক খুনীও কি এই বঙ্গে?’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, আব্দুল মাজেদের মতো পরিচয় লুকিয়ে শেখ মুজিবের আরেক খুনীও দীর্ঘদিন পশ্চিমবঙ্গে আশ্রয় নিয়ে রয়েছে বলে দাবি বাংলাদেশের গোয়েন্দা সূত্রের। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, মাজেদকে জেরা করে বাংলাদেশের গোয়েন্দারা তার বিষয়ে জানতে পেরেছেন বলে ওই সূত্রের দাবি। ভারতের গোয়েন্দাদের সহযোগিতায় রিসালদার (বরখাস্ত) মোসলেহউদ্দিন নামে এই প্রাক্তন সেনা অফিসারকে উত্তর চব্বিশ পরগনায় তার ডেরা থেকে আটক করা হয়েছে। আবার অন্য একটি সূত্রের খবর, মাজেদ আটক হওয়া মাত্রই নিজের মৃত্যু-সংবাদ ছড়িয়ে গা-ঢাকা দিয়েছে মোসলেউদ্দিন। এর আগে মোসলেহ উদ্দিনের ভারতে আটকের বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, তার কাছে পুরোপুরি নিশ্চিত কোন খবর নেই। এ বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছেন তিনি।