ভারতে আটকা পড়া বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ

18

কাজিরবাজার ডেস্ক :
করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে পুরো ভারত ২১ দিনের লকডাউন ঘোষণার পর সেখানে আটকে পড়া বাংলাদেশি নাগরিকদের দেশে ফিরিয়ে আনতে বিশেষ প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার। কিন্তু কয়েকটি কারণে সরকারের এই প্রচেষ্টা চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়ছে।
বিশেষ করে সেখানে যারা আটকা পড়েছেন, তাদের বর্তমান অবস্থান বেঙ্গালুরু, চেন্নাই, কর্ণাটক, দিল্লি, কলকাতাসহ বিভিন্ন রাজ্য ও শহরে। অবরুদ্ধ দেশে তাদের সবাইকে একত্র করা সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এ ছাড়া ভারতীয় বিশেষ বিমান ঢাকায় আসতে অতিরিক্ত অর্থ দাবি করছে। আর এই অর্থ যাত্রীদের কাছ থেকে ব্যক্তিগতভাবে না নিয়ে পুরো অর্থ সরকার কাছ থেকে বুঝে পেতে চাইছে তারা।
এর মধ্যেই সরকার উপায় খুঁজছে বাংলাদেশিদের দেশে ফিরিয়ে আনতে। এ নিয়ে ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশনে আজ বৈঠকে বসছেন হাইকমিশনার মোহাম্মদ ইমরান।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বেঙ্গালুরু ও চেন্নাইয়ে আটকে পড়া বাংলাদেশিদের প্রথম দেশে ফেরত আনার বিষয়টি অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। ভারতীয় বিমান বেশি অর্থ দাবি করায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের উড়োজাহাজ সেখানে পাঠানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বলেন, ‘ভারতে আটকে পড়াদের মধ্যে বেশিসংখ্যক হচ্ছে বেঙ্গালুরু ও চেন্নাই এলাকায়। কেউ ওখানে ট্রিটমেন্ট (চিকিৎসা) করাতে গেছে। আবার কেউ পরিবার নিয়ে ঘুরতে গেছে। শিক্ষার্থীও কিছু আছেন।’
‘ওখানে (ভারত) সব বন্ধ, তারা চলাফেরা করতে পারছেন না। তারা হোটেলের বাইরে বের হতে পারছেন না। তারা দেশে আসতে চান। তারা বলছেন, তাদের পয়সা কমে যাচ্ছে। আমরা বলছি, যদি কেউ আসতে চায় তারা যেন মিশনে রেজিস্ট্রেশন করে। কিছু কিছু মিশনে রেজিস্ট্রেশন করেছে।’
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে গত ২৪ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সারা দেশে ২১ দিনের লকডাউন ঘোষণা করেন। এতে দেশটির বিভিন্ন শহরে আটকা পড়েছেন কয়েক শ বাংলাদেশি।
ভারতে লকডাউনে আটকে পড়াদের মধ্যে অনেকেই অর্থ সংকটে পড়েছেন বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ আসে। ভারতে অবস্থান করা তাদের জন্য ক্রমেই কঠিন হয়ে পড়ছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকার তাদের ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগী হয়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, ‘যেহেতু ভারতীয় বিমান বেশি অর্থ দাবি করছে, আমরা অন্য উপায় খুঁজছি। ভারত সরকারের সঙ্গে এ নিয়ে আমরা কথা বলেছি। আমরা বাংলাদেশ বিমানকেও তাদের ফিরিয়ে আনতে রাজি করানোর চেষ্টা করছি।’
কিন্তু সমস্যা হলো, আটকা রপড়া বাংলাদেশিরা একেকজন একেক জায়গায়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এদের সবাইকে একসাথে করটা বড় চ্যালেঞ্জ। এক জায়গায় হলে আমরা পাঠাতে পারতাম। তাদের বলেছি, একটা জায়গায় একসাথে হতে, কিন্তু তারা বলছে এই আয়োজনও আমাদেরই (সরকার) করতে হবে।’
ভারতে কী পরিমাণ লোক আটকা পড়েছে তা এখনো স্পষ্ট নয়। কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, ৬০০ বা তার চেয়ে বেশি বাংলাদেশি নাগরিক ভারতে আটকা পড়েছে।
তাদের দেশে ফেরাতে সরকারের পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ভারতীয় সরকার একটা প্রস্তাব দিয়েছে। তারা বলেছে, কলকাতায় যারা আছে তাদের বিমানে না নিয়ে বাসে দেশে নিয়ে আসতে। পয়সা আমাদের দিতে হবে। আমরা বিভিন্ন উপায়ে তাদের দেশে ফেরানোর চেষ্টা করছি। মিশন এটা নিয়ে কাজ করছে। তবে এখনো ফাইনাল কিছু হয়নি। আমি জানব আজকে। কালকের মধ্যে আপনাদের জানাব।’
এদিকে গতকাল পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম তার ভেরিফায়েড ফেসবুকে এক বার্তায় ভারতে আটকা বাংলাদেশি নাগরিকদের দেশে ফেরানোর বিষয়ে লিখেন, ‘ভারতে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ। আমরা শুনতে পাচ্ছি চিকিৎসা নিতে গিয়ে সেখানে কিছু বাংলাদেশি আটকা পড়েছেন এবং তাদের থাকতে অসুবিধা হচ্ছে।
‘আমাদের দূতাবাস ইতিমধ্যে একটি প্রাথমিক তালিকা তৈরি করেছে। যাঁরা এখনো যোগাযোগ করেননি, আপনারা একসঙ্গে কতজন, কোথায় আছেন, নাম, বয়স, পাসপোর্ট নম্বর, যোগাযোগের জন্য মুঠোফোন নম্বর আমাদের দিল্লিতে অবস্থিত দূতাবাসে জানান। আমাদের দিল্লিতে দূতাবাসের টেলিফোন নম্বর ৮৫৯৫৫-৫২৪৯৪ (অথবা মুম্বাই কনস্যুলেট ৯৮৩৩১-৫৯৯৩০)।’
দেশে ফেরত এলে তাদের ১৪ দিন আশকোনা হজ ক্যাম্পে কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে মনে করিয়ে দিয়ে প্রতিমন্ত্রী লিখেছেন, ‘পূর্ণ তালিকা পেলে আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে সুবিধা হবে। আপনাদের বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনতে না পারা পর্যন্ত অন্তত আমরা চেষ্টা করব স্থানীয় কর্তৃপক্ষ যেন আপনাদের চাহিদার বিষয়গুলো দেখভাল করে। আর যাঁরা ফিরে আসতে চান, তাঁদের আশকোনা হজ ক্যাম্পে এবং যাঁরা চিকিৎসাধীন তাঁরা কুর্মিটোলা বা অন্য হাসপাতালে ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকার সম্মতি দিতে হবে।’