উহানের অজানা তথ্য

7

কাজিরবাজার ডেস্ক :
বর্তমানে বিশ্বে প্রতিটা মানুষের কাছেই উহান এখন ভীষণই পরিচিত একটা নাম। সেইসঙ্গে পরিচিত করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯। যে করোনাভাইরাসের আতঙ্কে এখন সারা বিশ্ব কাঁপছে, তার উৎপত্তিস্থল এই উহানই। তবে নামের সঙ্গে পরিচিত হলেও উহানের সঙ্গে প্রকৃত পরিচয় অনেকেরই গড়ে ওঠেনি। চীনের এই উহান শহর সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য।
উহান চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী। এটি মধ্য চীনের সবচেয়ে জনবহুল শহর। হান নদী ও ইয়াংসিকিয়াং নদী প্রান্তের মধ্যবর্তী সীমান্তে পূর্ব জিয়ানগাঁ সমভূমিতে অবস্থিত। তিনটি শহর, ভুচং, হানকু এবং হানয়াইং-এর সংঘটিত হওয়ার ফলে উহানকে ‘চীনের থোয়ারফার’ নামে অভিহিত করা হয়। উহান একটি প্রধান পরিবহন হাব। কারণ হান শহরের মধ্য দিয়ে বেশ কয়েকটি রেলপথ, মহাসড়ক এবং এক্সপ্রেসওয়ে মধ্য দিয়ে চলে গেছে এবং অন্যান্য প্রধান শহরগুলোর সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করেছে। অভ্যন্তরীণ পরিবহনে তার মূল ভূমিকার কারণে, উহানকে কখনও কখনও বিদেশের উৎস দ্বারা “চীনের শিকাগো” বলা হয়। উহান কেন্দ্রীয় চীনের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, আর্থিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষা ও পরিবহন কেন্দ্র হিসাবে স্বীকৃত হয়। ১৯২৭ সালে ওয়াং জিংভিয়ের নেতৃত্বে কুওমিনতাঙ (কেএমটি) বামপন্থী সরকার অধীনে উহান চীনের রাজধানী ছিল। পরে শহরটি ১৯৩৭ সালে চীনের যুদ্ধকালীন রাজধানী হিসেবে কাজ করে।
চীনের সবচেয়ে পুরনো শহরের মধ্যে সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী উহান। চীনের বহু প্রাচীন সংস্কৃতির ছাপ এখনও এই শহরে রয়েছে। এমনকি চীনের সবচেয়ে পুরনো এবং জনপ্রিয় অপেরা হ্যানও এই শহরের।
চীনের বহু বছরের ইতিহাস বয়ে চলেছে এই শহর। হুবেই প্রভিনশনাল মিউজিয়াম, ইয়ালো ক্রেন টাওয়ার থেকে চীনের ইতিহাস সম্বন্ধে অনেক তথ্য জানা যায়।
২০১৫ সালের তথ্য অনুযায়ী, মধ্য চীনের সবচেয়ে জনবসতিপূর্ণ শহর হল উহান। ২০১৫ সালে জনসংখ্যা ছিল এক কোটি ৬০ লক্ষ। উহানের উচ্যাং, হাংকুয়ো এবং হ্যাংইয়াং এই তিন অঞ্চলেই ছড়িয়ে রয়েছে এই জনসংখ্যা।
কাঠ, চা, সিল্ক, তুলো-সহ নানা জিনিসের ব্যবসা এখানে। এ ছাড়া নানা রকম প্রাণীর কেনাবেচারও বড় কেন্দ্র উহান। এই নানারকম প্রাণীর মাংস থেকেই করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পগার কথা শোনা গিয়েছিল প্রথমে।
আর উহান থেকে দ্রুত কেন বিশ্বের অন্যান্য শহরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ল? তার কারণও উহানের উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং ব্যবসায় সমৃদ্ধি।
আসলে ব্যবসার খাতিরেই দেশ-বিদেশের ব্যবসায়ীদের যাতায়াত এই উহানে। তাদের মধ্যে কেউ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশে ফিরলেই, তার থেকে ক্রমে ওই দেশের বাকিদেরও মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করল এই ভাইরাস।
এই ভাবে উহান থেকে শুধু চীনেই নয়, সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে এই সংক্রমণ অতিমারির আকার নিয়ে নিয়েছে।
শুধুমাত্র উহানেই ১৬৫৬টি বড় কারখানা রয়েছে। এ ছাড়াও আরও নানা ধরনের ছোট কারখানা তো রয়েছেই। এই উহানেই রয়েছে বায়োলজিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প, ফার্মাকিউটিকলসের মতো উৎপাদন শিল্পও। এবং চিনের তৃতীয় বৃহৎ গাড়ি উৎপাদন কেন্দ্রও এই উহান।
উহানে সারা বছরই আর্দ্রতাপূর্ণ আবহাওয়া। গড় তাপমাত্রা ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ঘোরাফেরা করে।
তবে জুলাই মাস নাগাদ তাপমাত্রা ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠে যায়। আর সবচেয়ে ঠান্ডা পড়ে জানুয়ারিতে। তাপমাত্রা ৩ ডিগ্রির কাছাকাছি নেমে যায়। যদি কখনও উহানে বেড়াতে যেতে চান, তার জন্য মার্চ থেকে জুলাই আর সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর হল উপযুক্ত সময়।
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্যে চীনের এই উহান শহরে খুব দ্রুত ১০ দিনে একটি হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়।
তবে দীর্ঘ ২ মাস বিচ্ছিন্ন থাকার পর আংশিকভাবে খুলে দেয়া হয়েছে উহান শহরটি। শহরটির রেল স্টেশনে যাত্রীদের ভিড় দেখা যায়। প্রদেশটির রাজধানী হুবেইতে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়েছিল এবং প্রাণ হারায় ৩ হাজার মানুষ।
উহান থেকে সংক্রমণের পড়ে প্রচণ্ড গতিতে বিশ্বের ১৭৫টিরও বেশি দেশে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। আক্রান্ত হয়েছে তিন লাখেরও বেশি মানুষ। মারা গেছে ১৩ হাজারেরও বেশি মানুষ। অবশ্য ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়েও সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেছে ৯২ হাজার ৩৭৫ জন। লকডাউন, আকাশপথ বন্ধসহ বিশ্বের বেশিরভাগ দেশেই নেয়া হয়েছে নানারকম পদক্ষেপ। এমন পরিস্থিতিতে আশার আলো ছড়াচ্ছে উহানের পরিস্থিতি। উহানে নতুন আক্রান্ত শূন্যের কোঠায়, যুদ্ধজয়ের মাইলফলক!