মাঠে নেমেছে প্রশাসন, কঠোর অবস্থানে সরকার ॥ দেশের সব স্থলবন্দর দিয়ে বিদেশীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ ॥ কোথাও নতুন করে করোনা রোগী পাওয়া গেলে ঐ এলাকা লকডাউন

16

কাজিরবাজার ডেস্ক :
করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় কঠোর অবস্থানে সরকার। এ লক্ষে ইতোমধ্যে মাঠ প্রশাসনে বেশ কিছু কঠোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নির্দেশনা মোতাবেক কার্যক্রম বাস্তবায়নে জোরেশোরে নেমেছেন মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা। এদিকে করোনাভাইরাস সংক্রান্ত সকল সরঞ্জাম, ওষুধ, যন্ত্রপাতি ইত্যাদি আমদানিতে সকল প্রকার ট্যাক্স মওকুফ করেছে সরকার। আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত এটি বলবৎ থাকবে। এছাড়া নোভেল করোনাভাইরাস ছড়ানোরোধে বাংলাদেশের সব স্থলবন্দর দিয়ে বিদেশী নাগরিক প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে সরকার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ থেকে শনিবার এ বিষয়ে একটি নির্দেশনা পুলিশের বিশেষ শাখার অতিরিক্ত মহাপুলিশ পরিদর্শকের কাছে পাঠানো হয়েছে। রবিবার থেকেই এই নির্দেশনা কার্যকর।
এ বিষয়ে ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোঃ শাহ্ কামাল বলেন, করোনা প্রতিরোধে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কোন এলাকায় নতুন করে করোনা আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেলে সে এলাকাকে ‘লকডাউন’ করা হবে। সকল এলাকার কোয়ারেন্টাইনের ওপর জোর দেয়া হয়েছে। এটি হালকা করে দেখার কোন কারণ নেই। দেশের সকল এলাকা কঠোর পর্যবেক্ষণে রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। দেশের কোথাও যাতে কোন প্রকার জনসমাগম না হয় সে বিষয়েও মাঠ প্রশাসনকে কঠোর হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
দুর্যোগ মন্ত্রণালয় থেকে পৃথক কোন কর্মসূচী হাতে নেয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে সিনিয়র সচিব বলেন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয় এক যোগে কাজ করছে। এর পাশাপাশি মাদারীপুর, রাজবাড়ী ও টাঙ্গাইলে যে তিনটি যৌনপল্লী নিষিদ্ধ করা হয়েছে, সে এলাকার সকল যৌন কর্মীকে ৩০ কেজি করে চাল মানবিক সাহায্য দেয়া হয়েছে।
এর আগে করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাব রোধে দেশী বিদেশীদের সঙ্গে সাক্ষাত সীমিত করার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া বড় ধরনের জনসংযোগ, মিটিং প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। পারিবারিক ও সামাজিক পর্যায়ে সকলকে সতর্ক থাকতে বলেছেন। একই সঙ্গে দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধেরও নির্দেশ দেন তিনি।
সরকারী সিদ্ধান্ত কঠোরভাবে বাস্তবায়নে তৎপর দেশের সকল মাঠ প্রশাসন। এ বিষয়ে নওগাঁর জেলা প্রশাসক মোঃ হারুণ-অর-রশীদ বলেন, আমারা পুরো জেলাকে নজরদারিতে রেখেছি। সকল হোম কোয়ারেন্টাইন চিহ্নিত করতে বিশেষ স্টিকার লাগানো হচ্ছে। এই স্টিকারের মাধ্যমে ওই বাড়িটি চিহ্নিত করা হচ্ছে। স্টিকারের সঙ্গে তিনটি করে ফোন নাম্বার সেখানে লিখে রাখা হচ্ছে। এই নাম্বারগুলো হলো- জেলাপ্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন এবং স্বাস্থ্য সেবা সংক্রান্ত মাঠ প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিদের। কেউ হোম কোয়ারেন্টাইন উপেক্ষা করে বেরিয়ে এলে জনগণ যাতে ফোন করে র্কর্তৃপক্ষকে জানাতে পারে। আর জানামাত্র কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। এছাড়া ওই সকল বাড়িতে গ্রাম পুলিশ ও আনসার ভিডিপিকে দিয়ে পাহারা বসানো হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমরা জনসচেতনতার ওপর জোর দিয়েছি। বিশেষ করে হাত ধোয়া এবং কিভাবে এর বিস্তার রোধ করা যায় সে সংক্রান্ত বিষয়ে আমরা বিভিন্নভাবে জনগণকে সচেতন করতে কাজ করছি। ক্লাবগুলোতে আড্ডা বন্ধ করেছি। কোথাও কোন প্রকার জমায়েত যাতে না হয় সে বিষয় বিভিন্ন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছি। এলাকার সকল চায়ের দোকান বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তবে পাউরুটি, কলা বা খাদ্যসামগ্রী বিক্রিতে কোন বাধা নেই। কোন প্রকার আড্ডা চলবে না। জেলাপ্রশাসক বলেন, নওগাঁতে বিশাল হাট বসে। এটি প্রতি সপ্তাহে একবার বসে। এই হাটে বিভিন্ন এলাকা থেকে লোক আসে। কয়েক হাজার লোকের জমায়েত হয়। এই হাট এক সপ্তাহের জন্য বন্ধ করা হয়েছে। তবে বাজার চলবে। সকল প্রকার প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি বিক্রি চলবে। এ সংক্রান্ত বিষয়গুলো বাস্তবায়নে মোবাইল কোর্ট কাজ করে যাচ্ছে।
করোনাভাইরাস প্রতিরোধ সংক্রান্ত সরঞ্জামাদি আমদানি ট্যাক্স ফ্রি : এদিকে করোনাভাইরাস সংক্রান্ত সকল সরঞ্জামাদি, ওষুধ, যন্ত্রপাতি ইত্যাদি আমদানিতে সকল প্রকার ট্যাক্স মওকুফ করেছে সরকার। আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত এটি বলবৎ থাকবে। রবিবার অর্থমন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি, ওষুধ, যন্ত্রপাতি ইত্যাদি আমদানিতে সকল ধরনের (আয়কর, আমদানিকর ও ভ্যাট) ট্যাক্স মওকুফ করা হবে। এটি আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। ওষুধ প্রশাসনের অনুমোদিত যন্ত্রপাতি আমদানির ক্ষেত্রে এই সুবিধা দেবে সরকার। বাংলাদেশ ওষুধ প্রশাসন এর মান নিয়ন্ত্রণ করবে।
বিদেশীদের জন্য স্থলবন্দর নিষিদ্ধ : নোভেল করোনাভাইরাস ছড়ানোরোধে বাংলাদেশের সব স্থলবন্দর দিয়ে বিদেশী নাগরিকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে সরকার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ থেকে শনিবার এ বিষয়ে একটি নির্দেশনা পুলিশের বিশেষ শাখার অতিরিক্ত মহাপুলিশ পরিদর্শকের কাছে পাঠানো হয়েছে। রবিবার থেকেই এই নির্দেশনা কার্যকর হচ্ছে।
এতে বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। এই প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে করোনাভাইরাসের অধিকতর সংক্রমণ রোধকল্পে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে ২২ মার্চ থেকে পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত বর্তমানে বাংলাদেশের সব স্থলবন্দরসমূহের মাধ্যমে বিদেশী নাগরিকদের বাংলাদেশে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
বেনাপোল, ভোমরা, বাংলাবান্ধা, হিলি, বুড়িমারী, রৌমারী, দর্শনা, নাকুগাঁও, তামাবিল, শেওলা ও আখাউড়ার স্থলবন্দর দিয়ে বিদেশী নাগরিক প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকবে বলে নির্দেশনায় জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে চারটি গন্তব্য ছাড়া বিশ্বের সব দেশের সঙ্গে বিমান চলাচল বন্ধ রেখেছে বাংলাদেশ।