জগন্নাথপুরে উচ্ছেদ অভিযান

10

মো. শাহজাহান মিয়া জগন্নাথপুর থেকে :
জগন্নাথপুরে বহুল আলোচিত উচ্ছেদ অভিযানে প্রায় ৭ কোটি টাকার জায়গা উদ্ধার করা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, জগন্নাথপুর পৌর এলাকার হাসপাতাল পয়েন্টের পাশে হবিবপুর-আশিঘর গ্রামবাসীর একটি বিশাল মাঠ ছিল। মাঠে চড়ানো হতো গবাদি-পশু। মৌজা-হবিবপুর, জেল এল নং ৪৫ ও দাগ নং ১৪ এতে গ্রামবাসীর যৌথ এজমালি জায়গা ছিল।
তবে ১৯৯১ সালে এ মাঠের দিকে নজর পড়ে হবিবপুর-আশিঘর গ্রামের যুক্তরাজ্য প্রবাসী শাহ আবরু মিয়ার। তখন বিশাল ক্ষমতাসীন ব্যক্তি শাহ আবরু মিয়া তাঁর ক্ষমতা ও প্রভাব খাটিয়ে পুরো মাঠটি দখল করে বিশাল আয়তনের পাকা সীমানা দেয়াল নির্মাণ করেন। এতে গ্রামবাসী বাধা দিলে ঘটে সংঘর্ষ ও বন্দুক যুদ্ধের ঘটনা। এতে পুলিশ সহ অর্ধ শতাধিক লোক আহত হন। পরে একাধিক মামলা-মোকদ্দমায় প্রায় অর্ধ শতাধিক প্রতিবাদী গ্রামবাসী কারাভোগ করেছেন। এ ঘটনায় দীর্ঘদিন ধরে গ্রামবাসীরা ক্ষুব্ধ ছিলেন।
এদিকে-শাহ আবরু মিয়ার চাচাতো ভাই শাহ আবদুল মতিন গং বাদী হয়ে শাহ আবরু মিয়ার বিরুদ্ধে ২০০১ সালে সুনামগঞ্জ জেলা জজ ২য় আদালতে একটি স্বত্বজারি মামলা দায়ের করেন। মামলাটি জজ কোর্ট, হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়িয়ে রায় চলে যায় শাহ আবদুল মতিন গংদের পক্ষে।
অবশেষে দীর্ঘ ২৯ বছর পর ৭ মার্চ শনিবার উচ্চ আদালতের রায়ের প্রেক্ষিতে সুনামগঞ্জ দায়রা জজ আদালতের নাজির দেবাশিষ দে এর নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যক র‌্যাব ও পুলিশ দল উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে শাহ আবরু মিয়ার কবল থেকে প্রায় ৭ কোটি টাকা মূল্যের সাড়ে ৩ একর জায়গা উদ্ধার করে শাহ আবদুল মতিন গংদের বুঝিয়ে দেয়া হয়। শাহ আবরু মিয়ার সামনেই একটি বুলড্রোজার ও মাথায় লাল কাপড় বেঁধে শতাধিক শ্রমিকরা দিন ব্যাপী বড়-বড় হাতুড়ি দিয়ে বিশাল আয়তনের সীমানা দেয়াল ও পাকা দ্বিতীয় তলা ঘর ভাংচুর করেন। নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন বিপুল সংখ্যক র‌্যাব ও পুলিশ। উচ্ছেদ অভিযান দেখতে শতশত উৎসুক জনতা ভীড় জমান। এ সময় উচ্ছেদের দৃশ্য দেখে পূর্বে নির্যাতন ও কারাভোগের শিকার হওয়া গ্রামবাসীরা আবেগ ও আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়েন। এ যেন যুদ্ধ বিজয়ের স্বাদ।
এ ব্যাপারে শাহ আবরু মিয়া বলেন, আমি যুক্তরাজ্যে থাকায় আদালতের রায় আমার বিরুদ্ধে গেছে। তবে শাহ আবদুল মতিন পক্ষের যুক্তরাজ্য প্রবাসী সুহেলুর হক সুহেল বলেন, এ বিজয় জুলুমের বিরুদ্ধে নির্যাতিত গ্রামবাসীর হয়েছে। উচ্ছেদ অভিযানে নেতৃত্বদানকারী সুনামগঞ্জ দায়রা জজ আদালতের নাজির দেবাশিষ দে বলেন, এতে আবারো প্রমাণিত হয়েছে আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নন।