ছাতকে স্কুলছাত্র পাবেল হত্যা মামলার আসামীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে

44

ছাতক থেকে সংবাদদাতা :
ছাতকের খুরমা উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির ছাত্র পাবেল আহমদ (১৬) হত্যা মামলার মূল হোতা ইউপি চেয়ারম্যানসহ অন্যান্য আসামীদের গ্রেফতার করছেনা পুলিশ। ঘটনার প্রায় ২০দিন অতিবাহিত হলেও মামলার মূল হোতারা গ্রেফতার না হওয়ায় উদ্বেগ উৎকন্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন নিহতের পরিবার। তারা সু-বিচার প্রাপ্তি থেকেও বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা করছেন। আসামীরা বাদীনি ও তার পরিবারকে মামলা তুলে আনার জন্য বিভিন্ন ভাবে হুমকি-ধামকি অব্যাহত রেখেছে। হত্যা মামলাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।
বুধবার স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে উপজেলার দক্ষিণ খুরমা ইউনিয়নের ছোট মায়েরকুল গ্রামের আনসার আলী, মাফিজ আলী, মারফত আলীসহ গ্রামের একাধিক বিক্ষুব্দ লোকজন বলেন, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল মছব্বির কর্তৃক জাল দলিলের মাধ্যমে মায়েরকুল গ্রামের প্রবাসী ফারুক মিয়ার কাছে ৪ লাখ টাকার বিনিময়ে শুক্রবন্দ মৌজার দুই কেদার জায়গা ছোট মায়েরকুল মৌজা দেখিয়ে ভুয়া দলিলের মাধ্যমে পতিত জমি বিক্রি করেন। একই জায়গা একই দলিলমূলে ইউপি চেয়ারম্যান গ্রামের আবদুল কদ্দুছ ও কাপ্তান মিয়ার কাছেও দলিল সম্পাদনের মাধ্যমে বিক্রি করা হয়। ২৯ জানুয়ারী সকালে ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল মছব্বির গ্রামের আবদুল কদ্দুছকে ওই জমির মালিকানা বুঝিয়ে দিতে পতিত জমিতে যান। এতে ফারুক আহমদের স্ত্রী পারভীন বেগম ও পুত্র পাবেল আহমদ জমির সীমানা নির্ধারণে বাধা নিষেধ করেন। এতে উত্তেজিত হয়ে ইউপি চেয়ারম্যান তাদেরকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। চেয়ারম্যান প্রতিবাদকারী স্কুল ছাত্র পাবেলকে ধরার নির্দেশ দিলে সে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। এ সুযোগে চেয়ারম্যান ও তার সহযোগিরা তার উপর অতর্কিত ভাবে হামলা চালিয়ে আহত করে। কিছু সময় পর উভয় পক্ষের লোকজন সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। হামলায় গুরুতর আহত স্কুল ছাত্র পাবেলকে স্থানীয় কৈতক হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। সেখানে চিকিৎসাধিন অবস্থায় ওইদিন রাতেই স্কুল ছাত্র পাবেল মারা যায়। এ ঘটনায় নিহতের মা পারভীন বেগম বাদী হয়ে ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল মছব্বিরকে প্রধান আসামী করে ৩৫জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা (নং-২৩) দায়ের করেন। মামলার বাদীনী ও নিহত স্কুল ছাত্রের মা পারভীন বেগম বলেন, চেয়ারম্যান ইটের টুকরো হাতে নিয়ে পাবেলের মাথায় আঘাঁত করেন। পরে চেয়ারম্যানের নির্দেশে উপস্থিত আবদুল কদ্দুছ নামের দুইজন, আবদুল কাদির, সালামত, মাসুকসহ অন্যান্যরা হামলা চালিয়ে মাটিতে ফেলে তার পুত্রকে ব্যাপক মারধর করে গুরুতর আহত করলে ওইদিন রাতেই সে মারা যায়। তিনি তার পুত্র হত্যাকারী মূল হোতা ইউপি চেয়ারম্যানসহ সকল আসামীদের গ্রেফতার করে দৃষ্ঠান্তমুলক শাস্তির দাবী জানান। আবদুল মছব্বির চেয়ারম্যানসহ হত্যা মামলার অন্যান্য আসামীদের দ্রুত গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানিয়েছেন নিহতের ছোট বোন স্কুল ছাত্রী নার্গিস আক্তার ও ফুফু সাফিয়া বেগম। এদিকে স্কুল ছাত্র পাবেল হত্যার পর সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে খুরমা উচ্চ বিদ্যালয় এলাকায় তার সহপাঠি শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা করেছে। ইউপি চেয়ারম্যান পলাতক থাকায় ভারপ্রাপ্ত দিয়ে চলছে ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম। এ ব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা থানার উপ-পরিদর্শক দেলোয়ার হোসেন বলেন, জমি সংক্রান্ত বিরোধে ঘর নির্মাণে বাধা দেওয়ায় স্কুল ছাত্র পাবেলকে হত্যা করা হয়েছে। এ মামলায় ৩ আসামী জেল-হাজতে রয়েছে। মামলার অন্য আসামীদের গ্রেফতারে জোর প্রচেষ্টা চলছে বলে তিনি জানিয়েছেন।