বাংলাদেশ একটি অসাম্প্রদায়িক

5

গত বুধবার মহান সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ইসলাম ধর্মের নামে জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করে বিশ্বের কাছে পবিত্র এই ধর্মকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে। তিনি বলেছেন, যারা সত্যিকারের ইসলাম ধর্মে বিশ্বাস করে, তারা কখনো দ্বন্দ্বে জড়াতে পারে না। সবাইকে নিজ নিজ ধর্ম পালনের সুযোগ দিতে হবে। অন্য ধর্মাবলম্বীরা যেন আঘাত না পায়, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
সম্প্রীতির বাংলাদেশে আবহমানকাল ধরে এই ভূখণ্ডে নানা জাতি-ধর্মের মানুষ, বিশেষ করে মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের লোক একত্রে আন্তরিকতা আর সৌহার্দ্যের সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে মিলেমিশে বসবাস করে আসছে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি এ দেশের বহুকালের ঐতিহ্য। স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের সংবিধানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ধর্মনিরপেক্ষতাকে মূলনীতি হিসেবে সংবিধানে যুক্ত করে মূলত অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণের ভিত্তি স্থাপন করে গেছেন। বাংলাদেশ আজ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির আদর্শ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত, বিশ্বজুড়ে সমাদৃত। সব ধর্ম-বর্ণের মানুষ নিয়ে একসঙ্গে মিলেমিশে বসবাস করা এ অঞ্চলের চিরায়ত রীতি। এ দেশের মানুষ নিজ নিজ ধর্মে নিষ্ঠাবান। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে তারা অনুকরণীয় আদর্শ বলে বিশ্বাস করে। বাংলাদেশের মানুষ সচেতনভাবে ধর্মীয় বোধসম্পন্ন বলে ভিন্নধর্মাবলম্বীদের প্রতি সহনশীলতার আদর্শ এ দেশে মূর্তমান। হাজার বছর ধরে মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, চাকমা, সাঁওতালসহ সব ধর্ম-বর্ণের মানুষ ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী একসঙ্গে সম্প্রীতি বজায় রেখে বসবাস করে আসছে বলেই সব স্রোত এক ধারায় এসে মিলিত হয়ে বাঙালি সংস্কৃতিকে করেছে সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী। আমাদের মুক্তিসংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধ এবং একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর অভূতপূর্ব বিজয় অর্জনে এককভাবে যে উপাদানটি সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে তা হলো বাঙালি সংস্কৃতির শক্তি। আর বাঙালি সংস্কৃতির মূলকথা হলো অসাম্প্রদায়িকতা ও সম্প্রীতি। বাংলাদেশ ঐতিহাসিকভাবে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির একটি দেশ। এ দেশের বেশির ভাগ মানুষ ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী হলেও বাঙালি সংস্কৃতি ও চেতনা এর মূল চালিকাশক্তি। মহান মুক্তিযুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার পেছনের চালিকাশক্তি ছিল এই অসাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্য। সারা পৃথিবী আজ পরাশক্তির স্নায়ুযুদ্ধের অবসানের পর ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদের উগ্র আক্রমণে উদ্বিগ্ন। ধর্মীয় ঘৃণাকেই ব্যবহার করা হচ্ছে রাজনৈতিক গুটির চাল হিসেবে। বাংলাদেশকে একটি সাম্প্রদায়িক দেশের তকমা লাগানোর জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীও অত্যন্ত সক্রিয়।
আর সে কারণেই আমাদের সচেতন থাকতে হবে। ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে এক শ্রেণির মানুষ যেন সমাজকে ব্যবহার করতে না পারে সে ব্যাপারে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।