ওসমানীনগর-বালাগঞ্জের লাইব্রেরী গুলোতে গাইড বইয়ের ছড়াছড়ি

11

ওসমানীনগর থেকে সংবাদদাতা :
শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও উচ্চ আদালতের রায়কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বালাগঞ্জ-ওসমানীনগর উপজেলার লাইব্রেরিতে প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে নোট-গাইড বই। প্রকাশনী সংস্থার কাছ থেকে বড় অংকের টাকা নিয়ে দুই উপজেলার সকল প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্টরা এসব নিষিদ্ধ নোট ও গাইড বই কৌশলে শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। বিদ্যালয়গুলোর সংশ্লিষ্ট শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের নোট ও গাইড বইয়ের তালিকা দিয়ে তার উপর সংশ্লিষ্ট লাইব্রেরির ঠিকানা সম্মিলিত শীল দিয়ে দিচ্ছেন। শিক্ষকদের পছন্দমত লাইব্রেরি এবং নির্দিষ্ট প্রকাশনী সংস্থার গাইড বই ক্রয় না করলে শিক্ষার্থীকে নাজেহাল হতে হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুই উপজেলার প্রায় সবকটি মাধ্যমিক উচ্চ বিদ্যালয় ছাড়াও সরকারী, বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের গাইড বা নোট বই কিনতে বাধ্য করছেন বিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্টরা। বিনিময়ে নগদ টাকা, ঘড়ি, ফ্যান, আলমারীসহ নানা ধরণের উপঢৌকন প্রকাশনা সংস্থার নিকট থেকে লুটে নিচ্ছেন ।
এদিকে, বুধবার দুপুরে ওসমানীনগরে অবৈধ নোটবই বিক্রির দায়ে তিনটি লাইব্রেরিকে জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমান আদালত। গোয়ালাবাজার ও তাজপুরে এ অভিযান পরিচালনা করে ৬২৪টি নিষিদ্ধ নোটবই জব্দ করা হয়েছে। অভিযানে তাজপুরের পুথিঘর ৫শ’ টাকা ও তাজ লাইব্রেরীকে ২ হাজার টাকা, গোয়ালাবাজারের বইঘর ২ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। অন্যদিকে, প্রশাসনের এমন অভিযানকে লোক দেখানো অভিযান বলেই অনেকেই অবহিত করেছেন। মাত্র দুই লাইব্রেরী নয় দুই উপজেলার শতাধিক লাইব্রেরিতে অভিযান পরিচালনা করার দাবি জানিয়েছেন অনেকেই।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বছরের শুরুতেই দুই উপজেলার প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্রসহ হাট বাজারগুলিতে থাকা লাইব্রেরিতে দেদারছে বিক্রি হচ্ছে দ্বিতীয় শ্রেণী থেকে শুরু করে নবম ও দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের নিষিদ্ধ ঘোষিত নোট-গাইড বই। নোট বই বিক্রি হচ্ছে একের মধ্যে এক, দুই, পাঁচ এবং সাত এমন সব বাহারি নামে। নানা বাহানায় ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবকদের কাছে বেশি দামে এ সব নোট-গাইড বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন একাধিক অসাধু ব্যবসায়ী।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে দুই উপজেলার সরকারি-বেসরকারি স্কুলের শিক্ষকরা গাইড বই কোম্পানির সংশ্লিষ্টদের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে নিন্মমানের গাইড ও গ্রামার বইয়ের নাম প্রেসক্রাইব (তালিকা) করছেন। ছাত্রছাত্রীর সংখ্যার অনুপাতে পরিমাপ হচ্ছে প্রকাশনী গুলোর ঘুষের টাকা, অফার ও উপহার। প্রকাশনী সংস্থার এজেন্ট ও স্থানীয় একাধিক অসাধু লাইব্রেরি ব্যবসায়ীর ওইসব কাঁচা টাকা পকেটস্থ করতে দুই উপজেলার সরকারি-বেসরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে সে সব বই পাঠ্য তালিকা ভূক্তও করতে দ্বিধা করছেন না সংশ্লিষ্টরা।
আব্দুল আহাদ নামের স্থানীয় এক অভিভাবক জানান, আমার দুটি মেয়ে ওসমানীনগরে একটি বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ ও অষ্টম শ্রেণীতে পড়ে। শিক্ষকরা তাদের হাতে ধরিয়ে দিয়েছে নোট-গাইডের তালিকা। সেই বই কোন দোকানে পাওয়া যাবে তার নামও উল্লেখ করা হয়েছে। তালিকায় থাকা গাইড বইয়ের দাম প্রায় চার হাজার টাকা। যা কিনা অন্য কোনো বইয়ের দোকানে পাওয়া যাচ্ছে না।
বালাগঞ্জে সদরের বাসিন্দা আব্দুল আলিম বলেন, তার একটি সন্তান স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীতে পড়ে। সরকার আমার সন্তানের সব বই বিনামূল্যে দিল, স্কুলের স্যারদের কথা অনুযায়ী আমাকে ৩টি গাইড বই কিনতে হলো।
ওসমানীনগর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা স্বপন কুমার চক্রবর্তী বলেন, সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর সকল স্তরে গাইড বা নোট বই নিষিদ্ধ করেছে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকেও অবগত করা হয়েছে।
বালাগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, এ ব্যপারে লিখিত অভিযোগ পেলে তিনি ব্যবস্থা নেবেন।
বালাগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা চলতি দায়িত্ব (প্রাথমিক) আব্দুল মুমিন মিয়া বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর সকল শিক্ষকদের এ বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে। যদি কোনো শিক্ষক এসবে জড়িয়ে থাকেন তাহলে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ওসমানীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা: তাহমিনা আক্তার বলেন, গাইড বই বিক্রি বন্ধের ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।