মাদকবিরোধী অভিযানে সদিচ্ছা

9

মাদকের ভয়ংকর নেশা দেশের তরুণসমাজের একটি বড় অংশকে ধীরে ধীরে গ্রাস করতে চলেছে। শহর ছাড়িয়ে গ্রামাঞ্চলেও তরুণসমাজে ইয়াবা আসক্তি বাড়ছে। সারা দেশে যেভাবে ইয়াবা ছড়িয়ে পড়ছে, তাতে শঙ্কিত না হয়ে উপায় নেই। মাদকের বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স ঘোষণার পর পরিচালিত মাদকবিরোধী কঠোর অভিযানে কক্সবাজারসহ সারা দেশে দেড় বছরে ৪৮২ জন ইয়াবা কারবারি নিহত হয়েছে। পুলিশের উদ্যোগে গত বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি ১০২ জন এবং গত ৩ ফেব্রুয়ারি ২১ জন কারবারি আত্মসমর্পণও করেছে। এত কিছুর পরও সারা দেশে হাত বাড়ালেই মিলছে ইয়াবা। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একটি প্রতিবেদনই বলছে, দেশে ইয়াবা আসক্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালে চিকিৎসা নেওয়া রোগীদের মধ্যে ৪২.৩ শতাংশই ইয়াবায় আসক্ত ছিল। ২০১৭ সালে ছিল ৩৫.৫৪ শতাংশ, ২০১৬ সালে ৩১.৬১ শতাংশ এবং ২০১৫ সালে ২০.৬৪ শতাংশ। অর্থাৎ প্রতিবছর বেড়েছে ইয়াবা আসক্তের সংখ্যা। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের আরেকটি তথ্য অনুযায়ী ২০১৯ সালে দেশে তিন কোটি ১০ লাখ দুই হাজার ৮২৯ পিস ইয়াবা উদ্ধার করেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
পুরনো কারবারিদের সঙ্গে নতুন সিন্ডিকেট মিলে নতুন রুটে পাচার এবং কৌশল বদলে কারবার করায় ইয়াবার প্রবেশ ঠেকানো যাচ্ছে না।
ইয়াবা কারবারিদের স্বাভাবিক জীবনধারায় ফিরে আসতে উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার ও প্রশাসন। আত্মসমর্পণসহ প্রশাসনের উদ্যোগের সুযোগ নিচ্ছে ইয়াবার গডফাদাররা। দুই দফায় আহ্বান জানানো হলেও শীর্ষ ৭৩ গডফাদারের ৪০ জনই আত্মসমর্পণ করেনি। তাদের অনেকেই আড়ালে থেকে নতুন সিন্ডিকেট তৈরি করেছে। আত্মসমর্পণ করা অনেকের সিন্ডিকেট এখনো সক্রিয়। মাদক কারবারিরা দেশ ও সমাজের শত্রু। নিজেদের বাণিজ্যিক স্বার্থ সিদ্ধি করতে দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে তারা। ইয়াবা কারবারিদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে, মূল হোতাদের বিচারের মুখোমুখি করা হবে—এটাই আমাদের প্রত্যাশা। এ জন্য প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি রাজনৈতিক সদিচ্ছাও প্রয়োজন।