বাংলাদেশ-ইতালি সম্পর্ক সুদৃঢ় হউক

8

ইতালি সফর করে এলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্বাধীনতার পর ইউরোপের যে কয়টি দেশ প্রথম বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়, ইতালি তার মধ্যে অন্যতম। ফলে স্বাধীন বাংলাদেশের সূচনালগ্ন থেকেই দুই দেশের সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। প্রধানমন্ত্রীর এবারের ইতালি সফরকালেও এই দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের প্রতিফলন ঘটেছে। দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী বৈঠক করে। প্রধানমন্ত্রী জিউসেপ কোঁতের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত এসেছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে দুই দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে কাজ করতে একমত হয়েছে বাংলাদেশ ও ইতালি। বাংলাদেশে যে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল হচ্ছে সেখানে ইতালির ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের জন্য জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের মাধ্যমে ১০ লাখ ইউরো সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ইতালির প্রধানমন্ত্রী। উভয়পক্ষই আলোচনা জোরদার করতে সম্মত হয়েছে। উভয় নেতাই ২০২২ সালে বাংলাদেশ ও ইতালির কূটনৈতিক সম্পর্কের সুবর্ণ জয়ন্তীকে গুরুত্ব প্রদান করে সংশ্লিষ্ট দূতাবাসগুলোর নিজ নিজ উদ্যোগে উভয় দেশের রাজধানীতে একত্রে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এই ইভেন্টটি উদযাপনেরও আহ্বান জানিয়েছেন।
বৈঠকের পর ঢাকা-রোম যে যৌথ ঘোষণা হয়েছে, তাতে দুই দেশের সম্পর্কের নৈকট্যই ফুটে উঠেছে। যৌথ ঘোষণায় বলা হয়েছে, উভয়পক্ষই রোহিঙ্গা সমস্যার বিষয়ে গত ২৩ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানায়। শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে জিউসেপ কোঁতে ইতালির পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশের পদক্ষেপে সন্তোষ প্রকাশ করেন বলে যৌথ ঘোষণায় উল্লেখ করা হয়। তিনি বাংলাদেশের অনুসৃত আতিথেয়তার নীতি অব্যাহত রাখতে এই জরুরি মানবিক অবস্থা মোকাবেলা এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উৎসাহ প্রদানে জাতিসংঘ সংস্থাগুলোর মাধ্যমে ইতালির রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সহায়তার কথা উল্লেখ করেন। যৌথ ঘোষণায় আরো বলা হয়, দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে ইতিবাচক দিক পরিলক্ষিত হয়েছে। উভয় পক্ষই ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং বাংলাদেশের মধ্যে উন্নয়ন, শ্রম ও মানবাধিকারের ক্ষেত্রে আরো নিবিড় সহযোগিতার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছেন। দুই নেতা ‘এভরিথিং বাট আর্মস’ অগ্রাধিকারমূলক শুল্কনীতির আওতায় ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের রপ্তানির গুরুত্বকে স্বীকৃতি দেন। বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) দলের পদমর্যাদার থেকে উত্তোরণ হওয়ার পরেও ইইউর পণ্যবাজারে বাংলাদেশি পণ্যের প্রবেশাধিকারের ক্ষেত্রে ইতালির সমর্থন চেয়েছে। উভয় নেতাই ইতালিতে এক লাখ ৪০ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের অবস্থানের কথা স্মরণ করেন, যাদের বেশির ভাগই ইতালীয় সামাজিক কাঠামোয় সুসংহত।
বর্তমান সময়ে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক কূটনীতি দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখে। বাংলাদেশ ও ইতালির পারস্পরিক সম্পর্ক সেদিক থেকে আরো দৃঢ় হবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।