ভারতের লোকসভায় কংগ্রেস-বিজেপি হাতাহাতি, ধস্তাধস্তি

12

কাজিরবাজার ডেস্ক :
একটি নির্বাচনী প্রচারে কংগ্রেসের নেতা রাহুল গান্ধীর একটি মন্তব্যকে কেন্দ্র করে ভারতের লোকসভায় তুলকালাম ঘটে গেছে। হয়েছে হাতাহাতি আর ধস্তাধ্বস্তি। সরকার ও বিরোধী দলের এমপিদের এই মারামারির ঘটনায় মুলতবি করা হয়েছে সংসদ।
শুক্রবার স্পিকার ওম বিড়লার সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশন চলাকালে এই অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। একে-অন্যের বিরুদ্ধে আক্রমণ, বাগ-বিতণ্ডায়, হাতাহাতি মিলিয়ে শুক্রবার নজিরবিহীন পরিস্থিতির সাক্ষী থাকল লোকসভার অধিবেশন কক্ষ।
জানা যায়, সম্প্রতি দিল্লির বিধানসভা ভোটের প্রচারে গিয়ে রাহুল গান্ধী মন্তব্য করেন, প্রধানমন্ত্রী মোদীকে ‘ডান্ডাপেটা করবে বেকার যুবসমাজ ’। তিনি সেদিন হিন্দিতে বলেছিলেন, ‘ছ মাস পর দেশের যুবসমাজ নরেন্দ্র মোদীকে ডান্ডা মেরে মেরে দেশছাড়া করবেন।’ সেই মন্তব্যের জন্য লোকসভায় নিন্দা প্রস্তাব পাস করার দাবি করেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন।
তার পরেই কংগ্রেস সাংসদরা ওয়েলে নেমে স্পিকারের সামনে গিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। বিজেপির সাংসদরাও পাল্টা হট্টগোল শুরু করেন। দফায় দফায় এই পরিস্থিতির জেরে বাধ্য হয়ে দিনের মতো অধিবেশন মুলতবি করেন স্পিকার।
শুক্রবার অধিবেশনে দেশের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ নিয়ে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন করেন রাহুল। জবাব দিতে ওঠেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন। কিন্তু তিনি ওয়েনাডের সাংসদের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে রাহুলের ওই বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে আনেন।
স্পিকারকে হর্ষ বর্ধন বলেন, ১ আমাকে ক্ষমা করবেন। রাহুল গান্ধীর প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগে আমি তার নিন্দা করতে চাই। দেশের প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে যে ধরনের ভাষা ব্যবহার করেছেন, তার তীব্র নিন্দা করছি।’
স্পিকার ওম বিড়লা হর্ষ বর্ধনকে ওই প্রসঙ্গ ছেড়ে রাহুলের প্রশ্নের উত্তর দিতে বলেন। কিন্তু স্বাস্থ্যমন্ত্রী তাতেও থামেননি।
তার পরেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন কংগ্রেস সাংসদরা। স্পিকারের চেয়ারের সামনে গিয়ে তুমুল হই হট্টগোল-বিক্ষোভ শুরু করেন। হর্ষ বর্ধনের বিরুদ্ধে চলতে থাকে স্লোগান। তার মধ্যেই তামিলনাড়–র কংগ্রেস সাংসদ মানিকম ঠাকুর শাসক দলের বেঞ্চের দিকে এগিয়ে যান। দ্বিতীয় সারিতে বক্তব্য রাখছিলেন হর্ষ বর্ধন। সামনের সারি টপকে তার কাছে গিয়ে শাসাতে থাকেন। তখন বিজেপি সাংসদরা তাকে টেনে-হিঁচড়ে নামিয়ে আনেন।
আর গোটা এই হই হট্টগোলের মধ্যেও হর্ষ বর্ধন রাহুলের ওই মন্তব্য নিয়ে বলতে থাকেন। রাহুলের এই মন্তব্যের জন্য অধিবেশনের নিন্দা করা উচিত বলে দাবি করতে থাকেন। তিনি বলেন, ‘ওর বাবাও প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। কিন্তু আমাদের দলের কোনো নেতা কখনো এই ধরনের খারাপ ভাষা ব্যবহার করেননি।’
পাল্টা কংগ্রেস সাংদদের হইচইও চলতে থাকে। পরিস্থিতি কার্যত হাতের বাইরে চলে যাওয়ায় অধিবেশন মুলতবি করে দেন স্পিকার।
পরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেন, ‘কংগ্রেস সাংসদরা আমাকে আক্রমণ করার চেষ্টা করেন এবং হাত থেকে নথিপত্র কেড়ে নেন।’ যদিও সেই অভিযোগ উড়িয়ে পাল্টা শাসক দলের সাংদদের বিরুদ্ধেই বিশৃংখলা সৃষ্টির অভিযোগ তুলেছেন কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুর।
রাহুল গান্ধী পরে সংসদের বাইরে বলেন, ‘সংসদের বাইরে আমি কোনো মন্তব্য করেছি। সেটা টেনে এনে অধিবেশনের মধ্যে মন্তব্য করা অসংসদীয়। আসলে বিজেপি আসল সমস্যা থেকে নজর ঘোরাতে চাইছে। আমার উত্তরও দিতে পারেননি স্বাস্থ্যমন্ত্রী।’