ভাষার মাসে ভাষাসৈনিক মু. আব্দুর রহিম এর ইন্তেকাল

17

আল-হেলাল সুনামগঞ্জ থেকে :
ভাষাসৈনিক প্রবীণ শিক্ষক,সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ও বিশিষ্ট লেখক মু. আব্দুর রহিম আর নেই, (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। শতবর্ষী এই সর্বজন শ্রদ্ধেয় শিক্ষক বার্ধক্যজনিত রোগে শনিবার সকালে ষোলঘরস্থ নিজ বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তিনি ৪ ছেলে ৩ কন্যা ও স্ত্রীসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী আত্মীয় স্বজন রেখে গেছেন। তাঁর মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন বিভিন্ন মহল। মুহম্মদ আব্দুর রহিম শিক্ষকতার পাশাপাশি নিয়মিত লেখালেখি করতেন। নানা বিষয়ে তাঁর একাধিক গ্রন্থ রয়েছে। একজন নির্মোহ, নির্লোভ ও আদর্শবান শিক্ষকের পথিকৃৎ ছিলেন তিনি। তিনি সুনামগঞ্জ সদরের আলমপুর গ্রামের সম্ম্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫৩ সনে তিনি সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতায় যোগ দেন। ১৯৮৫ সনে অবসরে যান। তিনি একজন ভাষাসৈনিকও। আবদুর রহীম ১৯২৬ সালে সুনামগঞ্জ জেলার সদর থানার কুরবাননগর ইউনিয়নের অন্তর্গত আলমপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মরহুম আলহাজ্ব ইবরাহীম আলী মুনশী ছিলেন এলাকার বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন ও মরমী গানের গীতিকার। তাঁর মাতা মরহুমা মালিকা বানু ছিলেন অত্যন্ত ধর্মপ্রাণ মহিলা। তিনি ১৯৫১ সালে সিলেটের এম.সি কলেজ থেকে বি, এ পাস করেন। কর্মজীবনে তিনি ছিলেন সুনামগঞ্জ সরকারী জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়ের নিবেদিত প্রাণ শিক্ষক। ব্রিটিশ আমলের শেষ দশক থেকে সুনামগঞ্জের সাহিত্য ও সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে তাঁর সক্রিয় পদচারণা ছিল উল্লেখযোগ্য। তাঁর রচিত গল্প, প্রবন্ধ ও কবিতা বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
একজন ভাষা সৈনিক হিসেবে ২০০২ সালে সিলেটে, গুণীজন হিসেবে একই বছরে আলমপুর সমাজকল্যাণ সংস্থা সুনামগঞ্জ, প্রবীণ শিক্ষক হিসেবে ২০০৩ সালে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন,ভাষা সৈনিক হিসেবে ২০০৫ সালে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ সুনামগঞ্জ জেলা শাখা, সম্মানিত জীবন সদস্য হিসেবে ২০০৫ সালে কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ সিলেট, একই বছরে সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য (ব্রিটিশ সুনামগঞ্জ এডুকেশন্যাল প্রমোশন) বিসেফ, বিশিষ্ট কবি ও ভাষা সৈনিক হিসেবে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সুনামগঞ্জ জেলা শাখা, ২০০৮ সালে প্রবীণ শিক্ষক ও সাহিত্যিক হিসেবে আলী ফরিদ ফাউন্ডেশন সুনামগঞ্জ, সাহিত্যে অবদানের জন্যে ২০০৯ সালের ১৬ জানুয়ারি রাগীব-রাবেয়া ফাউন্ডেশন সিলেট ও সিলেট লেখক ক্লাবের ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে ২০০৯ সালের ১৬ জানুয়ারি তাকে সংবর্ধনাসহ সম্মাননা প্রদান করা হয়। রাগীব-রাবেয়া ফাউন্ডেশন, সিলেট কর্তৃক ২০১১ সালে ২১শে সম্মাননা ও ২০১২ সালে তিনি জাতীয় দৈনিক কালের কণ্ঠের শিক্ষক সম্মাননা পেয়েছিলেন। মু. আব্দুর রহিম মরহুমের ১ম নামাজে জানাযা শনিবার বাদ জোহর আলমপুরে এবং ২য় জানাযার নামায বাদ আসর ষোলঘর কলোনী স্টেডিয়াম মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। এতে হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মুসলমান সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহন করেন। মরহুমের নামাজে যানাজায় বিশিষ্ট লেখক সাহিত্যিক এডভোকেট আবু আলী সাজ্জাদ হোসাইন,বিশিষ্ট লেখক কলামিস্ট এডভোকেট হোসেন তওফিক চৌধুরী, জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি এডভোকেট খায়রুল কবির রুমেন, সাবেক সিভিল সার্জন ডাঃ মুনাওর আলী, কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ সেক্রেটারী নুরুর রব চৌধুরী,জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট শেরে নুর আলী, আওয়ামীলীগ নেতা জুনেদ আহমদ, সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান এডভোকেট আবুল হোসেন, কুরবাননগর ইউপি চেয়ারম্যান আবুল বরকত, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আকবর আলী, সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নুরুল, সদর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সেলিম উদ্দিন আহমদ, বিএনপি নেতা নাদের আহমদ, ছাতক পৌরসভার মেয়র আবুল কালাম চৌধুরী, আওয়ামীলীগ নেতা শামীম আহমদ চৌধুরী,আলহেরা জামেয়া মাদ্রাসা সুপার আবুল কালাম, সহ-সুপার তোফায়েল আহমদ খান, দারুল হুদা দাখিল মাদ্রাসার সুপার মাওলানা আনোয়ার হোসেন, দ্বীনি সিনিয়র মাদ্রাসার শিক্ষক মোমতাজুল হাসান আবেদ, মতিউর রহমান ও লেখক সিরাজুল হক ওলিসহ জেলার বিভিন্ন শ্রেণীপেশার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ছাড়াও হাজার হাজার সাবেক শিক্ষার্থীবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন। তারা মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা ও তার শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান।