৪৭ বছর পর ওসমানী হাসপাতালে পিতাকে ফিরে পেল তার পরিবার

21

স্টাফ রিপোর্টার :
নিখোঁজের ৪৭ বছর পর পিতাকে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে ফিরে পেয়েছে তার পরিববার। এই ৪৭ বছর তিনি মাজারে মাজারে এবং শেষে এক মহিলার সেবাযত্নে ছিলেন। ১৯৭২ সালের প্রথম দিকে ৩১ বছর বয়সে তিনি বাড়ি থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে বের হন ব্যবসায়িক কাজে। এরপর থেকে তিনি আর বাড়ীতে ফিরে আসেননি। পরিবারের লোকজন হন্য হয়ে খোঁজছিলেন। তারা অনেকটা আশা ছেড়েই দিয়েছিলন।
কিন্তু ভাগ্য বলে কথা! ফেসবুকের বদৌলতে তিনি ৭৮ বছর বয়সে ফিরে এলেন আপন জনের কাছে। ছেলে সন্তানরা ফিরে পেয়েছে তাদের হারানো বাবকে। তিনি মো. হাবিবুর রহমান (৭৮)। বাড়ী সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার মাথিউরা ইউনিয়নের বেজগ্রামের বাসিন্দা। বর্তমানে তার পরিবারের লোকজন বিয়ানীবাজারের পৌর এলাকার কসবা গ্রামে বসবাস করছেন।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, হাবিবুর রহমান রড সিমেন্টের ব্যবসা করতেন। ১৯৭২ সালের প্রথম দিকে তিনি বাড়ি থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে বের হন ব্যবসায়িক কাজে। কিন্তু এরপর তিনি আর বাড়িতে ফেরেননি। পরিবারের লোকজন অনেক খোঁজার পর তার সন্ধান না পেয়ে হতাশায় কেটেছেন প্রায় অর্ধশত বছর। হাবিবুর রহমানের ৪ ছেলের মধ্যে ২ জন থাকেন লন্ডনে। ছেলেরা বাবাকে ফিরে পাবার আশায় বিভিন্নভাবে খোঁজতে ছিলেন। অবশেষে ফেসবুকে এক ভিডিও ভাইরালের মাধ্যমে শুক্রবার বিকেলে হাবিবুর রহমানকে ফিরে পেয়ে আবেগ-আপ্লুত ছেলে সন্তানরা।
জানা গেছে, প্রায় ২৫ বছর থেকে হাবিবুর রহমান মৌলভীবাজারের শাহাবুদ্দিন মাজার এলাকায় বসবাস করতেন। মানষিকভাবে তিনি অনেকটা ভারসাম্যহীন ছিলেন। আর ১২ বছর থেকে মৌলভীবাজারের শাহাবুদ্দিন মাজারের পাশের রায়েশ্রী গ্রামের রাজিয়া বেগম নামের (৫০) এক মহিলা বৃদ্ধ হাবিবুর রহমানকে দেখাশোনা করতেন। রাজিয়া জানান, তিনি ওই লোকের খেদমত করতেন সবসময়। ২২ দিন আগে বৃদ্ধ হাবিবুর রহমানের হাত ভেঙ্গে যায়। প্রথমে তাকে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে যান রাজিয়া বেগম। পরে সেখান থেকে সিলেট এম এ জি ওসমানী হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। ১২ বছর থেকে যে মানুষের খেদমত করে আসছেন রাজিয়া, তার এই বয়সে হাসপাতালে কিভাবে ফেলে যাবেন, কিংবা একা একা কিভাবে দেখাশুনা করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না। পাশের বেডের রোগীর স্বজনদের সাথে গল্প করছিলেন রাজিয়া, এই বৃদ্ধের বিগত দিনের জীবন নিয়ে। তাদের বাড়ীও ছিল বিয়ানীবাজার উপজেলায়। ওই ব্যক্তি হাবিবুর রহমানের একটি ভিডিও ফেসবুকে আপলোড করেন। ওই ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হতে থাকে। ভিডিওতে দেয়া হাবিবুর রহমানের ছবি এবং জীবনের অনেক গল্পের মিল দেখে আমেরিকা থেকে বিয়ানীবাজারের এক ব্যক্তি ওই ভিডিও হাবিবুর রহমানের পরিবারের কাছে পাঠান গত বৃহস্পতিবার রাতে। হাবিবুর রহমানের ছবি এবং ভিডিওর মিল দেখে তার ছেলেরা শুক্রবার দিনে চলে আসেন সিলেট ওসমানী হাসপাতালে। তার ২ ছেলে শাহাব উদ্দিন ও জালাল উদ্দিন কথাবার্তা বলে চিনতে পারেন তাদের হারানো বাবাকে। হাবিবুর রহমান তিনিও তার বাড়ীর ঠিকানা বলেন তখন। বাবাকে পেয়ে আবেগঘন এক পরিবেশের সৃষ্টি হয়। তারা ওসমানী হাসপাতাল থেকে বাবাকে নিয়ে আসেন নগরীর আল-হারামাইন হাসপাতালে। ভর্তি করানো হয় ৬১২ নাম্বার কক্ষে। সাথে নিয়ে আসা হয় বাবাকে খেদমত করা রাজিয়া বেগমকেও। তাকেও হাবিবুর রহমানের সন্তানরা চিকিৎসা করাচ্ছেন। বাবার সাথে আদর যত্ন করছেন রাজিয়া বেগমকেও। হাবিবুর রহমানের নাতী কেফায়েত হোসেন দাদাকে পেয়ে অত্যন্ত খুশি। তিনি জানান, ছোট কাল থেকে দাদার গল্প শুনছিলেন বাবা চাচাদের কাছ থেকে। মনে আশা ছিল দাদাকে একদিন ফিরে পাবে তারা। দাদাকে ফিরে পেয়ে তিনি ধন্যবাদ জানান, রাজিয়া বেগমকে। তিনি কৃতজ্ঞতা জানান যে ব্যক্তি ফেসবুকে ওই ভিডিও আপলোড করেছেন তার প্রতিও।