বারো ঘন্টা অবরুদ্ধ থাকার পর মুক্ত সিকৃবি ভিসি

2
১২ ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার পর মুক্ত হন ভিসি।

সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মচারী নিয়োগকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদের চলমান কর্মবিরতি ও আন্দোলনে বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় অবরুদ্ধ করে রাখা হয় সিকৃবি ভিসি ড. মতিয়ার রহমান হাওলাদারকে। আন্দোলনকারী কর্মচারী ও ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দের সাথে কয়েক দফা দেখা করে রাত সাড়ে ১২টায় কর্মচারী নিয়োগের লিখিত পরিক্ষা স্থগিত করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এছাড়া কর্মচারীদের উত্তাপিত দাবীগুলো পর্যায়ক্রমে মেনে নেয়ার আশ্বাস দেন তারা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষে আন্দোলনকারীদের এসব কথা জানান রেজিষ্ট্রার বদরুল ইসলাম শোয়েব। এরপর টানা ১২ ঘন্টা অবরুদ্ধ করে রাখার পর উপাচার্য সহ অন্যান্য শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের প্রশাসনিক ভবন থেকে বের হওয়ার সুযোগ দেন আন্দোলনকারীরা। ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ জানান, নিয়োগ প্রার্থীদের যাতে হয়রানি করা না হয় মোবাইলে মেসেজের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়ার জন্য প্রশাসনকে অনুরোধ করেছেন তারা। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ প্রকাশনা দপ্তরের পক্ষ থেকে জানানো হয় ১০ জানুয়ারি ও ১১ জানুয়ারি নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার সকাল ৯ টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে মিছিল নিয়ে প্রশাসনিক ভবন ঘেরাও করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী পরিষদ ও শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
গত বছর ১৮ জুন প্রকাশিত ৯৩ জন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ১০ জানুয়ারি লিখিত পরিক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী পরিষদ কর্মচারীদের পর্যায়োন্নয়ন নীতিমালা অতিদ্রুত সংশোধন, অভ্যন্তরীণ প্রার্থীদের অতিসত্বর কার্ড ইস্যু করা, শিক্ষাগত যোগ্যতার ভিত্তিতে কর্মচারীদের উচ্চতর পদে প্রমোশনের জন্য অতিসত্বর ইমিগ্রেশন কমিটি গঠন, হাউজ লোন দ্রুত বাস্তবায়ন করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা, কর্মচারীদের পোশাক ভাতা দ্রুত বাস্তবায়ন ও কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে লিখিত পরিক্ষা চালু করলে পরবর্তী সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল নিয়োগের ক্ষেত্রে পরিক্ষা চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশাসন বরাবর দাবী জানান কর্মচারী পরিষদের নেতৃবৃন্দ। প্রশাসনের কাছ থেকে আশানুরূপ সাড়া না পেয়ে বৃহস্পতিবার কর্মবিরতি ও আন্দোলনে নামেন তারা। গত ৬ তারিখে কর্মচারী পরিষদের সভাপতি মোঃ ছানারুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক নূরে আলম অন্যান্যদের নিয়ে সভায় এ সিদ্ধান্ত নেন। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ কর্মচারীদের আন্দোলনে সমর্থন জানিয়ে তাদের পক্ষ থেকে প্রশাসনের কাছে পৃথক দাবী জানান। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীবৃন্দ জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীদের ন্যায্য আন্দোলনে ছাত্রলীগ সমর্থন জানাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীরা কেন শোষণের শিকার হবে এ বিষয়ে প্রশাসনের কাছে প্রশ্ন তোলেন তারা। ১৯৪৯ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্মচারীদের যৌক্তিক আন্দোলনে সমর্থন দিয়েছিলেন। একই আদর্শ লালন করে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ কর্মচারীদের যৌক্তিক আন্দোলনে সমর্থন জানিয়েছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ডাঃ শামীম মোল্লা কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ প্রার্থী হয়ে ভাইবা দিলেও সিন্ডিকেটে তার চাকুরী বাতিল হয়। অন্যদের চাকুরী হওয়া স্বত্তেও তার চাকুরী কেন বাতিল হয় এবিষয়ে প্রশাসনের কাছে জবাব চান তারা। ২০২০ সালে মুজিববর্ষ সারা বাংলাদেশে উদযাপন করার পরিকল্পনা থাকলেও ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের কোন কর্মসূচী না নিয়ে কেন নিয়োগের লিখিত পরিক্ষা ঐদিন ঠিক করা হলো এবিষয়ে প্রক্টর সোহেল মিয়া ও ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক ড. মিঠু চৌধুরীর কাছে জানতে চেয়ে আশানুরূপ উত্তর পাননি ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। এজন্য প্রক্টর কার্যালয় ও ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরে তালা ঝুলিয়ে দুইজনের পদত্যাগ দাবী করেন তারা। এবিষয়ে দুপুর সাড়ে ১২ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন প্রাঙ্গনে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলতে আসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিষ্ট্রার বদরুল ইসলাম শোয়েব, ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক ড. মিঠু চৌধুরী, প্রক্টর সোহেল মিয়া, গণতান্ত্রিক শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ড. মাহফুজুর রহমান। এসময় তারা প্রশাসনের অবস্থান ব্যাখা করে আন্দোলনরতদের শান্ত করতে ব্যর্থ হয়ে ফিরে যান। তখন উপাচার্য, প্রক্টর, রেজিষ্ট্রার ও অন্যান্য শিক্ষক কর্মকর্তাদের আটকে রেখে প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলান আন্দোলনকারীরা। বিজ্ঞপ্তি