কনকনে ঠান্ডায় কাঁপবে দেশ, জানুয়ারিতে আরও দুটি শৈত্যপ্রবাহ

20

কাজিরবাজার ডেস্ক :
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডাঃ এনামুর রহমান বলেছেন, শৈত্যপ্রবাহের কারণে একটি মানুষও যাতে শীতে কষ্ট না পায় সে জন্য সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে আজ (শুক্রবার) থেকে দেশের শীত প্রধান এলাকা সফরে যাচ্ছেন প্রতিমন্ত্রী ও সিনিয়র সচিব। বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে শৈত্যপ্রবাহ ও সরকারের প্রস্তুতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব বলেন। এদিকে সংবাদ সম্মেলনে আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ বলেছেন, চলতি জানুয়ারিতে আরও দুই/তিনটি শৈত্যপ্রবাহ হতে পারে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, কেউ যাতে শীতে কষ্ট না পায় সে জন্য পোশাক ও খাদ্য বিতরণের কর্মসূচী হাতে নিয়েছি। দরিদ্র ও অতিদরিদ্র মানুষ শীতে বেশি কষ্ট পায়, তাদের মধ্যে বিতরণের জন্য এগুলো বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। অনেক জায়গায় বিতরণও শুরু হয়েছে। বিতরণ চলতেই থাকবে যাতে একটি মানুষও শীতে কষ্ট না পায়। এই সতর্কতা আমরা নিয়েছি। তিনি বলেন, এ ছাড়া আমাদের অর্থ, কম্বল ও শুকনো খাবারের মজুদ আছে, রয়েছে জরুরী প্রয়োজন মেটানোর সক্ষমতাও।
এনামুর রহমান বলেন, গত মাসের মাঝামাঝি থেকে সারা দেশে তীব্র শীত জেঁকে বসে। অক্টোবরে শীতের পূর্বাভাস পাওয়ার পর প্রত্যেক জেলায় শীতবস্ত্র পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের চাহিদা মোতাবেক শীতবস্ত্র সরবরাহ করেছি। ত্রাণ মন্ত্রণালয় ৬৪ জেলায় ৭ লাখ ২১ হাজার ৮০০ পিস কম্বল বরাদ্দ দিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ভা-ার থেকে ৬৪ জেলার জন্য ২৪ লাখ ৬৯ হাজার ১০০ পিস কম্বল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। শীত ও শৈত্যপ্রবাহ শুরুর পর শীতার্ত মানুষের জন্য শীতবস্ত্র কিনতে রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, নীলফামারী, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, যশোর, মাগুরা, নড়াইল, ফরিদপুর ও গোপালগঞ্জে এক কোটি ৬৮ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, শিশুদের শীতবস্ত্র কেনার জন্য মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, নীলফামারী, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, কুষ্টিয়া, যশোর, মাগুরা, নড়াইল, রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, সুনামগঞ্জ- এই ২০ জেলায় ৫৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। শিশুদের খাবার কিনতে এই ২০ জেলায় ২১ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
রংপুর বিভাগের রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, নীলফামারী, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও এবং পঞ্চগড় জেলার প্রতিটিতে ২ হাজার করে মোট ১৬ হাজার শুকনো ও অন্যান্য খাবারের কার্টন বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
আজ থেকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের কর্মকর্তারা উত্তরাঞ্চল থেকে সফর শুরু করে শীতার্ত মানুষের পরিস্থিতি দেখবেন এবং শীতবস্ত্র বিতরণ করবেন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে আগামী ১১ জানুয়ারি উত্তরাঞ্চল সফরের আয়োজন করা হয়েছে। এ সময় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব শাহ কামাল, অধিদফতরের মহাপরিচালক মহসীন সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
জানুয়ারিতে আরও দুটি শৈত্যপ্রবাহ
চলতি জানুয়ারিতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আরও দুটি তীব্র এবং একটি মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আবহাওয়া অধিদফতরের পূর্বাভাস রয়েছে, বছরের প্রথম মাসের প্রথমার্ধেই দেশের অনেক স্থানে বৃষ্টি হবে। বুধবার ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগ ছাড়া দেশের সব স্থানেই হাল্কা থেকে মাঝারি বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। আজ শুক্রবার বৃষ্টি আরও বাড়বে। আগামী ৬ জানুয়ারিতে থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ও রাতের তাপমাত্রা আরও কমে যাবে। তিনি বলেন, জানুয়ারিতে আরও দুটি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। এছাড়া একটি মাঝারি শৈত্যপ্রবাহও বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।
সামছুদ্দিন আহমেদ বলেন, শৈত্যপ্রবাহ চলাকালে বিভিন্ন স্থানে কনকনে শীত অনুভূত হবে। ৩, ৪ ও ৫ জানুয়ারি বৃষ্টিপাত হবে। বৃষ্টিপাত হওয়ার পর দেশের বিভিন্নস্থানে তাপমাত্রা ধীরে ধীরে কমতে শুরু করবে। শৈত্যপ্রবাহ বিরাজমান থাকবে। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে শীতের তীব্রতা বেশি অনুভূত হবে। রাতের তাপমাত্রা বা সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৬ ডিগ্রী সেলসিয়াসের নিচে নেমে গেলে তাকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বলে। আর ৬ থেকে ৮ ডিগ্রীর মধ্যে থাকলে হবে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ, ৮ থেকে ১০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ।
এসব শৈত্যপ্রবাহ কখন কখন আসবে- জানতে চাইলে পরিচালক বলেন, ৬ জানুয়ারির পর এ শৈত্যপ্রবাহ শুরু হবে। জানুয়ারির প্রথমদিকে সপ্তাহের শেষ দিকে একটি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ হতে পারে, মাঝামাঝি সময়ে একটি মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বইতে পারে।
রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ বিভাগ, ঢাকা বিভাগের কিছু অংশ, সিলেট ও সুনামগঞ্জ অঞ্চলে শীতের তীব্রতাটা বেশি থাকবে। পাশাপাশি পার্বত্য চট্টগ্রামের আরেকটি অঞ্চল বাঘাইছড়ি ও আশপাশের এলাকায় শীতের তীব্রতা থাকবে। ঢাকা থেকে দক্ষিণাঞ্চলের দিকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ থাকবে।
তিনি বলেন, ডিসেম্বরে শেষের দিকে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা তেঁতুলিয়ায় ৪ দশমিক ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসে নেমেছিল। সেখানেও একই ধরনের অবস্থা বিরাজ করবে।
এবার তীব্র শৈত্যপ্রবাহের সময় তাপমাত্রা ৪ দশমিক ৫ ডিগ্রীর নিচে নামবে কিনা-জানতে চাইলে তিনি বলেন, গত বছর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ডে ছিল ২ দশমিক ৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এখানে ঠিক সুনির্দিষ্টভাবে কত ডিগ্রী হবে, এ মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। আরও সপ্তাহখানেক পরে বলা যাবে।
আবহাওয়া বিভাগের পরিচালক বলেন, ডিসেম্বরের শেষদিকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যায়। তাপমাত্রা নেমে যাওয়ার পাশাপাশি সূর্যের আলো কম থাকায় শীতের তীব্রতা প্রচ- ছিল। তাপমাত্রার মাপকাঠিকে হয়ত মৃদু শৈত্যপ্রবাহ ছিল ৮ থেকে ১০ ডিগ্রী, কিন্তু সূর্য ঢেকে থাকায় কোথাও কোথাও কনকনে হিমেল হাওয়ায় শীতের তীব্রতা সারাদেশেই প্রবলভাবে অনুভূত হয়।