আর মাত্র একদিন বাকি ॥ মালয়েশিয়া থেকে ফিরতে হচ্ছে অবৈধ ৩৬ হাজার বাংলাদেশীকে

9

কাজিরবাজার ডেস্ক :
আর মাত্র তিনদিন বাকি। ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে মালয়েশিয়ায় সাধারণ ক্ষমা ‘ব্যাক ফর গুড’ কর্মসূচীর আওতায় ৩৬ হাজার অবৈধ বাংলাদেশী কর্মীকে দেশে ফিরতে হবে। তারা দেশে ফেরার জন্য ইতোমধ্যে ‘আউট পাস’ সংগ্রহ করে বসে আছেন। কিন্তু এয়ারলাইন্সের টিকিট সঙ্কটে দেশে ফিরতে তাদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। টিকিট পাওয়া গেলেও দাম দুই থেকে তিনগুণ বেশি হওয়ায় বহু কর্মী টিকিট সংগ্রহ করতে পারেনি। বাংলাদেশ বিমান এসব কর্মীকে দেশে আনতে অতিরিক্ত ১৬ ফ্লাইট পরিচালনা করছে। এরপরও যথা সময়ে বহু কর্মী দেশে ফিরতে পারবে না বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, মালয়েশিয়ায় সাধারণ ক্ষমার আওতায় বিপুলসংখ্যক অবৈধ কর্মী দেশে ফেরার জন্য ইমিগ্রেশন অফিসে ভিড় করছেন। প্রতিদিন বিভিন্ন দেশের কর্মীদের আশিটির বেশি ইমিগ্রেশন বুথ থেকে ‘আউট পাস ইস্যু’ করা হচ্ছে। প্রতিটি অফিস থেকে গড়ে চার শ’ জনের বেশি কর্মী আউট পাস সংগ্রহ করছেন। ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে অবৈধ কর্মীদের দেশে ফিরতে হবে। কর্তৃপক্ষ গত ১ আগস্ট থেকে চালু হওয়া ‘ব্যাক ফর গুড’ কর্মসূচীর সুবিধা চালু করেছে। কর্মীদের দেশে ফিরতে গত সপ্তাহে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রণালয়ের কাছে অতিরিক্ত ফ্লাইট পরিচালনার অনুরোধ জানিয়েছিল। বিমান মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে ১৬ অতিরিক্ত ফ্লাইট পরিচালনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানায়।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব সেলিম রেজা জনকণ্ঠকে বলেন, মালয়েশিয়া সরকারের ‘ব্যাক ফর গুড’ কর্মসূচীর আওতায় অবৈধ বাংলাদেশী কর্মীরা দেশে ফিরতে শুরু করেছেন। কিন্ত সে দেশেও সব এয়ারলাইন্সের টিকিটের চরম সঙ্কট চলছে। এ কারণে বিপুলসংখ্যক কর্মী দেশে ফিরিয়ে আনতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় বিমান মন্ত্রণালয়কে কয়েকদিন আগে অনুরোধ জানিয়েছিল। বিমান মন্ত্রণালয় প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে ডিসেম্বরের শেষ দিকে অতিরিক্ত ১৬ ফ্লাইট পরিচালনায় রাজি হয়। মালয়েশিয়া সরকার অবৈধ কর্মীদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করার পর ইমিগ্রেশন বিভাগ এই কর্মসূচীর নাম দিয়েছে ‘ব্যাক ফর গুড’। সাধারণ ক্ষমার আওতায় অবৈধ কর্মীরা সহজেই দেশে ফিরতে পারবেন।
সূত্র জানায়, মালয়েশিয়া সরকার কর্মসূচীটি ঘোষণার পরই ৩২ হাজারের বেশি অবৈধ বাংলাদেশী কর্মী দেশে ফেরার অনুমোদন পায়। কর্মসূচী সফল করার জন্য মালয়েশিয়া ইমিগ্রেশন বিভাগের মহাপরিচালক দাতো ইন্দিরা খায়রুল দাজাইমি দাউদের সঙ্গে বাংলাদেশের হাইকমিশনার শহীদুল ইসলাম কয়েক দফা বৈঠক করেন। ওসব বৈঠকে অবৈধ কর্মীদের নিয়ে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত হয়েছে। কর্মসূচীর আওতায় কর্মীরা স্বেচ্ছায় দেশে ফিরতে গিয়ে বিমানের টিকিট পাচ্ছে না। পেলেও তার জন্য তিনগুণ বেশি ভাড়া গুনতে হচ্ছে। তবে ফিলিপিন্স, ইন্দোনেশিয়া ও বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ফ্লাইটে বিশেষ ছাড় দেয়া হয়েছে। ইন্দোনেশিয়া মালয়েশিয়ার প্রতিবেশী দেশ হওয়ায় আকাশপথের পাশাপাশি সাগর পথেও সে দেশের কর্মীরা দেশে ফিরে যাচ্ছে। যেসব কর্মীর ট্রাভেল পারমিট আছে বাংলাদেশ সরকার টিকেটপ্রতি ১২ হাজার বাংলাদেশী টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে।
মালয়েশিয়া থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, ব্যাক ফর গুড কর্মসূচী সফল করার জন্য সে দেশের ইমিগ্রেশন প্রধান দাতো খায়রুল দাজাইমি বলেন, এই কর্মসূচীর আওতায় ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩৬ হাজারের বেশি অবৈধ কর্মী আবেদন করেছেন। মালয়েশিয়ার সরকার সে দেশে বসবাসরত অবৈধ বাংলাদেশী কর্মীদের দেশে ফিরে আসার সুযোগ দেয়ার পর দেশটি থেকে বিপুলসংখ্যক কর্মী দেশে ফিরতে শুরু করেছে। কিন্তু সেখানে টিকিট সঙ্কট থাকায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সকে অনুরোধ জানানো হয়। তারা বাড়তি ফ্লাইট পরিচালনা করে অবৈধ কর্মীদের দেশে ফিরিয়ে আনবে। যদি কোন কর্মী দেশে ফিরতে না পারেন, তবে তাকে জেল জরিমানায় পড়তে হবে।
সূত্র জানায়, মালয়েশিয়ায় ১৫ দেশের কর্মী কাজ করে আসছেন। প্রায় সব দেশেরই অবৈধ কর্মী রয়েছে। কর্মসূচী শুধু বাংলাদেশের জন্যই প্রযোজ্য নয়। দেশে ফিরতে প্রত্যাশীরা সকাল আটটায় কাউন্টার খোলার আগে মধ্য রাতের প্রথম দিকে বা তার আগে থেকে বিভিন্ন দেশের অভিবাসীরা লাইনে দাঁড়িয়ে দীর্ঘ অপেক্ষায় রয়েছেন।
২০ হাজার বাংলাদেশীকে ফেরত পাঠিয়েছে সৌদি আরব : সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর গত ৮ মাসে সৌদি কর্তৃপক্ষ ২০ হাজারের বেশি বাংলাদেশীকে ফেরত পাঠিয়েছে। গত কয়েক বছরের মধ্যে এবারই সবচেয়ে বেশি কর্মীকে আটক করে সৌদি কর্তৃপক্ষ দেশে ফেরত পাঠাল।
সৌদি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ২ লাখের বেশি কর্মী অবৈধ হয়ে পড়ায় তাদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশী কর্মী সৌদি আরবে কাজ করেন। সরকারী হিসাব মতে সৌদিতে প্রায় ২৬ লাখ কর্মী কর্মরত রয়েছেন। এত বিপুলসংখ্যক কর্মীর মধ্যে অবৈধ কর্মীর সংখ্যাও কম নয়। সৌদিতে প্রতিদিনই নতুন কর্মী নিয়োগ হচ্ছে। আবার চাকরির মেয়াদ শেষ করে অনেকে দেশে ফিরেও আসছেন। এর আগেও সৌদি কর্তৃপক্ষ সোর্স কান্ট্রিগুলোর অবৈধ কর্মীদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছিল। ঘোষণা অনুযায়ী ২৯ মার্চ থেকে এপ্রিলের মধ্যে বিভিন্ন দেশের অবৈধ কর্মীদের দেশে ফেরার সুযোগ দেয়া হয়।
সৌদিতে বাংলাদেশ দূতাবাস জানিয়েছে, বাংলাদেশের ২ লাখের বেশি কর্মীকে দেশে নাও ফিরতে হতে পারে। কারণ অনেক কর্মী আকামা বা চাকরির সময় বাড়ানোর আবেদন করে রেখেছেন। তাদের হয়তো শেষ পর্যন্ত বৈধ করে নেয়া হবে। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সৌদি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ আলোচনা চলছে। যাদের অল্পদিন আগে চাকরির সময় শেষ হয়েছে-তাদের যেন আরও একবার চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সুযোগ দেয়া হয়। সৌদি কর্তৃপক্ষ যদিও এখন পর্যন্ত ইতিবাচক সাড়া দেয়নি। বাংলাদেশ আশা করছে, বেশ কিছু কর্মীকে বৈধ করে নিতে পারে সৌদি আরব।
অন্যদিকে, যারা হজ, ওমরাহ, ট্রানজিট ভিসায় সৌদি আরবে গিয়ে কোন কারণে অবৈধ হয়ে পড়েন তাদের জন্য এক্সিট ভিসা দেয়া হবে। তাদের যদি ইমিগ্রেশনে ও পাসপোর্ট অধিদফতরে যদি তাদের ফিঙ্গার প্রিন্ট মিলে যায়, কিন্ত অন্য কোন কাগজপত্র না থাকে এমন প্রবাসীরাও দূতাবাস থেকে আউটপাস সংগ্রহ করে দেশে ফিরেছেন।