বনাঞ্চল রক্ষা করুন

31

লাউয়াছড়ায় শতবর্ষী ছয় হাজার গাছ কেটে ফেলার চক্রান্ততা চরম হতাশাজনক। যাদের হাতে বন রক্ষাসহ বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণের দায়িত্ব অর্পিত, তারা কী করে এই আত্মঘাতী কাজের সঙ্গে জড়িত হতে পারে, তা আমাদের চিন্তায় আসে না। এ চিত্র শুধু লাউয়াছড়ার নয়, সারা বাংলাদেশেরই। এমনিতেই দেশের অনেক বনাঞ্চল ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। বনের জমিতে গড়ে তোলা হয়েছে বড় বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান। এসবের দাপটে দেশের অনেক প্রাকৃতিক বনাঞ্চল অনেক আগেই বিলীন হয়ে গেছে। এখন ‘বনখেকো’দের নজর পড়েছে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের প্রতি।
আমরা জানি, ১৯৯৬ সালে এক হাজার ২৫০ হেক্টরের চিরহরিৎ ও মিশ্র চিরহরিৎ লাউয়াছড়া বনটি জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করে সরকার। এই বনে উল্লুক, বানর, বিভিন্ন প্রজাতির সাপ, বনমোরগ, বনরুই, মায়া হরিণ, মেছো বাঘ, বন্য শূকর, অজগরসহ অনেক প্রজাতির বিরল, বিপন্ন ও বিপন্নপ্রায় প্রাণী আছে। এখানে ১৬৭ প্রজাতির উদ্ভিদ, চার প্রকারের উভচর প্রাণী, ছয় প্রজাতির সরীসৃপ, ২৪৬ প্রজাতির পাখি এবং ২০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী রয়েছে। উদ্ভিদ ও প্রাণিবৈচিত্র্যে ভরপুর এই বনটি। এই লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের চাউতলী বন বিটের আয়তন ৩১ হেক্টর। বিভিন্ন জাতের ১০ হাজারেরও বেশি গাছগাছালিতে সমৃদ্ধ এই বন বিটের ওপর স্বার্থান্ধ মহলের নজর পড়েছে। দুর্বৃত্তচক্র অপকৌশলের মাধ্যমে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে সামাজিক বনায়নের ১০ বছর বয়সী গাছের সঙ্গে শতবর্ষী ও অর্ধ শতবর্ষী হাজার হাজার গাছ কেটে ফেলতে যাচ্ছে। ৩১ হেক্টরের এ ফলের বাগানে মাত্র ১০ শতাংশে রয়েছে উপকারভোগীদের লাগানো একাশিয়া এবং বেলজিয়াম গাছ। নির্দিষ্ট ১০ বছরের মেয়াদ শেষ হওয়ায় সম্প্রতি বন বিভাগ উপকারভোগীদের সৃজন করা বৃক্ষ কাটার উদ্যোগ নেয়। এ উদ্দেশ্যে একাশিয়া ও বেলজিয়াম গাছগুলোর গায়ে লাল নম্বরযুক্ত চিহ্ন দেয় বন বিভাগ। সামাজিক বনায়নের গাছগুলোর বেড় হবে তিন ফুট। কিন্তু কাটার জন্য এসব গাছ চিহ্নিতকরণের আড়ালে সরকারি বেতনভোগী একটি চক্র প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা ওই সব শতবর্ষী গাছও চিহ্নিত করে। এসব গাছের একেকটির বেড় ২০-৩০ ফুট। অভিযোগ রয়েছে, উপকারভোগীদের লাগানো গাছের সঙ্গে পুরনো গাছগুলোও কেটে ফেলার পাঁয়তারা করছে মৌলভীবাজারের বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ।
সামাজিক বনায়নের গাছ কাটার নামে শতবর্ষী বৃক্ষ নিধনের উদ্যোগের খবরটি প্রকৃতিবান্ধব সব মানুষকেই উদ্বিগ্ন করবে। সিলেটের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা বলেছেন, প্রাকৃতিক ফলের গাছগুলো বাদ দিয়ে শুধু সামাজিক বনায়নের আওতায় লাগানো আকাশমণি-বেলজিয়াম গাছগুলোকে আবার নতুন করে শনাক্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আগের তালিকা আর গ্রহণ করা হবে না। কিন্তু যে প্রশ্নটি থেকে যাচ্ছে তা হলো, যাঁরা এই তালিকাটি করেছিলেন তাঁদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে?