এক নজরে আওয়ামী লীগের ২০ কাউন্সিল

6

কাজিরবাজার ডেস্ক :
‘বঙ্গবন্ধু-আওয়ামী লীগ-বাংলাদেশ’ ইতিহাসে এই তিনটি নাম অমলিন, অবিনশ্বর। ইতিহাসে এই তিনটি নাম একই সূত্রে গাঁথা। দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রাম, আত্মত্যাগ ও শত সহস্র চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে আজ গণমানুষের সবচেয়ে প্রিয় ও আস্থার ঠিকানাই হচ্ছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ মানেই বাঙালী জাতীয়তাবাদের মূল ধারা। আওয়ামী লীগ মানেই সংগ্রামী মানুষের প্রতিচ্ছবি। বাংলাদেশের কাদা-মাটি গায়ে মাখা খেটে খাওয়া মানুষের কাফেলা।
অতীতের মতো বাংলাদেশের ভবিষ্যতও আওয়ামী লীগের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে যুক্ত। বাঙালী জাতির মুক্তির মূলমন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে গণতান্ত্রিকভাবে জন্ম নেয়া উপমহাদেশের প্রাচীনতম ও ঐতিহ্যবাহী বৃহৎ রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আজ শুক্রবার ২১তম সম্মেলন। প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী এ দলটির নেতৃত্বেই দেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়। রোজ গার্ডেনে জন্মগ্রহণের পর থেকে নানা লড়াই, সংগ্রাম, চড়াই-উতরাই পেরিয়ে দলটি এখন দেশের রেকর্ড সংখ্যক টানা তৃতীয়বারের মতো রাষ্ট্র ক্ষমতায়।
এক নজরে দেখা যাক আওয়ামী লীগের ৭০ বছরে অনুষ্ঠিত গত ২০ কাউন্সিলে কারা এ দলটির হাল ধরেছেন, নেতৃত্ব দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের ইতিহাস থেকে জানা যায়, এ দেশের অসাম্প্রদায়িক, প্রগতিশীল ও তরুণ মুসলিম লীগ নেতাদের উদ্যোগে ১৯৪১ সালের ২৩ ও ২৪ জুন পুরনো ঢাকার কেএম দাস লেনের বশির সাহেবের রোজ গার্ডেনের বাসভবনে একটি রাজনৈতিক কর্মী সম্মেলনের মাধ্যমে পাকিস্তানের প্রথম বিরোধী দল পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়। মুসলিম লীগের প্রগতিশীল নেতাকর্মীরা সংগঠন থেকে বেরিয়ে গিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন আওয়ামী মুসলিম লীগ। প্রথম সেই কাউন্সিলে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী সভাপতি, শামসুল হক সাধারণ সম্পাদক এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হন।
১৯৫৩ সালে ময়মনসিংহে দলের দ্বিতীয় কাউন্সিলে মওলানা ভাসানী সভাপতি পুনর্র্নিবাচিত ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ’৫৫ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত তৃতীয় কাউন্সিলে একই কমিটি বহাল থাকে। ’৫৭ সালে কাগমারি সম্মেলন ঘিরে মওলানা ভাসানী দল ভেঙ্গে ন্যাপ করলে আওয়ামী লীগের মওলানা আবদুর রশিদ তর্কবাগিশ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব অপরিবর্তিত থাকেন।
’৫৮ সালে সামরিক শাসন জারি হলে আওয়ামী লীগের কর্মকা- স্থগিত করা হয়। দীর্ঘ ৬ বছর পর ’৬৪ সালে দল পুনরুজ্জীবিত করা হয়। এতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে তর্কবাগিশ-মুজিব অপরিবর্তিত থাকেন। ১৯৬৬ সালের সম্মেলনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আসেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। পরে তিনি হয়ে ওঠেন বাঙালীর একচ্ছত্র নেতা, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি ও জাতির জনক। ’৬৬ সালের কাউন্সিলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন তাজউদ্দীন আহমদ। এরপর ’৬৮ ও ’৭০ সালের কাউন্সিলে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক অপরিবর্তিত থাকেন। এই কমিটির মাধ্যমেই পরিচালিত হয় বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালের সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন জিল্লুর রহমান। ’৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু দায়িত্ব ছেড়ে দিলে সভাপতি হন এ এইচ এম কামারুজ্জামান। সাধারণ সম্পাদক হিসেবে জিল্লুর রহমান বহাল থাকেন। ’৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর আওয়ামী লীগের রাজনীতি আবারও স্থগিত করা হয়। ’৭৬ সালে ঘরোয়া রাজনীতি চালু হলে আওয়ামী লীগকে পুনরুজ্জীবিত করে মহিউদ্দিন আহমেদ সভাপতি ও সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী সাধারণ সম্পাদক হন। ’৭৭ সালে এই কমিটি ভেঙ্গে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। আহ্বায়ক হন সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীন। ’৭৮ সালের সম্মেলনে আবদুল মালেক উকিল সভাপতি ও আবদুর রাজ্জাক সাধারণ সম্পাদক হন।
’৮১ সালের সম্মেলনে বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতেই তাঁকে সভাপতি এবং আবদুর রাজ্জাক সাধারণ সম্পাদক পদে বহাল থাকেন। এরপর শেখ হাসিনা দেশে ফিরে ঐতিহ্যবাহী এই রাজনৈতিক দলটির হাল ধরেন। ’৮৩ সালে আবদুর রাজ্জাক দলত্যাগ করে বাকশাল গঠন করলে সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক করা হয়। ’৮৭ সালের সম্মেলনে শেখ হাসিনা সভাপতি ও সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী সাধারণ সম্পাদক হন। ’৯২ ও ’৯৭ সালের সম্মেলনে শেখ হাসিনা সভাপতি ও জিল্লুর রহমান সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০০০ সালে ডাকা বিশেষ কাউন্সিলেও একই কমিটি বহাল থাকে।
এরপর ২০০২ সালের ২৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত কাউন্সিলে শেখ হাসিনা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন আবদুল জলিল। ২০০৯ সালের ২৪ জুলাই অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের ১৮তম কাউন্সিলে শেখ হাসিনা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। আর ওই কাউন্সিলে বাঘা বাঘা নেতাদের সাইড লাইনে রেখে অপেক্ষাকৃত তরুণদের নিয়ে গঠন করেন চমকের কেন্দ্রীয় কমিটি। এরপর ২০১২ সালের সম্মেলনে সভাপতি পদে শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক পদে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম পুনর্র্নিবাচিত হন।
এরপর সর্বশেষ ২০১৬ সালের ২২-২৩ অক্টোবর অনুষ্ঠিত দলের ২০তম কাউন্সিলে টানা অষ্টমবারের মতো সভাপতি নির্বাচিত হন শেখ হাসিনা। সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন ওই সময়ে সভাপতিম-লীর সদস্য পদে থাকা ওবায়দুল কাদের। আজ শুক্রবার আওয়ামী লীগের ২১তম কাউন্সিল। রেকর্ড সংখ্যক টানা নবমবারের মতো আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচিত হচ্ছেন, এটি সর্বজনবিদিত। তবে সাধারণ সম্পাদক পদে ওবায়দুল কাদের দ্বিতীয়বারের মতো পুনর্র্নিবাচিত হচ্ছেন, নাকি নতুন কেউ হচ্ছেন- এটি শতভাগ নিশ্চিত হতে দেশবাসীকে আরও ২৪ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে। কাল শনিবার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের মাঠে অনুষ্ঠিত কাউন্সিলের দ্বিতীয় অধিবেশনেই ঘোষণা করা হবে দলটির সাধারণ সম্পাদকের নাম।