কমলগঞ্জে ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতুর উপর দিয়ে চলছে না কোন যানবাহন

7

পিন্টু দেবনাথ কমলগঞ্জ থেকে :
সুন্দর একটি সেতু। গ্রামীণ যোগাযোগকে তরান্বিত করার লক্ষ্যে দুই ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষের সহজে যাতায়াতের কেন্দ্রবিন্দু হিসাবে গত ৪ বছর আগে প্রায় ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় ৯৬ মি. আরসিসি পিএসসি গার্ডার এই সেতুটি। নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হওয়ার পর বিগত ২০১৬ সালের ১৭ মার্চ সেতুটির শুভ উদ্বোধন করেন জাতীয় সংসদের সাবেক চীফ হুইপ আলহাজ্ব উপাধ্যক্ষ ড. মো. আব্দুস শহীদ এমপি। কিন্তু ৪ বছর পার হলেও সেতুর উপর দিয়ে কোন ধরনের যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। শুধুমাত্র বাইসাইকেল ও মোটর সাইকেল কোন রকমভাবে চলছে। কমলগঞ্জ উপজেলার আদমপুর ও মাধবপুর ইউনিয়নের মধ্যে সংযোগ রক্ষাকারী জনগুরুত্বপূর্ণ ঘোড়ামারা-শুকুর উল্লাহগাঁও ভায়া আদমপুর সড়কের মধ্যে ধলাই নদীর উপর নির্মিত সেতু।
সরজমিন দেখা যায়, সেতুর দু’পাশে গভীরতা বেশি। মাটি না থাকায় এমন অবস্থা বিরাজ করছে। পুরো রাস্তাটি ছোট ও কাচা থাকায় বর্ষ মৌসুমে দুর্ভোগের অন্ত নেই। গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা সুরমা বেগম, ছাদিকুর রহমান, জয়নাল আবেদিন, মোহামদ্দিন, আব্দুল কাদির ও আমজদ আলী সেতুটির উদ্বোধনের সময় দু’পার্শ্বের এপ্রোচ রোডও খুব দ্রুতই পাকা করণের জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্র“তি দেয়া হয়েছিল। দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও প্রতিশ্র“তির বাস্তব প্রতিফলন ঘটেনি। ২ ইউনিয়নে বসবাসকারী হাজারো লোকজন সহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ বিশেষ করে বর্ষাকালীন সময়ে গর্ভবতী মহিলাদের জরুরী চিকিৎসা বা প্রসব করানোর জন্য স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। তাদেরকে উভয়দিকেই প্রায় ১ কিলোমিটার রাস্তা কাঁধে বহন করে রোগীদের নিয়ে গিয়ে যানবাহনে তুলতে হয়। এদিকে সেতুটির উপর দিয়ে কোন যানবাহন যাতায়াত না করায় স্থানীয় কৃষকরা সেতুটিকে ধান শুকানোর জায়গা হিসাবে ব্যবহার করছেন। কৃষক আব্দুল মন্নান, তমিজ উদ্দিন ও আব্দুস সালাম জানান, আমাদের এলাকার ৮০ শতাংশই কৃষি কাজের সাথে জড়িত। ধান চাষের পাশাপাশি মৌসুমী ফসল উৎপাদনে কমলগঞ্জ উপজেলায় বিশেষ অবদান রাখছে এই এলাকাটি। আমাদের মৌসুসী ফসল গুলো উপজেলা সদর সহ সারা জেলাই সরবরাহ করা হয়। তবে সেতুটি ব্যবহার করতে না পাড়ার কারণে ১ কিলোমিটারের রাস্তাটি তিনগুণ ভাড়া বেশী দিয়ে প্রায় ২০ কিলোমিটার ঘুরে তাদের উৎপাদিত ফসল সমুহ বাজারজাত করতে হচ্ছে। এতে করে তাদের ফসল উৎপাদন খরচ ও বেড়ে যাচ্ছে। সেই তুলনায় বাজার মূল্য পাচ্ছেন না কৃষকরা। তাই এখন অনেক কৃষকই মৌসুমী ফসল উৎপাদন করতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। এছাড়া এলাকাটি পর্যটন কেন্দ্রীক হওয়ায় দর্শনীয় স্থান মাধবপুর লেইক ও বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান স্মৃতি স্মরণীসহ বিভিন্ন দশর্নীয় স্থানগুলো প্রায় ২০ কিলোমিটার ঘুরে আসতে হচ্ছে। এতে তাদের একদিকে যেমন অতিরিক্ত সময় ব্যয় হচ্ছে তেমনি ভাড়ার ক্ষেত্রেও অতিরিক্ত টাকা গুনতে হচ্ছে। এদিকে অতিসম্প্রতি সড়কটির মাধবপুর অংশে একটি কালভার্ট ভেঙ্গে পড়ার বিষয়টি যেন গ্রামবাসীর উপর মড়ার উপর খাড়ার ঘা এর মতো। ভেঙ্গেপড়া কালভার্টটির উপর ফিসপ্লেট ফেলে যোগাযোগ পুনঃস্থাপনের মাধ্যমে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন প্রতিদিন এ রাস্তা দিয়ে এলাকার শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করেন। কিন্তু ভেঙ্গেপড়া কালভার্টটির সংস্কার ও সড়কটি পাকা করন না হওয়াতে পোহাতে হচ্ছে দুর্ভোগ। শিক্ষার্থী পারভিন বেগম, ছাদিয়া আক্তার বলেন, প্রতিদিন এরাস্তা দিয়ে কলেজে যেতে হয়। কিন্তু রাস্তাটি নির্জন হওয়ায় ঝুঁকি চলতে হয় আমাদের। স্থানীয় ইউপি সদস্য বাবুল কুমার সিংহের সাথে আলাপকালে তিনি জানান, গত দু’বার সেতুটির একপাশে ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে প্রায় ৬ হাজার টাকা খরচ করে মাটি ভরাট করেছেন। কিন্তু অতিবৃষ্টির কারণে মাটিগুলো সরে গিয়ে সেতুটি দুই মাথার এই অবস্থা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, মৌলভীবাজার এলজিইডি কে বিষয়টি জানানো হয়েছে। এলজিইডি অফিসের লোকজন এসে রাস্তাটি মেপে নিয়ে গেছে, কিন্তু গত ৪ বছরেও কোনো উন্নয়নমূলক কাজ হয়নি। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান পুষ্প কুমার কানু বলেন, সড়ক ও সেতুটির বেহাল অবস্থা থাকায় এলাকাবাসীরা দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। তিনি আরো জানান, রাস্তাটি পাকা করণ করা হলে দুই ইউনিয়নের যোগাযোগ ব্যবস্থা আরো এক ধাপ এগিয়ে যেত। কমলগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী জাহিদুল হাসান বলেন, রাস্তাটি সরু হওয়ায় এবং স্থানীয়রা জমি না দেয়ার কারণে আমরা কাজ করতে পারছিনা। সেতুটির দুই পাশে মাটি না থাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের মাটি ভরাট করার কোন প্রকল্প নেই, তারপর বিষয়টি আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জানিয়ে বিহিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
গ্রামীন অবকাঠোমো এই রাস্তাটি দ্রুত পাকা করে জনগণের কষ্ট দুর্ভোগ নিরসনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নজর দিবেন কি ?