প্রতিবন্ধীদের সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে – প্রধানমন্ত্রী

8
২৮তম আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস ও ২১তম জাতীয় প্রতিবন্ধী উদযাপন এবং প্রতিবন্ধী কমপ্লেক্স ‘সুবর্ণ ভবন’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রতিবন্ধিতা থেকে উত্তরণের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফল এবং অবদান রাখার জন্য বিভিন্ন ব্যক্তি, সংগঠন সংস্থা ও পিতা-মাতাকে পুরস্কার তুলে দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

কাজিরবাজার ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সম্পর্কে নেতিবাচক মানসিকতা পরিহার করার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মধ্য দিয়ে প্রতিবন্ধীদেরও কর্মসংস্থান হবে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বিষয়ে আমাদের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে। সকলের জন্য মৌলিক চাহিদা পূরণের মাধ্যমে তার সরকার বৈষম্যমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে চায়। দেশের উন্নয়ন এবং আমরা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের গুরুত্ব দিচ্ছি যাতে তারা উন্নয়ন থেকে পিছিয়ে না থাকে, এটাই আমরা চাই। বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিরপুরে জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনে ২৮তম আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস ও ২১তম জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবস ২০১৯ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘কানাকে কানা আর খোঁড়াকে খোঁড়া বলিও না’- শৈশব থেকে আমরা এই শিক্ষা পেয়েছি। শিশুদের শৈশব থেকে এই শিক্ষা দিতে হবে যাতে তারা মানবিক হয় এবং যাতে তারা আমাদের সঙ্গে একত্রে চলতে পারে-এটিই সবচেয়ে বড় কথা।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন যৌথভাবে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নবনির্মিত জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন কমপ্লেক্স ‘সুবর্ণ ভবন’ উদ্বোধন করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সকলের জন্য সব মৌলিক চাহিদা পূরণের মাধ্যমে তার সরকার বৈষম্য মুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে চায়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের জন্য স্বাধীনতা নিয়ে এসেছেন। আমাদের লক্ষ্য হলো এই স্বাধীন দেশের সকল জনগণ সমান অধিকার নিয়ে বসবাস করবে এবং আমরা এই লক্ষ্য অর্জনে কাজ করছি।
অটিজম অথবা প্রতিবন্ধিতা কোন রোগ অথবা অসুস্থতা নয় এ কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার এমন পদক্ষেপ নিচ্ছে যাতে অটিজম অথবা প্রতিবন্ধিতায় যারা ভুগছেন তারা সমাজের মূলধারার সঙ্গে বসবাস করতে পারেন। আমরা জানি যে, এ ধরনের প্রতিবন্ধিতায় যেসব শিশুরা ভুগছেন তাদের পিতা মাতার জন্য এটি খুবই বেদনাদায়ক। আমরা তাদের এই দুর্দশা নিরসনে বিভিন্ন পদক্ষেপ ও কর্মসূচী গ্রহণ করেছি। দেশের ব্যাপক আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার এই উন্নয়নে প্রতিবন্ধীদের ওপর জোর গুরুত্ব দিয়েছে। প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে তার সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের বিবরণ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর ১৯৯৯ সালে জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করে। পরে আমরা তাদের অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি অধিকার ও সুরক্ষা আইন, ২০১৩; নিউরো ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট আইন, ২০১৩ এবং পুনর্বাসন কাউন্সিল আইন ২০১৮ প্রণয়ন করেছি। শেখ হাসিনা জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে প্রতিবন্ধীদের আরও প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন যাতে তাদের অন্যদের ওপর নির্ভরশীল হওয়ার প্রয়োজন না হয়। তিনি বলেন, কেবল আর্থিক সহায়তা প্রদান নয়, বরং এই ফাউন্ডেশন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা এবং প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে সাহায্য করতে পারে।’
অনুষ্ঠানে মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জুয়েনা আজিয়া এবং জাতীয় প্রতিবন্ধী ফোরামের সভাপতি সায়েদুল হক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের পক্ষে আরও বক্তৃতা করেন ন্যাশনাল স্পেশালাইজড এ্যাডুকেশন সেন্টারের পঞ্চম গ্রেডের শিক্ষার্থী ফেরদৌসী আখতার।
পরে প্রধানমন্ত্রী প্রতিবন্ধী শিশুদের সঙ্গে কুশলবিনিময় এবং প্রতিবন্ধী শিশুদের পরিবেশিত বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন। এর আগে তিনি এ ক্ষেত্রে সফল ব্যক্তি, সমাজকর্মী ও সংগঠন, পিতা-মাতা, এবং সেবা প্রদানকারীদের মধ্যে তাদের অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ পুরস্কার বিতরণ করেন।