ইসলামের দৃষ্টিতে গুজব ও এর পরিণতি

464

এইচ.এম. কাওছার আহমদ

ইসলাম শান্তির ধর্ম। ইসলাম কখন মিথ্যাকে সর্মথন করে না। গুজব হচ্ছে মিথ্যা অপবাদ। ইসলামে মিথ্যা বলা মহা পাপ। বর্তমান অবস্থা অবলোকন করলে বুঝা যায় প্রতিমুহূর্ত মানুষ মানুষের সাথে ধোঁকাবাজি করছে। ইসলাম কখনো এসব সমর্থন করে না। আল্লাহ তায়ালা বলেন- “নি:সন্দেহে আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য দ্বীন হচ্ছে ইসলাম”। (সূরা আলে ইমরান-১৯) বর্তমান তথ্য-প্রযুক্তির যুগে মানুষের পারস্পারিক যোগাযোগ সহজ করেছে। পৃথিবীর যে কোন প্রান্ত থেকে মানুষ চেনা জানা-আপনজন অপরিচিত যে কারো সাথে মুহূর্তের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদান করতে পারছে। এর মাধ্যম হচ্ছে প্রযুক্তির ব্যবহার। প্রযুক্তির এই উন্নয়নে মানুষের জীবনকে যেভাবে সহজ ও সাবলীল করছে কিন্তু একই সঙ্গে তথ্যের অবাধ প্রবাহ মানুষকে বিভ্রান্ত ও করছে। মানুষ তাদের নিজ স্বার্থ হাসিলের জন্য সমাজের ভুল তথ্য দিয়ে মানুষের মাঝে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। আংশিক মিথ্যা কথা প্রযুক্তির মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে সমাজে ভয়ভীতি ও আতংকের সৃষ্টি করছে। প্রযুক্তির উন্নয়নের সঙ্গে গুজব ও মিথ্যার সয়লাব প্রায় অপ্রতিরোধ হয়ে উঠেছে। গুজবের ভয়াবহতা থেকে জাতিকে রক্ষা করার জন্য প্রয়োজন কঠোর আইন নৈতিক শিক্ষা ও সামাজিক সচেতনতা। ইসলামের দৃষ্টিতে পরকালে প্রতিটি মানুষ তার প্রতিটি কাজের জবাবদিহি করতে হবে।
আল্লাহ তায়লা বলেন- “যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নেই, সেই বিষয়ে অনুমান দ্বারা পরিচালিত হয়ো না। নিশ্চয় কান, চোখ ও হৃদয় এদের প্রত্যেকটিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। (সূরা: বনী ইসরাইল-৩৬)। কোন খবর দেখলেই যাচাই বাছাই করা ছাড়া তা বিশ্বাস করা অনুচিত। কোরআনে ভুল তথ্য অনুসরণ করা নিষেধ করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন-মানুষের মধ্যে গুজব প্রচারই হল ভয়ংকরতম মিথ্যা। (মুসলিম শরীফ)। মূলত গুজব হল, যার কোন ভিত্তি নেই। মিথ্যা খবর অপ-প্রচার করে মানুষের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমাজে ছড়িয়ে দিয়ে বিশৃংখলা সৃষ্টি করা হয়। বর্তমানে সহজে প্রযুক্তির মাধ্যমে ফেইসবুক ও বিভিন্ন ব্লগগুলোয় গুজব ছড়িয়ে দেয়ার ঘটনা ঘটছে। গুজবকে কাজে লাগিয়ে সুযোগ-সন্ধানীরা লাভবান হওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু গুজব সম্পর্কে সাবধানতা অবলম্বন করার তাগিদ ইসলাম ধর্মে বলা হয়েছে আল্লাহ তায়লা বলেন-“হে মুমিনগণ, যদি কোন পাপাচারী ব্যক্তি তোমাদের কাছে কোন সংবাদ আনয়ন করে, তবে তোমরা পরীক্ষা করে দেখবে, যাতে অজ্ঞতা বশতঃ তোমরা কোন সম্প্রদায়ের ক্ষতিসাধনে প্রবৃত্ত না হও এবং পরে নিজেদের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত না হও। (সূরা হুজরাত-৬)
গুজব থেকে রক্ষার জন্য আমরা যদি কুুরআন ও হাদিস সঠিকভাবে পালন করি তবে গুজব নির্ভর ক্ষতির হাত থেকে সমাজ রক্ষা পাবে। সোশ্যাল মিডিয়ায় গুজব ছড়ানো ইসলাম সমর্থন করে না। বর্তমান যুগে বেশির ভাগই মানুষ সোশ্যাল মিডিয়ায় বিচরণ। সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে যেমন তার প্রিয় মানুষটির খবর সার্বক্ষণিক রাখতে পারে। ঠিক বিভিন্ন পেজ বা গ্র“পের সদস্য হয়ে অনেক অজানাকে জানতে পারে সহজে। সোশ্যাল মিডিয়া এর ভালো দিক যত আছে, তার চেয়ে মন্দ দিক অনেক বেশি। কিছু কিছু মানুষ প্রতিনিয়ত সোশ্যাল মিডিয়ার অপব্যবহার করছে। সোশ্যাল নেটওয়ার্ককেই তারা তাদের নোংরা মানসকিতা প্রচারের মাধ্যমে বানিয়েছে। নিজের ব্যক্তিগত পেইজ বা গ্র“পের ভিজিটর বাড়াতে মানুষদের মাঝে তাদের অসত্য বক্তব্য মিডিয়ায় ছেড়ে দিয়ে মানবজাতির ঈমানকে ধ্বংসের দিকে ঢেলে দিচ্ছে। ঠিক সেভাবে কিছু কিছু লোক ভিজিটর বাড়াতে প্রতিনিয়তই ছড়িয়ে দেয় বিভিন্ন অশ্লীল ছবি বা ভিডিও।
অথচ কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে-“স্মরণ রেখো, যারা পছন্দ করে যে, ঈমানদারদের মধ্যে ব্যভিচার প্রসার লাভ করুক, তাদের জন্য ইহকাল ও পরকালে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।” (সূরা: নূর, আয়াত: ১৯) মিথ্যাবলা বা গুজব ছড়ানো মুনাফিকের আলামত। নবী করীম (সা:) ইরশাদ করেছেন, মুনাফিকের আলামত তিনটি। যথা: যখন সে কথা বলে তখন মিথ্যা কথা বলে। ওয়াদা করলে ভঙ্গ করে। এবং যখন তার কাছে আমানত রাখা হয়, সে খেয়ানত করে। (বুখারি শরীফ)। আল্লাহ আমাদের সবাইকে অনর্থক কথার্বাতা ও কাজ থেকে হেফাজত করুন আমিন।