মৌলভীবাজারে ভাষা সৈনিক রওশন আরা বাচ্চুর নামাজে জানাযা সম্পন্ন

11
ভাষাসৈনিক রওশন আরা বাচ্চুর প্রতি শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করছেন মৌলভীবাজারের সর্বস্তরের জনতা।

মৌলভীবাজার থেকে সংবাদদাতা :
ভাষা সৈনিক রওশন আরা বাচ্চুর নামাজে জানাযা বুধবার (৪ডিসেম্বর) সকাল ১১টায় মৌলভীবাজারের কুলাউড়া নবীন চন্দ্র মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রওশন আরা বাচ্চু মরদেহ সরকারী স্কুল মাঠে নিয়ে আসলে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক বেগম নাজিয়া শিরিন, মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার মো. ফারুক আহমেদ পিপিএম (বার), কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এটি এম ফরহাদ চৌধুরী, উপজেলা আ’লীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম রেনু, সাধারণ সম্পাদক আসম কামরুল ইসলাম, কুলাউড়া উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মাও: ফজলুল হক খান সাহেদ, ভাষা রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ডাঃ এম এ মুক্তাদিরসহ জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের নেতৃবৃন্দরা। শ্রদ্ধা নিবেদনের পর নামাজে জানাযা শেষে পার্শবর্তী উছলাপাড়া গ্রামের নিজ পৈতৃক বাড়িতে দাফন সম্পন্ন হয়।
এর আগে বাংলা একাডেমি থেকে রওশন আরা বাচ্চুর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে। সেখানে তার প্রথম জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় তার পশ্চিম মণিপুরের বাসায়। এশার নামাজের পর সেখানকার বায়তুল আমান জামে মসজিদে তার দ্বিতীয় জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। পরে মরদেহবাহী গাড়ি ঢাকা থেকে সাইরেন বাজিয়ে রাত ৩টায় পৌঁছায় কুলাউড়াস্থ উছলাপাড়া গ্রামে তার নিজ বাড়িতে। এ সময় আত্মীয়-স্বজন পাড়া প্রতিবেশীদের কান্নায় ভারী হয়ে উঠে চারদিকের পরিবেশ।
রওশন আরা বাচ্চু জীবদ্দশায় তিনি বলতেন, ‘ভাষা বাঁচলে দেশ বাঁচবে। আমি আমার জীবনে যা কিছু করতে পেরেছি তার জন্য মায়ের অবদানই বেশী। যে যুগে আমি পড়াশোনা করেছি, তা যদি আমার মা না দেখতেন তাহলে হতো না।’
রওশন আরা বাচ্চুর স্থান পূরণ হওয়ার নয় বলে জানিয়েছেন দেশের অনেক খ্যাতিমান ভাষাবিদ, শিক্ষাবিদ, রাজনৈতিকসহ নানা শ্রেণী পেশার মানুষ। শোকাহত উনার নিজ জন্মভূমি কুলাউড়া।
মূলত বার্ধক্যজনিত সমস্যা ছিল রওশন আরা বাচ্চুর। পাশাপাশি নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন। গত রবিবার তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। সেদিন ইমার্জেন্সিতে তিন ঘণ্টা রেখে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেওয়া হয়। রওশন আরা বাচ্চুর ছোট মেয়ে তাহমিদা খাতুন এ তথ্য জানান।
রওশন আরা বাচ্চু ছোট মেয়ে তাহমিদা খাতুন বলেন, ‘আমার মায়ের শেষ ইচ্ছে ছিলো তার নিজ জন্মস্থানে শায়িত হবেন। আমরা সেই আশা পূর্ণ করেছি। আমার মায়ের নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করতে চাই। এটি হলেই আমার মায়ের আত্মা শান্তি পাবে।’
কুলাউড়া উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক আসম কামরুল ইসলাম বলেন- ‘১৯৫২ সালে মেয়েরা প্রকাশ্যে সভা-সমিতি করতে বিব্রতবোধ করতেন। এমনকি বাইরে বের হতেও বিধিনিষেধ ছিল। সে সময় শ্রদ্ধেয় রওশন আরা বাচ্চু আন্দোলন করেছেন। ভাষা সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। তার স্মৃতি রক্ষার্থে কুলাউড়ায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা রাস্তার নামকরণ দাবী করেন তিনি।’
মৌলভীবাজারের জেলা পুলিশ সুপার মো. ফারুক আহমেদ পিপিএম (বার) বলেন-‘কুলাউড়ায় অনেক গুণী ব্যক্তিদের জন্ম হয়েছে। এর মধ্যে রওশন আরা বাচ্চু অন্যতম শ্রেষ্ঠ কৃতি সন্তান। উনাদের আন্দোলনের ফসল হলো আমাদের এ প্রাণের বাংলাদেশ।’
মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক বেগম নাজিয়া শিরিন বলেন- রওশন আরা বাচ্চুর স্মৃতি রক্ষার্থে রাষ্ট্রীয়ভাবে আমরা নিশ্চয়ই কাজ করবো। ৫২সালে তিনি ভাষাসংগ্রামী হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেছিলেন। রওশন আরা বাচ্চু অত্যন্ত সাহসী নারী ছিলেন। ভাষা আন্দোলন থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত বাংলা ভাষার প্রশ্নে তিনি সর্বদাই সোচ্চার ছিলেন। আমি তার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করি।’
প্রসঙ্গত রওশন আরা বাচ্চু মৃত্যুকালে চার মেয়ে ও আত্মীয় স্বজনসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। স্বামী শামসুদ্দীন মোহাম্মদ আবদুল তৈমুর মারা গেছেন ২০১৭ সালে তিনি ১৯৩২ সালের ১৭ ডিসেম্বর মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার উছলাপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।