হবিগঞ্জে শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজে দুদকের অভিযান, সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদ

21

হবিগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা :
হবিগঞ্জ শেখ হাসিনা মেডিক্যাল কলেজে সাড়ে ১৫ কোটি টাকার কেনাকাটায় দুর্নীতির তদন্তে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দীর্ঘক্ষণ ধরে ক্রয় করা জিনিসপত্র খতিয়ে দেখা হয়। বিভিন্ন মালামালের ছবিও উঠিয়ে নেন দুদক কর্মকর্তারা।
দুদকের ১০৬ হটলাইনে এ ব্যাপারে অভিযোগ দেয়া হয়েছে। এছাড়াও সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশের পর এগুলো আমলে নিয়ে প্রধান কার্যালয় থেকে হবিগঞ্জ দুর্নীতি দমন কমিশনকে প্রাথমিক তদন্তের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতেই অভিযান করে দুদকের একটি দল।
অভিযানে নেতৃত্ব দানকারী হবিগঞ্জ দুদকের সহকারী পরিচালক এরশাদ মিয়া জানান, প্রধান কার্যালয়ের নির্দেশে আমরা প্রাথমিক তদন্তে এসেছি। ক্রয় করা মালামালের দর সম্পর্কে বাজারে যাচাই করা হবে। পরবর্তীতে দুর্নীতির প্রমাণ ও কমিশনের অনুমতি পেলে বিস্তারিত তদন্ত করবে দুদক। এটা তাদের প্রথম পদক্ষেপ। বিস্তারিত তদন্তের পর এ ব্যাপারে মামলা এবং চার্জশীটের প্রক্রিয়া হাতে নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
তবে অভিযানকালে কলেজের অধ্যক্ষ ডা. মো. আবু সুফিয়ান ও দরপত্র প্রস্তাব এবং মূল্যায়ন কমিটির সদস্য সচিব ডা. নাসিমা খানম ইভাবে খুঁজে পায়নি দুদক। এ সময় মেডিক্যাল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ডা. সোলায়মান মিয়া, প্রভাষক ডা. রোজিনা রহমানকে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করেন দুদক কর্মকর্তারা।
এ সময় দুদক হবিগঞ্জের সহকারী উপ পরিচালক আব্দুল মালেক, উপ সহকারী পরিচালক আব্দুল মোতালেব ও কনস্টেবল মো. ছদরুল আমীনসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
হবিগঞ্জ দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কামরুজ্জামান জানান, প্রাথমিক তদন্তের রিপোর্ট প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হবে। সেখান থেকে অনুমতি আসলে পরবর্তীতে বিস্তারিত তদন্ত ও মামলার প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হবে।
সম্প্রতি হবিগঞ্জ শেখ হাসিনা মেডিক্যাল কলেজের বইপত্র ও মালামাল ক্রয়ে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ ওঠে।
২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে ১৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ আসে প্রতিষ্ঠানটিতে। ভ্যাট ও আয়কর খাতে সরকারি কোষাগারে জমা হয় এক কোটি ৬১ লাখ টাকা ৯৭ হাজার ৭৪৮ টাকা। ১৩ কোটি ৮৭ লাখ ৮১ হাজার ১০৯ টাকা মালামাল ক্রয় বাবদ ব্যয় দেখানো হয়। কিন্তু বাস্তবে ওই মালামালের মূল্য পাঁচ কোটি টাকার বেশি নয়। বাকি টাকার পুরোটাই ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে।
সরবরাহকৃত মালামালের মধ্যে ৬৭টি লেনেভো ল্যাপটপের (মডেল ১১০ কোর আই ফাইভ) মূল্য নেওয়া হয় ৯৯ লাখ ৪৯ হাজার ৫০০ টাকা। প্রতিটি মূল্য পড়েছে ১ লাখ ৪৮ হাজার ৫০০ টাকা। ঢাকার কম্পিউটার সামগ্রী বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান ফ্লোরায় একই মডেলের ল্যাপটপ বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৪২ হাজার টাকায়। ৬০ হাজার টাকা মূল্যের এইচপি কালার প্রিন্টার (মডেল জেড প্রো এম ৪৫২এন ডব্লিউ), এর দাম নেওয়া হয়েছে ২ লাখ ৪৮ হাজার ৯০০ টাকা। ৫০ জন বসার জন্য কনফারেন্স টেবিল, এক্সিকিউটিভ চেয়ার ও সাউন্ড সিস্টেমে ব্যয় হয়েছে ৬১ লাখ ২৯ হাজার টাকা। জনপ্রতি চেয়ার-টেবিল ও সাউন্ড সিস্টেমের ব্যয় পড়েছে ১ লাখ ২২ হাজার ৪০০ টাকা। চেয়ারগুলোতে ‘ইয়ামিন ফার্নিচার’ লেখা থাকলেও টেবিলগুলো কোনো প্রতিষ্ঠানের এর কোনো স্টিকার লাগানো নেই। দেশের নামিদামি ফার্নিচার প্রতিষ্ঠান হাতিল ও রিগ্যালে এসব চেয়ারের মূল্য ওই দামের অর্ধেকের চেয়েও কম। এছাড়া বিলের ৬ নম্বরে আবারো কনফারেন্স সিস্টেম নামে ৫০ জনের জন্য (জনপ্রতি ২১ হাজার ৯০০ টাকা) ১০ লাখ ৯৯ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে। অত্যন্ত সাধারণ মানের ১৫টি বুক সেলফের মূল্য ৬ লাখ ৬০ হাজার, পাঁচটি স্টিলের আলমিরা ২ লাখ ৮৫ হাজার, ১০টি স্টিলের ফাইল কেবিনেট ৪ হাজার ২২ হাজার, ২৫টি স্টিলের র‌্যাক ১৩ লাখ ৯৭ হাজার টাকা বিল দেওয়া হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানটি ৬ হাজার ৪৭৫টি বইয়ের জন্য নিয়েছে ৪ কোটি ৪৯ লাখ ৮ হাজার ৬৬৪ টাকা। মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ১০৪টি প্লাস্টিকের মডেলের মূল্য ১ কোটি ১৪ লাখ ৮৬ হাজার ৩১৩ টাকা নিয়েছে। দেশের বাজারে ‘পেডিয়াটিক সার্জারি’ (২ ভলিয়মের সেট) বইটির দাম ৩৩ হাজার টাকা। নির্ঝরা এন্টারপ্রাইজ দাম নিয়েছে ৭০ হাজার ৫৫০ টাকা।