অবকাঠামোগত উন্নয়ন চাই

18

সোমবার মন্ত্রিসভা জাতীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন তহবিল ব্যবহার নীতিমালা ২০১৯-এর খসড়া অনুমোদন করেছে। এর অন্যতম লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো, দেশেই চাহিদা অনুযায়ী দক্ষ জনশক্তি তথা জনসম্পদ গড়ে তোলা, যেখানে অদ্যাবধি আমাদের ঘাটতি রয়েছে বহুলাংশে। বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম উন্নত দেশ জাপানে অন্তত ১৬টি খাতে দক্ষ জনশক্তির চাহিদা রয়েছে। আগামী পাঁচ বছরে দেশটি বাংলাদেশ থেকে অন্তত পাঁচ লাখ দক্ষ জনবল নিতে চুক্তিও করেছে। তবে শর্ত একটি- তাদের অবশ্যই জাপানী ভাষা জানতে হবে। শুধু এই একটি ঘাটতির জন্য আপাতত বিপুল চাহিদা থাকা সত্ত্বেও জাপানে এত জনশক্তি পাঠানো যাচ্ছে না। সে অবস্থায় দেশে দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টির লক্ষ্যে জাতীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন তহবিলের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতেই এই নীতিমালার অনুমোদন। এই তহবিল যদি যথাযথভাবে ব্যবহার করা যায় তবে বিপুল সংখ্যক লোক দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত হবে। যা তাদের বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চাহিদা অনুযায়ী প্রেরণ করে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা তথা এসডিজি বাস্তবায়নে সহায়তা করবে। এ ক্ষেত্রে জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এবং সংশ্লিষ্ট দক্ষতা উন্নয়ন সংস্থাগুলোর নীতিমালার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে যথাযথ প্রশিক্ষণ, গবেষণা, জরিপ, উদ্ভাবন ও সৃজনশীল দক্ষতা বৃদ্ধি এবং প্রদর্শন সম্পর্কিত কর্মসূচী বাস্তবায়নের জন্য তহবিল বরাদ্দের আবেদন করতে পারবে। যেটা সবিশেষ উল্লেখযোগ্য তা হলো, এই নীতিমালার আওতায় বিভিন্ন খাতের লোকজন বিনামূল্যে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের সুযোগ পাবে।
বিশ্বব্যাপী রেমিটেন্স প্রবাহ বৃদ্ধির সুসংবাদ দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। গত বছর সারা বিশ্বে প্রবাসী আয় বেড়েছে সাড়ে ৮ শতাংশ, যার পরিমাণ ৪৬৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। চলতি বছর এর পরিমাণ বাড়তে পারে আরও চার শতাংশ। এর ফলে দরিদ্র ও অনুন্নত দেশগুলো উপকৃত এবং উন্নত হচ্ছে।
উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ তৈরিতে চাই দক্ষ মানবসম্পদ। অপ্রিয় হলেও সত্য যে, বর্তমানে দেশে দক্ষ মানবসম্পদের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। বর্তমানে বিশ্বের প্রায় কোন দেশেরই অর্থনৈতিক অবস্থা ভাল নয়। চীন-মার্কিন বাণিজ্যযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে অনেক দেশেরই জাতীয় প্রবৃদ্ধিতে লক্ষ্য করা যায় নেতিবাচক প্রবণতা। মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধাবস্থা বিরাজমান। সার্বিক পরিবেশ-পরিস্থিতি বিবেচনায় বলতেই হয়, বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশই বিনিয়োগের জন্য সর্বাধিক উত্তম ও উপযোগী। দেশে বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পরিস্থিতি বেশ ভাল, প্রায় ৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। সরকারী-বেসরকারী ব্যাংকগুলোতে প্রচুর অলস অর্থ পড়ে আছে। সরকারও নমনীয় সুদহার নির্ধারণ করে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে চাচ্ছে। বিদ্যুতের সমস্যা অনেকটাই মিটেছে। পদ্মা সেতুর অগ্রগতিও আশাব্যঞ্জক। অতঃপর চাই অবকাঠামো উন্নয়ন। সেটি করা সম্ভব হলে এবং বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা গেলে বাংলাদেশী দক্ষ ও আধা দক্ষ শ্রমজীবীদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আর বিদেশে যাওয়ার প্রয়োজন পড়বে না।