কমলগঞ্জে নারীর শিক্ষার একমাত্র বিদ্যাপীঠ আব্দুল গফুর চৌধুরী মহিলা কলেজ এমপিওভুক্ত না হওয়ায় শিক্ষক কর্মচারীদের মধ্যে হতাশা

9

পিন্টু দেবনাথ কমলগঞ্জ থেকে :
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার নারীর শিক্ষার একমাত্র ও অন্যতম বিদ্যাপীঠ আব্দুল গফুর চৌধুরী মহিলা কলেজ। কলেজটি শিক্ষা ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখছে। ইতিমধ্যে জেলার মধ্যে ফলাফলে সুনাম বয়ে এনেছে। কিন্তু কলেজটি দীর্ঘ ১৯ বছরেও এমপিওভুক্ত না হওয়াতে এ প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারীরা মানসিকভাবে হতাশ হয়ে পড়েছেন। বর্তমান দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির যুগে আর্থিক অভাব-অনটনের কারণে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। মৌলভীবাজারের সীমান্তবর্তী অঞ্চল ও নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী মণিপুরী, খাসিয়া চা শ্রমিকসহ ক্ষুদ্র জাতি গোষ্ঠীর বসবাস হওয়াতে নারী শিক্ষার ক্ষেত্রে পশ্চাদপদতা, অবহেলা ও বঞ্চনা রয়েছে। সর্বশেষ গত ২৩ অক্টোবর সরকার ঘোষিত এমপিওভুক্তির তালিকায় এই কলেজের নাম না থাকায় চরম হতাশা ব্যক্ত করছেন এলাকাবাসী, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
জানা যায়, ২০০০ সালে কমলগঞ্জ উপজেলায় আব্দুল গফুর চৌধুরী মহিলা কলেজ নামে উচ্চতর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হলে নারী শিক্ষার ক্ষেত্রে প্রবল আগ্রহ তৈরী হয়। যা বিগত ১৯ বছরের এই প্রতিষ্ঠান নারী শিক্ষার ক্ষেত্রে যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে তা মাইল ফলক হয়ে আছে এবং এই অঞ্চলের মানুষের কাছে প্রতিষ্ঠানটি প্রাণের হিসাবে গৃহিত হয়েছে। কলেজটিকে ঘিরে দরিদ্র মণিপুরী, খাসিয়া, চা শ্রমিক সন্তানেরা উচ্চতর শিক্ষার সুযোগ পেয়েছে জেলার শিক্ষার অগ্রগতির ইতিহাসে এর অবদান অগ্রগণ্য।
আব্দুল গফুর চৌধুরী মহিলা কলেজ প্রতিষ্ঠার পর ধেকে অদ্যাবধি ফলাফলের ক্ষেত্রে ভাল ফলাফল অর্জন করেছে এবং প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থী উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে উত্তীর্ণ হওয়ার সুযোগ লাভ করেছে। ২০০৩ সালে সিলেট শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক একাডেমিক স্বীকৃতি লাভ করে ও ২০০৪ সালে কলেজটি জেলার মধ্যে শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (কলেজ) হিসেবে কৃতিত্ব অর্জন করে এবং ২০০৪ সাল থেকে এইচএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রের ভেন্যু-০২ হিসেবে সুনামের সাথে পরিচালিত হয়ে আসছে। এই কলেজের শিক্ষার্থীরা উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে সহ-পাঠক্রম কার্যক্রম সহ সরকারী বিভিন্ন কর্মসূচীতে সক্রিয় অংশগ্রহণ করে সুনাম অর্জন করে। কলেজের প্রভাষক শর্মিলা সিন্হা জানান, এমপিওভুক্তির আশায় দীর্ঘ দেড় যুগের বেশি সময় ধরে শিক্ষক কর্মচারীরা নামমাত্র সম্মানীতে পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। সর্বশেষ গত বুধবার (২৩ অক্টোবর) এই কলেজটি সকল যোগ্যতা অর্জন করার পরও শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী হতাশ হয়েছেন। কলেজটি এমপিওভুক্ত না হওয়ায় আর্থিক অভাব-অনটনের কারণে সামজের সর্বোচ্চ শিক্ষিত হয়েও শিক্ষকরা সামাজিক মর্যাদা নিয়ে জীবনযাপন করতে পারছেন না।
প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, কর্মচারী, অভিভাবক, ছাত্রীরা ঐতিহ্যগতভাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বুকে ধারণ করে আছে। বর্তমান সরকারের ঘোষিত নীতিমালা অনুসারে কলেজটি পরিপূর্ণ থাকা সত্ত্বেও নারী শিক্ষার এই প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভূক্ত না হওয়াতে ছাত্রী, শিক্ষক, কর্মচারী, অভিভাকদের ভবিষ্যত গভীর অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি যথাশীঘ্রই এমপিওভুক্ত করা হলে শিক্ষার ক্ষেত্রে অগ্রগতি যেমন বাড়বে, তেমনি বাংলাদেশে নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর নারী শিক্ষার ক্ষেত্রে আব্দুল গফুর চৌধুরী মহিলা কলেজ একটি অনন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করবে। এই কলেজে বর্তমানে ৭ শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। কলেজটিকে দ্রুত এমপিওভুক্ত করার দাবী জানিয়ে স্থানীয় এলাকাবাসী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শিক্ষামন্ত্রী ডা: দিপু মনি ও স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সাবেক চীফ হুইপ উপাধ্যক্ষ মোঃ আব্দুস শহীদসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছেন।
কমলগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনিক কার্যালয় থেকে দেড় কিলোমটার দক্ষিণ দিকে ২০০০ সালে ১.২২ একর জায়গা নিয়ে নিরিবিলি পরিবেশে স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যবসায় ও শিক্ষানুরাগী আলহাজ্ব মুজিবুর রহমান চৌধুরী (হাজী মুজিব) তাঁর পিতা মরহুম আব্দুল গফুর চৌধুরীর নামে এই মহিলা কলেজটি প্রতিষ্ঠা করেন। কলেজের অধ্যক্ষ, ১৬ জন প্রভাষক ও ৫জন কর্মচারী দীর্ঘ ১৯ বছর যাবৎ নামমাত্র সম্মানীতে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে যাচ্ছেন। একদিকে কলেজটি বছরের পর বছর ধরে এমপিওভুক্ত (মান্থলী পে-অর্ডার) না হওয়ায় ও অন্যদিকে কলেজ প্রতিষ্ঠাতা হাজী মুজিব প্রায় ১১ বছর ধরে কোন প্রকার আর্থিক সহায়তা না করায় প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ২২জন শিক্ষক-কর্মচারী ও তাদের পরিবারের সদস্যরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বিগত বছরের পাবলিক পরীক্ষাগুলোতে এ কলেজের ছাত্রীরা কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফল করেছে। দীর্ঘ ১৯ বছরেও এমপিওভূক্ত না হওয়ায় এ প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারীরা মানসিকভাবে হতাশ হয়ে পড়েছেন। বর্তমান দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির যুগে আর্থিক অভাব-অনটনের কারণে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন।
আব্দুল গফুর চৌধুরী মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মো. হেলাল উদ্দিন জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার শিক্ষাবান্ধব সরকার। বিশেষ করে নারী শিক্ষার উন্নয়নে এই সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। অতিসম্প্রতি এমপিওভুক্তির তালিকায় এই কলেজের নাম না থাকায় আমরা চরম হতাশায় আছি। দ্রুত কমলগঞ্জ উপজেলার নারী শিক্ষার একমাত্র উচ্চ বিদ্যাপীঠ আব্দুল গফুর চৌধুরী মহিলা কলেজটিকে এমপিওভুক্ত করার জন্য তিনি সরকারের প্রতি জোর দাবী জানান।