নুসরাত হত্যা মামলায় ১৬ জনের ফাঁসি

30
বহুল আলোচিত ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যা মামলায় মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত ১৬ আসামী।

কাজিরবাজার ডেস্ক :
ফেনীর সোনাগাজী মাদ্রাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলায় অধ্যক্ষ সিরাজউদদৌলাসহ ১৬ জনের ফাঁসির রায় দিয়েছে আদালত। বৃহস্পতিবার সকালে ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ মামুনুর রসিদ এই রায় দেন। ফাঁসির দ-প্রাপ্তরা হচ্ছে সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এস এম সিরাজউদদৌলা, সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি রুহুল আমিন, নূর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, মাকসুদ আলম, সাইফুর রহমান, জোবায়ের, জাবেদ হোসেন প্রকাশ শাখাওয়াত হোসেন জাবেদ, হাফেজ আবদুল কাদের, আফসার উদ্দিন, কামরুন নাহার মণি, উম্মে সুলতানা পপি, আবদুর রহিম শরিফ, ইফতেখার উদ্দিন রানা, ইমরান হোসেন মামুন, শামীম, রুহুল আমিন ও মহিউদ্দিন শাকিল। ফাঁসির পাশাপাশি আসামিদের প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। আসামিদের কাছ থেকে জরিমানার টাকা আদায় করে নুসরাতের পরিবারকে দেয়ার জন্য জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। দ্রুততম সময়ে মাত্র ছয় মাসের মাথায় বহুল আলোচিত এই মামলার রায় প্রদান করা হলো।
সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের প্রতিবাদ করায় গত ৬ এপ্রিল নুসরাতকে সাইক্লোন সেন্টারের ছাদে নিয়ে আগুনে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করা হয়। দগ্ধ নুসরাতকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে চারদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে পরাজিত হন নুসরাত। এই ঘটনায় সারাদেশে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে ওঠে সারাদেশ। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করে এবং গ্রেফতার হয় হত্যাকান্ডে জড়িত আসামিরা। গত ছয় মাসের দ্রুততম সময়ে বিচার প্রক্রিয়া শেষে বৃহস্পতিবার রায় প্রদান করেছে ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল। বেলা ১১টা ৭ মিনিটে বিচারক এজলাসে আসেন এবং আইনজীবীদের উদ্দেশে রায় সম্পর্কে আদালতের অবস্থান নিয়ে কথা বলেন। ১১টা ৮ মিনিটে রায়ের সার সংক্ষেপ পড়া শুরু করেন। তিন পৃষ্ঠার রায়ের সার সংক্ষেপ পড়ে ১১টা ১৮ মিনিটে রায় ঘোষণা করেন এবং এজলাস ত্যাগ করেন। নুসরাতের পরিবার এই রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে। তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে এই রায় বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছে। আসামি পক্ষের আইনজীবীরা জানিয়েছেন, তারা এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপীল করবেন।
রায়ে বিচারক বলেন, সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা ফেনী জেলার অন্যতম বৃহৎ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। দুই হাজারেরও বেশি ছাত্র-ছাত্রী লেখাপড়া করে। এলাকার শিক্ষা সম্প্রসারণে সোনাগাজীর এই মাদ্রাসার আলোকোজ্জ্বল ভূমিকায় কালিমা লেপনের এ ঘটনা বিশ্ব বিবেককে নাড়া দিয়েছে। নারীত্বের মর্যাদা রক্ষায় ভিকটিম নুসরাত জাহান রাফির তেজোদীপ্ত আত্মত্যাগ তাকে ইতোমধ্যে অমরত্ব দিয়েছে। তার এই আত্মত্যাগ চিরকালের অনুপ্রেরণা। পাশাপাশি আসামিদের ঔদ্ধত্য মানবতাকে লজ্জিত করেছে। একারণে দৃষ্টান্তমূলক কঠোরতম শাস্তিই আসামিদের প্রাপ্য। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিচার্য বিষয়ে রাষ্ট্র পক্ষের অনুকূলে সিদ্ধান্ত গ্রহণপূর্বক আসামিদের পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ভিকটিম নুসরাত জাহান রাফিকে চলতি সালের ৬ এপ্রিল ৯টা ৪৫ থেকে ৯টা ৫০ মিনিটের মধ্যে মাদ্রাসার সাইক্লোন সেন্টারের ছাদে ডেকে নিয়ে তারই ওড়না দিয়ে হাত-পা বেঁধে তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধিত /০৩) এর ৪ (১) /৩০ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে উপরোক্ত দ- প্রদানের আদেশ দেয় হলো।
রায়ে আসামিদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উল্লেখ করা হয়েছে
(১) অধ্যক্ষ এস এম সিরাজউদদৌলা : ভিকটিম নুসরাত জাহান রাফিকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার নির্দেশ দেন। (২) নুরউদ্দিন : ভিকটিমকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে নেতৃত্ব দেয়া, সর্বাত্মক সহযোগিতা করা, পরিকল্পনামাফিক ভিকটিমের গায়ে আগুন দেয়ার ঘটনাকে নির্বিঘœ করার জন্য মাদ্রাসার গেটের বাইরে পাহারায় থাকা। (৩) শাহাদাত হোসেন শামীম : ভিকটিমকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার পরিকল্পনা, পরিকল্পনা বাস্তবায়নে নেতৃত্ব দেয়া, আগুন লাগানোর জন্য কেরোসিন সংগ্রহ করা, ভিকটিমের হাত-পা বেঁধে ছাদে ফেলে তার মুখ ও মাথা চেপে ধরে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগানোর ঘটনায় সরাসরি জড়িত ছিল। (৪) মাকসুদ আলম : ভিকটিমকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার পরিকল্পনা করা, পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ১০ হাজার টাকা প্রদান ও হত্যাকা-ের পর ঘটনাটি আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেয়া। (৫) সাইফুর রহমান মোঃ জোবায়ের : ভিকটিমকে আগুন দিয়ে হত্যার পরিকল্পনা করা, আগুন লাগানোর সময় ভিকটিমের ওড়নাকে লম্বালম্বি ছিঁড়ে দুই ভাগ করে ভিকটিমের পা পেঁচিয়ে ম্যাচ দিয়ে কেরোসিন লাগানো কাপড়ে আগুন দেয়া। (৬) জাবেদ হোসেন : ঘটনাকে নির্বিঘœ করার জন্য মাদ্রাসার গেটে পাহারায় থাকা। ভিকটিমকে আগুন দিয়ে হত্যার পরিকল্পনা করা, ভিকটিমের গায়ে আগুন লাগানোর আগে কেরোসিন ঢালা। (৭) হাফেজ আবদুল কাদের : ভিকটিমকে আগুন দিয়ে হত্যার পরিকল্পনা করা। ভিকটিমের গায়ে আগুন লাগানোর ঘটনাকে নির্বিঘœ করার জন্য মাদ্রাসার গেটে ও বাইরে পাহারায় থাকা (৮) আবসার উদ্দিন : ভিকটিমকে আগুন দিয়ে হত্যার পরিকল্পনা করা। আগুন লাগানোর ঘটনাকে নির্বিঘœ করার জন্য মাদ্রাসার গেটের ভেতরে পাহারায় থাকা। (৯) কামরুন নাহার মনি : ভিকটিমকে আগুন দিয়ে হত্যার পরিকল্পনা করা, ভিকটিমের গায়ে আগুন লাগানোর ঘটনার আগে বোরকা ও হাত মোজা সংগ্রহ করা, ভিকটিমকে সাইক্লোন সেন্টারের ছাদের ফ্লোরে শুইয়ে দিয়ে বুক চেপে ধরে আগুন লাগানো নির্বিঘœ করা। (১০) উম্মে সুলতানা পপি : ভিকটিমকে আগুন দিয়ে হত্যার পরিকল্পনা করা, পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অংশগ্রহণ করা, ভিকটিমকে সাইক্লোন সেন্টারে ছাদে ডেকে নেয়া, ভিকটিমের ওড়না খুলে নিয়ে তার অংশ দিয়ে ভিকটিমের হাত বেঁধে ফ্লোরে শুইয়ে পা চেপে ধরে রেখে আগুন লাগানো নির্বিঘœ করা। (১১) আবদুর রহিম শরীফ : ভিকটিমকে আগুন দিয়ে হত্যার পরিকল্পনা করা। আগুন লাগানোর ঘটনাকে নির্বিঘœ করার জন্য মাদ্রাসার গেটের বাইরে পাহারায় থাকা। (১২) ইফতেখার উদ্দিন রানা : ভিকটিমকে আগুন দিয়ে হত্যার পরিকল্পনা করা। আগুন লাগানোর ঘটনাকে নির্বিঘœ করার জন্য মাদ্রাসার গেটের বাইরে পাহারায় থাকা। (১৩) ইমরান হোসেন মামুন : ভিকটিমকে আগুন দিয়ে হত্যার পরিকল্পনা করা। আগুন লাগানোর ঘটনাকে নির্বিঘœ করার জন্য মাদ্রাসার গেটের বাইরে পাহারায় থাকা । (১৪) মোঃ শামীম : ভিকটিমকে আগুন দিয়ে হত্যার পরিকল্পনা করা। আগুন লাগানোর ঘটনাকে নির্বিঘœ করার জন্য মাদ্রাসার ভেতরে সাইক্লোন সেন্টারের নিচে পাহারায় থাকা। (১৫) রুহুল আমিন : নুসরাত জাহান রাফিকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার পরিকল্পনা জ্ঞাত থেকে উক্ত পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অংশ নেয়া ও সর্বাত্মক সহযোগিতা করা, ঘটনার পর আসামিদের বাঁচানোর চেষ্টা করা। (১৬) মহিউদ্দিন শাকিল : ভিকটিমকে আগুন দিয়ে হত্যার পরিকল্পনা করা, পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সহযোগিতা করা। আগুন লাগানোর ঘটনাকে নির্বিঘœ করার জন্য মাদ্রাসার ভেতরে সাইক্লোন সেন্টারের নিচে পাহারায় থাকা। রায়ে উল্লেখ করা হয় ফাঁসির দন্ড ছাড়াও প্রত্যেক আসামিকে এক লাখ টাকা করে জরিমানার। সুপ্রীমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের অনুমোদন সাপেক্ষে দন্ডিত আসামিদের মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত তাদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার কথা। মামলার কার্যক্রম শুরুর ৬২ কার্য দিবসে নুসরাত হত্যা মামলার সকল আনুষ্ঠানিক পর্ব শেষে রায় ঘোষণা করে আদালত। নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টার ঘটনার প্রায় ৭ মাসের মধ্যে দোষীদের বিচার কাজ শেষ হলো। এ সময় আসামিরা আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়েছিল। গত ৩০ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্র, বাদী ও আসামিদের যুক্তিতর্কের ওপর আইনগত প্রশ্নের উত্তর শেষে আদালত ২৪ অক্টোবর রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন। নিñিদ্র নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে সকালে ফেনী কারাগার থেকে ১৬ আসামিকে আদালতে আনা হয়। আসামিদের স্বজন ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আদালত কক্ষের বারান্দায় ও আদালত আঙ্গিনায় রায় শোনার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। সকলের চেহারায় ছিল উৎকণ্ঠার ছাপ। কার ভাগ্যে কী ঘটছে এমন ভাবনা নিয়ে আদালত আঙ্গিনায় পায়চারী করতে দেখা গেছে স্বজনদের।
আসামিদের পরিচিতি :
সোনাগাজীতে আলোচিত নুসরাত হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে মাদ্রাসার অধ্যক্ষসহ ২১ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ও পিবিআই। হত্যাকান্ডের দায় স্বীকার করে আদালতে ১২ আসামি জবানবন্দী দিয়েছেন। হত্যাকান্ডের পর নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান অধ্যক্ষ সিরাজউদদৌলাসহ ৮ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেন। আলোচিত নুসরাত হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত আসামিদের কে কি করেন।
নুসরাত হত্যার নেপথ্যে : ফেনী সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার আলীম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে গত ২৬ মার্চ অধ্যক্ষ সিরাজউদদৌলা তার অফিস কক্ষে ডেকে নিয়ে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে। এ ঘটনায় নুসরাতের মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে গত ২৭ র্মাচ সোনাগাজী থানায় অধ্যক্ষ সিরাজউদদৌলাকে আসামি করে মামলা করেন। এ মামলায় গত ২৭ মার্চ পুলিশ অধ্যক্ষ সিরাজউদদৌলাকে গ্রেফতার করে। সিরাজউদদৌলার নির্দেশে মাকসুদ কমিশনার, সাহাদাত হোসেন শামীম তাদের অনুসারীদের নিয়ে সিরাজউদদৌলার মুক্তির দাবিতে সোনাগাজী বাজারে মানববন্ধন করে এবং থানা ঘেরাও করার চেষ্টা করে। একই সাথে সিরাজউদদৌলার অনুসারীরা নুসরাতকে মামলাটি উঠিয়ে নেয়ার জন্য চাপ অব্যাহত রাখে। নুসরাত মামলাটি উঠিয়ে নিতে অপারগতা প্রকাশ করায় গত ৬ এপ্রিল পরীক্ষার হল থেকে ডেকে নিয়ে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা করে সিরাজউদদৌলার অনুসারী নুসরাতের কয়েকজন সহপাঠী ছাত্র-ছাত্রী। গত ৬ এপ্রিল সকালে সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত আলিমের আরবি পরীক্ষা প্রথম পত্র দিতে মাদ্রাসায় গেলে দুর্বৃত্তরা তাকে ডেকে কৌশলে মাদ্রাসার ছাদে নিয়ে যায়। পরে তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ ঘটনায় দগ্ধ নুসরাত ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৫ দিন পর গত ১০ এপ্রিল রাতে মারা যায়। পরদিন ১১ এপ্রিল বিকেলে সোনাগাজীতে তার জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। নুসরাত মারা যাওয়ার আগে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের বার্ন ইউনিটের ডাক্তারের সামনে ডাইং ডিক্লারেশনে তার ওপর হামলার ঘটনা বলে যায়। নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টাকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেয়ার জন্য স্থানীয় প্রভাবশালী গোষ্ঠী, থানা পুলিশ, স্থানীয় কয়েকজন সুবিধাভোগী সাংবাদিক মরিয়া হয়ে অপপ্রচার চালাতে থাকে। সে সময়ের জেলা পুলিশ সুপার এসএম জাহাঙ্গীর আলম সরকার সোনাগাজী থানার ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের পক্ষে সাফাই গেয়ে নুসরাত আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে বলে পুলিশ সদর দফতরে প্রতিবেদন দেয়। এ প্রতিবেদনের কারণে পরে পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম সরকারকে ফেনী থেকে প্রত্যাহার করে ঢাকা পুলিশ সদর দফতরে নিয়ে যাওয়া হয়। পুলিশ সুপারকে প্রত্যাহারের আগে ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে প্রত্যাহার করা হয়। গত ২৭ মে নুসরাতের শ্লীলতাহানির ঘটনায় ওসি মোয়াজ্জেম নুসরাতকে থানায় জিজ্ঞাসাবাদের নামে হেনস্থা করার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। ভিডিও প্রচারের এ ঘটনায় আইসিটি এ্যাক্টে মামলায় ওসি মোয়াজ্জেম বর্তমানে ঢাকা কারাগারে রয়েছে। নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টার ঘটনায় মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজউদদৌলাকে প্রধান আসামিসহ ৮ জনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান। নুসরাতের ওপর হামলার ঘটনায় ফেনী সোনাগাজীসহ সারাদেশের মানুষ ফুঁসে ওঠে। মশাল মিছিল, মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল করে দোষীদের গ্রেফতার ও বিচার দাবি করে। পিবিআই ও পুলিশ এ মামলায় ২১ জনকে গ্রেফতার করে। এদের মধ্যে হত্যায় সরাসরি জড়িত ৫ জনসহ ১২ জন আসামি আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দী দেয়। এ মামলায় আটক থাকা চার্জশীটের বাইরের ৫ জনকে বিচারিক আদালত মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দেয়। তারা হলেন- কেফায়েত উল্লা, আরিফুল ইসলাম, নূর হোসেন, সাইদুল ইসলাম ও আলাউদ্দিন ।
রায়ের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবী এডভোকেট আক্রামুজ্জামান রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত এ মামলার রায়ে তা প্রমাণ হয়েছে। বাদী পক্ষের আইনজীবী এডভোকেট শাহজাহান সাজু জানান, ক্ষমতায় যেই থাকুক না কেন আইনের চোখে সব সমান, এ যুগান্তকারী রায় অপরাধীদের জন্য একটি মেসেজ। আসামি পক্ষের আইনজীবী এডভোকেট গিয়াস উদ্দিন নান্নু জানান- আসামি পক্ষ রায়ের কপি পাওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে উচ্চ আদালতে আপীল করবে। নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান জানান- রায়ে তারা সন্তুষ্ট। রায় কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত তাদের পরিবারের নিরাপত্তার জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চেয়েছে। নুসরাতের মা শিরিন আক্তার ও বাবা মোঃ মুছা মানিক একই কথা জানান- রায় দ্রুত কার্যকর করার জন্য আবেদন করেন। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান যে, তার হস্তক্ষেপ না হলে দ্রুততম সময়ে এ মামলার রায় হতো না এবং প্রভাবশালীদের দাপটে মামলাটির সুষ্ঠু তদন্ত হতো না।