রেলের জমি উদ্ধার হউক

14

দেশের পুরনো রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি বাংলাদেশ রেলওয়ে। অনেক রেলপথ ও স্টেশন বন্ধ হয়ে গেছে। সরকার রেলওয়েকে নতুন করে গড়ে তুলতে আন্তরিক। নতুন নতুন প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। বন্ধ হয়ে যাওয়া পুরনো রেলপথ নতুন করে চালু করা হচ্ছে। কোনো দিন ট্রেন চলেনি এমন অনেক এলাকায় রেললাইন স্থাপনের কাজ চলছে। অনেক এলাকায় এরই মধ্যে রেলপথ স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে। ট্রেন চলাচল শুরুও হয়েছে। সারা দেশে রেলওয়ের ভূসম্পত্তির পরিমাণও একেবারে কম নয়। এসব ভূসম্পত্তি থেকে একসময় রেলওয়ের ভালো উপার্জনও হতো। কিন্তু একটি অসাধু চক্র রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে দীর্ঘদিন থেকেই রেলওয়ের ভূসম্পত্তি দখল করে আছে। অনেক জমি চলে গেছে এই চক্রের সদস্যদের ব্যক্তিমালিকানায়। এসব জমি বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ব্যবহৃত হচ্ছে; কিন্তু বঞ্চিত হচ্ছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।
সূত্র মতে বাংলাদেশ রেলওয়ের ৬১ হাজার ৮৬০ একর জমির মধ্যে তিন হাজার ৮৪১ একর জমি দখলবাজরা দখল করে নিয়েছে। গায়েব করা হয়েছে এক হাজার ৮৪১ একর জমির নথি। গত ১০ বছরের চেষ্টায় পূর্ব ও পশ্চিম রেলওয়ের এক হাজার ১৮৫ একর জমি উদ্ধার করা হলেও তা আবার দখল হয়ে যায়। গত আগস্ট মাস থেকে রেলওয়ে নতুন করে উদ্ধার অভিযান শুরু করলেও বিভিন্ন স্থানে প্রভাবশালীদের বাধার মুখে তা বন্ধ হওয়ার পথে। রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের পাশাপাশি সরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দখলে রয়েছে রেলওয়ের ৯২২ একর জমি। বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান দখল করে রেখেছে রেলওয়ের দুই হাজার ৮২৮ একর জমি। অন্যদিকে ৯০ একর জমি রয়েছে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নামে। মাত্র ১৪ হাজার ৪৭৩ একর জমি ইজারায় ব্যবহৃত হচ্ছে। আবার রেলওয়ের জমি ইজারা নিয়ে তা নিজেদের নামে রেকর্ড করে নেওয়ার ঘটনাও আছে। কৃষিকাজে ইজারা নেওয়া জমি ব্যবহৃত হচ্ছে বাণিজ্যিক কাজে। রেলের জমি দখল করে মার্কেট বানিয়ে পজেশন বিক্রিও হচ্ছে। খোদ রাজধানী ঢাকায়ই রেলের জমিতে গড়ে উঠেছে বহুতল ভবন। রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে এই জমি দখলে নিতে পারেনি রেলওয়ে। চার দশকেও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি ফুলবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনের দখল হয়ে যাওয়া তিন দশমিক ৯৭ একর জমি। আবার এক হাজার ৮৪১ একর জমির দলিল বা আনুষঙ্গিক কাগজপত্র রেলওয়ের কাছে নেই।
দখল হওয়া জমি উদ্ধারে রেলওয়ের অভিযান আরো জোরদার করতে হবে। লাভজনক একটি খাতকে এভাবে ডুবে যেতে দেওয়া যায় না। রেলওয়ের সম্পত্তি রেলওয়ের দখলে রাখতে হবে। জমি ইজারার নীতিমালা সংশোধন করে যে খসড়া সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়েছে, তা দ্রুততম সময়ের মধ্যে চূড়ান্ত করা গেলে রেলের জমি উদ্ধার করা সহজ হবে।