নিজ গ্রামে চির নিদ্রায় শায়িত আবরার

12

কাজিরবাজার ডেস্ক :
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যার প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছে কুষ্টিয়া। খুনীদের দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মঙ্গলবার সকালে আবরারের মরদেহ নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করে কুমারখালী উপজেলার কয়া ইউনিয়নের বিক্ষুব্ধ সর্বস্তরের জনতা। এদিকে সাধারণ মানুষের শেষ শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় কুষ্টিয়ার রায়ডাঙ্গা গ্রামে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন ছাত্রলীগের নির্মম নির্যাতনে নিহত বুয়েটের মেধাবী শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ। মঙ্গলবার সকালে কুষ্টিয়া শহরের পিটিআই রোডের আল-হেরা জামে মসজিদ চত্বরে দ্বিতীয় এবং সকাল ১০টায় কুমারখালী উপজেলার কয়া ইউনিয়নের রায়ডাঙ্গা গ্রামের বাড়িতে তৃতীয় জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। কুষ্টিয়ায় দুই দফা জানাজা ও শেষবারের মতো একনজর ফাহাদের লাশ দেখতে এখানে নারী-পুরুষসহ কয়েক হাজার মানুষের ঢল নামে। এদিকে লাশ দাফনের প্রস্তুতিকালে ফাহাদের নিজ গ্রাম কুমারখালীর রায়ডাঙ্গা গ্রামে কয়েক শ’ মানুষ প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। বিক্ষোভকারীরা মেধাবী বুয়েট ছাত্র ফাহাদের হত্যাকারীদের অবিলম্বে ফাঁসির দাবি জানান। এর আগে মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে ঢাকা থেকে ফাহাদের মরদেহ বহনকারী লাশবাহী গাড়ি কুষ্টিয়ায় এসে পৌঁছলে সেখানে এক হৃদয়-বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। নিহতের পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এ সময় তাদের আহাজারি ও বিলাপে পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে। পরিবার-পরিজনের পাশাপাশি লাশ দেখতে আসা এলাকাবাসীও চোখ থেকেও অশ্রু ঝরতে থাকে। সম্ভাবনাময় মেধাবী ছাত্র ও স্বপ্নের ধন পুত্র আবরার ফাহাদকে হারানোর শোকে মুহ্যমান মা রোকেয়া খাতুন। পাগলপ্রায় পিতা বরকত উল্লাহ ও ছোট ভাই আবরার ফাইয়াজ। রায়ডাঙ্গা গ্রামেও ছিল একই দৃশ্য। পুরো গ্রাম ছিল শোকে মুহ্যমান। ফাহাদকে দেখতে আসা স্বজনদের সঙ্গে গ্রামবাসীদের চোখেও ছিল অশ্রুধারা। এমনকি কয়েকজন পুলিশ সদস্যকেও কাঁদতে দেখা যায়। কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছেন ফাহাদের বাবা বরকত উল্লাহ। কোনভাবেই তিনি মেনে নিতে পারছেন না যে, তার ছেলেকে কয়েকজন পিটিয়ে মেরে ফেলেছে। তিনি বিলাপ করে বলতে থাকেন, ‘এটা পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। যে ছেলেটা বিকেল ৫টায় ঢাকায় গেল, তাকে ৮টার দিকে নির্যাতন করার জন্য ডেকে নিয়ে গেল। ছয় ঘণ্টা ধরে নির্যাতন চালাল, এটা অবশ্যই পরিকল্পিত।’ ‘এ ঘটনায় কোন নেতার ইন্ধন রয়েছে। কেননা দু’একজন নয়, সেখানে ১৫ জনের বেশি ছেলে এই হত্যায় অংশ নিয়েছে। পরিকল্পনা ছাড়া ১০/১৫ জন ব্যক্তি কাউকে মারতে পারে না। হাইকমান্ডের নির্দেশে এই হত্যাকান্ড ঘটানো হয়েছে’। নির্মম ও পৈশাচিক এ হত্যাকা-ে জড়িতদের প্রতি চরম ঘৃণা প্রকাশসহ তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন নিহতের পরিবার ও এলাকাবাসী। রায়ডাঙ্গা গ্রামেও জানাজা শেষে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় বিক্ষুব্ধ জনতা শ্লোগানে-শ্লোগানে প্রতিবাদ জানাতে থাকেন এবং হত্যাকাণ্ডে জড়িত প্রত্যেকের ফাঁসির দাবি জানান। হত্যাকারীদের একমাত্র পরিচয় তারা অপরাধী। তাই ফাহাদ হত্যাকারীরা দলীয় পরিচয়ে যেন কোনভাবেই পার পেয়ে না যায় সে দাবিও তোলেন বিক্ষুব্ধ জনতা। লাশ দাফনের পর পরই বিচারের দাবিতে মিছিলসহ প্রতিবাদী জনতার ঢল নামে রায়ডাঙ্গা গ্রামে।
এর আগে সোমবার রাত পৌনে ১০টায় বুয়েটের কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে আবরার ফাহাদের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। আবরার ফাহাদের হত্যার প্রতিবাদে এবং হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে মঙ্গলবার দুপুরে কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে বাংলাদেশ জাতীয় মানবাধিকার সমিতি কুষ্টিয়া জেলা শাখার নেতাকর্মীরা। অপরদিকে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে বুধবার জেলার বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধন কর্মসূচী ঘোষণা করা হয়েছে। সোমবার দুপুর আড়াইটার দিকে কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থীরা। উল্লেখ্য, বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল এ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তার পিতা বরকত উল্লাহ বাদী হয়ে ১৯ জনের নামে থানায় মামলা করেন। পুলিশ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে এ পর্যন্ত ছাত্রলীগ বুয়েট শাখার সাধারণ সম্পাদকসহ নয়জনকে আটক করেছে।