প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে ৫ দিনব্যাপী শারদীয় দুর্গোৎসব সম্পন্ন

9
শারদীয় দুর্গা পূজা উপলক্ষে চাঁদনীঘাটে প্রতিমা বিসর্জন অনুষ্ঠান পরিদর্শন করছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।

স্টাফ রিপোর্টার :
টানা ৫ দিন পূজার পর প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মী উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। গতকাল মঙ্গলবার বিকেল সোয়া ৪টা থেকে শুরু হওয়া নগরীর সুরমা নদীর চাঁদনীঘাট এলাকায় দেয়া হয় প্রতিমা বিসর্জন। সিলেট পূজা উদযাপন পরিষদের আয়োজনে শারদীয় দুর্গোৎসব-১৪২৬ বাংলা প্রতিমা নিরঞ্জন অনুষ্ঠান ‘সুবোধ মঞ্চ’ তৈরী করে এ বিসর্জন চলে রাত ১০ টা পর্যন্ত।
জানা গেছে, গত চার অক্টোবর ষষ্ঠী পূজা দিয়ে শুরু হয়েছিল দুর্গাপূজা। গতকাল মঙ্গলবার বিজয়া দশমীর শেষ দিনে বিকেল সোয়া ৪টায় থেকে শুরু হয় প্রতিমা বিসর্জন। বিকেল থেকেই নগরীতে ধূপ-দীপ,নাচ,গান,বাজনা বাজিয়ে ট্রাকে করে মহানগরী, সদর ও দক্ষিণ সুরমা

চাঁদনীঘাটে নগরীর বিভিন্ন পূজা মন্ডপ থেকে আগত শারদীয় দুর্গা পূজার প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হচ্ছে।

উপজেলার মন্ডপ থেকে প্রতিমা নিয়ে আসা হয় সুরমা নদীর তীরে। একে একে করে নদীতে দেয়া হয় প্রায় ৮০ টার মতো প্রতিমা বিসর্জন। তখন আশপাশ এলাকায় লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠেছিল বিসর্জনস্থল। কেউ কেউ নদীর পাড়ে, কীন ব্রীজের উপরে, আবার কেউ কেউ নদীতে নৌকা করে পুণ্যার্থীরা বিসর্জনের যাত্রা উপভোগ করছিলেন। পুলিশ ও আইন-শৃংঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এ সময় কঠোর নিরাপত্তায় নিয়োজিত ছিলেন। এ উপলক্ষে বিসর্জনস্থলে বসেছে মেলা। অনেকেই সেই মেলা থেকে মুড়ি-মুড়কী ও শিশুদের খেলার জিনিস কিনে বাড়ী ফিরতে দেখা গেছে।
শারদীয় দুর্গোৎসবের শেষ দিন ছিলো সোমবার। বিজয়া দশমীতে বিসর্জনের মধ্য দিয়ে মর্ত্য ছেড়ে কৈলাসে স্বামীগৃহে ফিরে যাবেন দুর্গতিনাশিনী দুর্গা। পেছনে ফেলে যাবেন ভক্তদের পাঁচদিনের আনন্দ-উল্লাস, আরাধনা এবং বিজয়াশ্র“। তাই মন্ডপে মন্ডপে এখন বিষাদের সুর।
পুরাণ অনুসারে, দুর্গা যেমন অসুরবিনাশী দেবী তেমনি তিনি দুর্গতিনাশিনী। যিনি জীবের দুর্গতি নাশ করেন। তিনি এবার এসেছিলেন ঘোড়ায় করে। দেবী দুর্গা অসুরদের দলপতি মহিষাসুরকে বধ করে দেবকুলকে রক্ষা করেছিলেন। তাঁর এই জয়ের মধ্য দিয়ে অন্যায় ও অশুভর বিরুদ্ধে ন্যায় ও শুভশক্তির জয় হয়েছিল।
মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদর সাধারণ সম্পাদক রজত কান্তি গুপ্ত জানান, এবার সিলেটে ৬০৮টি মন্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। নগরীতে এবার ৬৬টি মন্ডপে পূজা উদযাপন করা করা হয়। তন্মধ্যে ৫১টি মন্ডপ সর্বজনীন, ১৫টি পারিবারিক। তিনি বলেন, সিলেট জেলার ১৩টি উপজেলায় মন্ডপ ছিলো ৫৪২টি। তন্মধ্যে সর্বজনীন ৫০৩টি, পারিবারিক ৩৯টি। গেল বছর সিলেটে ৫৯৮টি মন্ডপে পূজা উদযাপন করা হয়। এ হিসেবে এবার মন্ডপ বেড়েছে ১০টি।
এদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন বলেছেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ হিসেবেই বিশ্ব দরবারে পরিচিত। এ দেশের মাটি যেমন নরম ও উর্বর তেমনি মানুষের অন্তরও কোমল ও সহানুভূতিপূর্ণ। এ দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ইতিহাস বহু পুরনো। আমাদের ধর্মীয় স্বাতন্ত্র্যবোধ কখনও সামাজিক সহাবস্থানে ফাটল ধরাতে পারেনি। গতকাল মঙ্গলবার নগরীর চাঁদনীঘাট এলাকায় প্রতিমা নিরঞ্জন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, বিশেষ করে সিলেটের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উদাহরণ অতুলনীয়। এখানে মুসলমান, হিন্দুসহ সকল ধর্মের মানুষের সহাবস্থান রয়েছে। নগরীতে এবার ১৩২টি মন্ডপে পূজা র আয়োজন করা হয়। সবগুলো স্থানে কোনো ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়া সম্পন্ন হয়েছে । এতে প্রমাণ করে যে সিলেটের মানুষ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ। তিনি বলেন, যখন দেশের বাহিরে ছিলাম ভাবছিলাম যে এই বছর সিলেটে পূজা মন্ডপ দেখবো আজ তা দেখলাম এবং খুব ভালো লাগলো। এই বিসর্জন অনুষ্ঠানে শুধু হিন্দু ধর্মের মানুষ নয় আগমন ঘটেছে সকল ধর্মের মানুষ। আর এই আয়োজনগুলো সুষ্ঠভাবে সমাপ্তির জন্য সহযোগিতা করেছেন আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই দেশের মানুষের জন্য দিন রাত কাজ করছেন। আমরা আজকে এই প্রতিমা বিসর্জনের মাধ্যমে সকলের মঙ্গল বয়ে আনুক।
মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রজত কান্তি গুপ্ত উপস্থাপনায় বক্তব্য রাখেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান, সূচনা বক্তব্য রাখেন, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, সহসভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালিক, মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক বিজিত চৌধুরী, সাবেক কাউন্সিলর জগদীশ চন্দ্র দাস, মহানগর যুবলীগের সভাপতি আলম খান মুক্তি, সাধারণ সম্পাদক মুশফিক জায়গীরদার প্রমুখ।