রামকৃষ্ণ মিশন ও ঢাকেশ্বরীর পূজামন্ডপ পরিদর্শনকালে প্রধানমন্ত্রী ॥ অসাম্প্রদায়িক চেতনা নিয়ে চলতে শিখেছি, এটাই বড় অর্জন

6

কাজিরবাজার ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সব সময় বলি ধর্ম যার যার উৎসব সবার। উৎসবগুলোতে আমরা সবাই এক হয়ে উদ্যাপন করি। আমরা অসাম্প্রদায়িক চেতনা নিয়ে চলতে শিখেছি। এটাই হচ্ছে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় একটা অর্জন। অসাম্প্রদায়িক চেতনায় যার যার ধর্মপালন করার যে পরিবেশ দেশে সৃষ্টি হয়েছে তা বজায় থাকবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। সোমবার বিকেলে শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশনের পূজামন্ডপ পরিদর্শনকালে তিনি এ কথা বলেন। পরে প্রধানমন্ত্রী ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির ও পূজামন্ডপ পরিদর্শন করেন এবং সেখানেও সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই যে অসাম্প্রদায়িক চেতনা নিয়ে সৌহার্দ্যপূর্ণভাবে যার যার ধর্ম পালন করার চমৎকার পরিবেশ সৃষ্টি করতে পেরেছি, এই পরিবেশটাও যেন চিরদিন অব্যাহত থাকে, আর সকলের জীবনমান যেন উন্নত হয়। বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক চেতনার। বাংলাদেশে ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সকলে এক হয়ে আমরা পথ চলি। দুর্গোৎসবের নবমীতে প্রধানমন্ত্রী রামকৃষ্ণ মিশনে পৌঁছলে তাকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান মঠ ও মিশন প্রধান স্বামী পুণ্যাত্মানন্দসহ মিশনের কর্মকর্তারা। স্বামী পুণ্যাত্মানন্দ তার লেখা বই প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দেন। প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সবার লড়াই করার কথা তুলে ধরে বলেন, আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ, যে মুক্তিযুদ্ধের ডাক দিয়েছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার ডাকে সাড়া দিয়ে এদেশে সকল ধর্মের মানুষ, অর্থাৎ হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রীস্টান সকল ধর্ম এক হয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করে বুকের রক্ত বিলিয়ে দিয়ে এই বাংলাদেশ স্বাধীন করেছে। কাজেই সেই স্বাধীন বাংলাদেশে আমরা সব সময় চেয়েছি- প্রতিটি ধর্মের মানুষ তার নিজ নিজ ধর্ম স্বাধীনভাবে, সম্মানের সঙ্গে পালন করতে পারবে সেই পরিবেশটা সৃষ্টি করা এবং আমরা তা করতে পেরেছি। অন্তত এটুকু বলতে পারি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসে তখন সে সুন্দর পরিবেশটা সৃষ্টি হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রত্যেকে প্রত্যেকের ধর্মকে আমরা সম্মান করি এবং আমরা চাই আমাদের দেশে শান্তি ফিরে আসুক। এদেশে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক, দুর্নীতি এই ধরনের যেসকল ব্যাধি সমাজকে নষ্ট করে, দেশকে নষ্ট করে, পরিবারকে নষ্ট করে, পরিবারের জীবনকে অতিষ্ঠ করে সেই ধরনের অবস্থা যেন না থাকে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে শান্তি বজায় থাকবে, সমৃদ্ধি ও উন্নতি হবে এবং বাংলাদেশের অগ্রগতি অব্যাহত থাকবে সেটাই আমরা চাই। পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ‘সদ্ভাব’ থাকার কথা তুলে ধরে সম্প্রতি তার ভারত সফরের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, শনিবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিসহ আমরা যৌথভাবে রামকৃষ্ণ মিশনের ছাত্রাবাস এবং একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান উদ্বোধন করেছি; যেখানে হিন্দু, সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করতে পারবে। শেখ হাসিনা বলেন, আরেকটি উৎসব আমরা করছি সেটা হলো পহেলা বৈশাখ, বাংলা নববর্ষ, ধর্মবর্ণ নির্বিশেষ সকলে এক সঙ্গে সেদিনটি আমরা উদযাপন করি। আমরা সরকারের পক্ষ থেকেও পহেলা বৈশাখি উৎসব ভাতা দিচ্ছি। পূজামন্ডপগুলোর নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে মন্তব্য করে তাদের ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, এই যে একটা সৌহাদ্যপূর্ণ পরিবেশ আমরা সৃষ্টি করতে পেরেছি। সকল ধর্মের মূল কথা- শান্তি, মানবতা; সেই শান্তি, মানবতা সে লক্ষ্য নিয়েই বাংলাদেশ গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশ সেভাবে এগিয়ে যাবে, এটা আমরা বিশ্বাস করি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে শান্তি বজায় থাকবে। বাংলাদেশের সমৃদ্ধি হবে। বাংলাদেশের উন্নতি হবে। বাংলাদেশের অগ্রগতি অব্যাহত থাকবে এটাই আমরা চাই। সম্প্রীতি-সমৃদ্ধির জন্য প্রার্থনা করতে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পূজায় আপনারা প্রার্থনা করবেন যেন বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকে। শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও নিরাপদ পরিবেশে দুর্গোৎসব পালন এবং দেশে পূজামন্ডপের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান স্বামী পুণ্যাত্মানন্দ। স্থানীয় এমপি কাজী ফিরোজ রশীদ ও আইজিপি জাবেদ পাটোয়ারী এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকেশ্বরী মন্দিরে পূজামন্ডপ পরিদর্শনকালে প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নিহত হওয়া পরবর্তী বৈরী সময়ের কথা তুলে ধরে বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর এদেশের মানুষের ওপর অনেক নির্যাতন, অত্যাচার হয়েছে। ধর্ম পালনের স্বাধীনতা হারিয়ে ফেলেছিল প্রায়। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর থেকে জাতির পিতার আদর্শ-চেতনা ধারণ করে আমরা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি অসাম্প্রদায়িক চেতনায়। যেখানে সব ধর্মের মানুষ তার ধর্ম স্বাধীনভাবে পালন করতে পারবে। সবাই উৎসব উদযাপন করতে পারবে। সে কারণে আমরা এই স্লোগানটা নিয়ে এসেছি- ধর্ম যার যার উৎসব সবার। প্রতিটি ধর্মের মর্মবাণী প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, প্রতিটি ধর্মের মর্মবাণী কিন্তু একটাই। সেখানে ভাতৃত্বের কথা বলা আছে। সহনশীলতার কথা বলা আছে। শান্তির কথা বলা আছে। ছোট ছোট করে অনেক জায়গায় পূজামন্ডপ না করে বড় পরিসরে এক জায়গায় আয়োজনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী। ঢাকেশ্বরী মন্দির ও পূজামন্ডপ পরিদর্শনের সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন, স্থানীয় সংসদ সদস্য হাজি সেলিম, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি মিলন কান্তি দত্ত, সাধারণ সম্পাদক নির্মল কুমার চ্যাটার্জী প্রমুখ। সভাপতিত্ব করেন মহানগর পূজা কমিটির সভাপতি শৈলেন্দ্রনাথ মজুমদার।