দুদকের হাতে ক্যাসিনোর অবৈধ সম্পদের মালিক ১৫-২০ জনের তালিকা

10

কাজিরবাজার ডেস্ক :
ক্যাসিনোর মাধ্যমে যারা অবৈধ সম্পদ গড়ে তুলেছেন এমন ১৫ থেকে ২০ জনের নামের তালিকা আমরা হাতে পেয়েছি। তাদের সম্পর্কে অনুসন্ধান করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। বর্তমান সরকার যেভাবে ঘুষ-দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহিষ্ণুতার নীতি অনুসরণ করছে, দুদক ঠিক একই নীতি বাস্তবায়ন করছে বলেও জানান তিনি। সোমবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিস্ক ফ্যাক্টর নির্ণয় করে পদ্ধতিগত সংস্কারের মাধ্যমেই দুর্নীতি প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। সোমবার রাজধানীর আমারি হোটেলে ইউনাইটেড ন্যাশনস অফিস অন ড্রাগস এ্যান্ড ক্রাইমের (ইউএনওডিসি) উদ্যোগে ‘করাপশন রিস্ক এ্যাসেসমেন্ট এ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট’ শীর্ষক এক প্রশিক্ষণ কর্মসূচীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দুদক চেয়ারম্যান এ কথা বলেন। ন্যাশনাল ট্রেনিং ফর এন্টি করাপশন কর্মসূচীর অংশ হিসেবে এ প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়।
দুদক প্রধান কার্যালয়ে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে দুদকের ভূমিকা কী সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ক্যাসিনো ব্যবসা দুদক আইনের তফসিলভুক্ত অপরাধ নয়। তবে এই ব্যবসার মাধ্যমে যারা জ্ঞাত আয়ের উৎস বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন তাদের বিষয়টি দুদক আইনের তফসিলভুক্ত অপরাধ হওয়ায় কমিশন এ বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে। অপর এক প্রশ্নের উত্তরে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ১৫ থেকে ২০ জনের বিষয়ে গণমাধ্যম, দুদকের নিজস্ব গোয়েন্দা তথ্য এবং অন্য সংস্থা থেকে তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের বিষয়ে অনুসন্ধান করা হচ্ছে। ওই ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা আইনী পথে চলতে চাই। অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা যদি মনে করেন, জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন তা হলে তা করবেন। প্রয়োজনে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এক প্রশ্নের জবাবে ইকবাল মাহমুদ বলেন, কোন ব্যক্তি বা কোন বিশেষ পেশা দুদকের নিকট মুখ্য নয়। দুদকের বিচার্য বিষয় হচ্ছে দুর্নীতি হয়েছে কিনা এবং তা কমিশন আইনের তফসিলভুক্ত অপরাধ কিনা। যদি অপরাধটি কমিশন আইনের তফসিলভুক্ত হয়, তাহলে সে যেই হোক তাকে ছাড় দেবে না কমিশন।
১ অক্টোবর সরকারী কর্মচারী আইন কার্যকর হয়েছে। তা সত্ত্বেও দুই সরকারী কর্মচারী গ্রেফতারের বিষয়ে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, ঘুষ খাওয়া সরকারী দায়িত্ব নয়। বর্তমান সরকার যেভাবে ঘুষ-দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহিষ্ণুতার নীতি অনুসরণ করছে, দুদক ঠিক একই নীতি বাস্তবায়ন করছে। এখানে ভুল বোঝাবুঝির কোন অবকাশ নেই। জাতীয় সংসদে যেসব আইন পাস হয়, তার প্রতি সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা রেখেই দায়িত্ব পালন করছে দুদক।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, আমার যতটা মনে আছে, সরকারী কর্মচারী আইনে বলা হয়েছে সরকারী দায়িত্ব পালনকালে যদি কোন ফৌজদারি মামলা হয়, তবে চার্জশীট না হওয়া পর্যন্ত তাদেরকে সরকারের অনুমতি ছাড়া গ্রেফতার করা যাবে না। সোমবার সকালে ঠাকুরগাঁওয়ে সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ আনিসুর রহমান ও একই অফিসের অফিস সহকারী মোঃ জুলফিকারকে ৫০ হাজার টাকা ঘুষসহ হাতেনাতে গ্রেফতার করে দুদক। সোমবার সকাল সাড়ে নয়টায় দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় দিনাজপুরের একটি বিশেষ টিম তাদের গ্রেফতার করে।
একইদিনে অপর এক অনুষ্ঠানে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেছেন, দুর্নীতি বৈশ্বিক সমস্যা। তবে এ কথাও ঠিক বেশ কিছু রাষ্ট্র পদ্ধতিগত সংস্কারের মাধ্যমে দুর্নীতি প্রতিরোধে কাক্সিক্ষত মাত্রায় সফল হয়েছে। এদেশেও রিস্ক ফ্যাক্টর নির্ণয় করে পদ্ধতিগত সংস্কারের মাধ্যমেই দুর্নীতি প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। তিনি বলেন, প্রথমে ব্যক্তি, পরবর্তীতে সেক্টরভিত্তিক এবং সর্বশেষ সার্বিকভাবে রিস্ক ফ্যাক্টর নির্ণয় করে তা নিরসনে সমন্বিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা গেলে অবশ্যই দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরা সম্ভব। অনুষ্ঠানে ইউএনওডিসির রিজিওনাল এ্যাডভাইজার জোরানা মার্কোভিস বক্তব্য প্রদান করেন।