ড. কামালের উপস্থিতিতে বৈঠকে নেই বিএনপি ॥ নয় মাসের মাথায় সক্রিয় হওয়ার সিদ্ধান্ত ঐক্যফ্রন্টের, কর্মসূচি আসছে

11

কাজিরবাজার ডেস্ক :
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর নয় মাসের মাথায় কর্মসূচি নিয়ে সামনে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) মতিঝিলে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের চেম্বারে সাড়ে চার ঘণ্টাব্যাপী অনুষ্ঠিত বৈঠকে ফ্রন্টের শরিক দলের নেতারা কয়েকটি বিষয়ে নীতিগতভাবে একমত পোষণ করেন। সভায় বিএনপির কোনও প্রতিনিধি না থাকলেও দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ফোমবাইল ফোনে যুক্ত ছিলেন। বৈঠকে অংশ নেওয়া শরিক দলের একাধিক নেতা এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বৈঠকের পর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির পাশাপাশি সরকারের পদত্যাগ দাবিতে একটি বিবৃতিও দেয় ঐক্যফ্রন্ট।
বিএনপির একটি দায়িত্বশীল সূত্র মনে করছে, দুটি বিষয়কে সামনে রেখেই জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সক্রিয় হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রথমত, ফ্রন্টকে ‘দুর্বল করার বিষয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলার’ বিষয়টি ঠেকানো। একইসঙ্গে এই নয় মাসে সরকারবিরোধী জোটের দিকে জনমত গড়ে ওঠারও সম্ভাবনা দেখছেন ফ্রন্টের নেতারা। ফলে বিষয়টিকে রাজনৈতিকভাবে কাজে লাগাতে তৎপর হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে শরিক দল—নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘আমরা মনে করি, ঐক্যফ্রন্টকে কার্যকর করা দরকার। কর্মসূচি নিয়ে সামনে আসবো। সময় হলেই তা পরিষ্কার হবে।’
বৈঠকসূত্র জানায়, প্রায় নয় মাস নিষ্ক্রিয় থাকার পর কয়েকটি ইস্যুতে সক্রিয় হওয়ার বিষয়ে আলোচনা করেছেন ঐক্যফ্রন্টের শরিকেরা। বৈঠকে ফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন ছাড়াও জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, গণফোরাম সাধারণ সম্পাদক ড. রেজা কিবরিয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
জানা গেছে, বৈঠকে সম্প্রতি ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান নিয়ে আলোচনা হয়। এ প্রসঙ্গে রেজা কিবরিয়া বলেন, ‘আমরা মনে করি, সরকারের এই অভিযানে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির অপরাধী ও নেতাদের ধরা হচ্ছে। এতে কোনও কাজ হবে না। শেয়ারবাজার, ব্যাংক লুটেরাদের আইনের আওতায় আনা দরকার।’
ফ্রন্টের আরেক নেতা দাবি করেন, তাদের কাছে বিভিন্ন পক্ষ থেকে সরকারের বর্তমান ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান ও অর্থ উদ্ধারের বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবে দেখার পরামর্শ এসেছে। যদিও জবাবে বলা হচ্ছে, এই অভিযানের সরকারের আন্তরিকতার চেয়ে ভিন্ন কোনও উদ্দেশ্য হাসিলেই লক্ষ্য।
এ বিষয়ে গণফোরাম সাধারণ সম্পাদক রেজা কিবরিয়া বলেন, ‘ঠিক কী কারণে এই অভিযান, এ বিষয়ে সরকারের ভেতরে কী হচ্ছে, তার কোনও তথ্য আমাদের কাছে নেই।’
বৈঠকে অংশ নেওয়া একাধিক দলের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা জানান, বৈঠকে ফ্রন্টের দীর্ঘদিন নিষ্ক্রিয় থাকা, কাদের সিদ্দিকীর প্রস্থান, সমন্বয়-পদ্ধতি ও চলমান জাতীয় ইস্যুতে কর্মসূচি দেওয়ার বিষয়ে একাধিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—আগামী ১৩ অক্টোবর ঢাকায় একটি আলোচনা সভার আয়োজন করা, যেখানে আগামী দিনে কোন প্রক্রিয়ায় সামনে এগিয়ে যাবে ঐক্যফ্রন্ট—এর একটি নির্দেশনা নেতাদের বক্তব্যে থাকতে পারে। এরপর বিষয়ভিত্তিক বিভিন্ন দাবিতে জনসভার দিকে যেতে পারে ফ্রন্ট। যদিও বিষয়টি নিয়ে এখনও ডেটলাইন ঠিক করা হয়নি।’
ফ্রন্টের একাধিক শরিক দলের নেতা বলেন, গত ৯ মাসে বিএনপি নিজস্ব কর্মসূচি ও সংগঠন নিয়ে ব্যস্ত থাকায় জোটগতভাবে কোনও কর্মসূচি দেওয়া হয়নি। আজকের আলোচনায় কর্মসূচি নিয়ে বিএনপির অবস্থান জানতে চাওয়ার পর দলটির পক্ষ থেকে সম্মতি দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে রেজা কিবরিয়া বলেন, ‘আজ বিএনপির কোনও প্রতিনিধি বৈঠকে উপস্থিত না থাকলেও ফোনে আমরা সংযুক্ত ছিলাম। বিবৃতি পাঠানোর আগে খসড়া তাদের কাছে পাঠিয়েছি।’
জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘কখনোই কর্মসূচি দিতে আমাদের অসম্মতি ছিল না। ঐক্যফ্রন্ট কখনও নিষ্ক্রিয় ছিল না। মিটিং হচ্ছে, কথা হচ্ছে।’
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘আমরা সব সময় কথা বলি। আজ বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে আমি ছিলাম না, বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। যেকোনও কর্মসূচিই আসুক, তা সবাই মিলেই সিদ্ধান্ত নেবো। চূড়ান্ত হওয়ার পর আমরা সবাইকে জানাবো।’