শাবিতে জাফর ইকবালের ২৫ বছর ॥ ২০০ ডলার পরিশোধের চেয়ে বিয়ে করা ভালো : জাফর ইকবাল

20
হবিগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে চলাচলরত সিএনজিচালিত অটোরিক্সার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করার সময় হামলার শিকার হয়েছে পুলিশ সদরা। বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে হবিগঞ্জের বাহুবলে সিএনজিচালিত অটোরিক্সা শ্রমিদের হামলার শিকার হয় পুলিশ। এতে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ (ওসি) উভয় পক্ষের অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছে। ঘটনার পর গ্রেফতার আতঙ্কে পালিয়ে বেড়াচ্ছে অটোরিক্সা শ্রমিকরা। স্থানীয়রা জানান, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে চলাচলরত সিএনজিচালিত অটোরিক্সা (থ্রি হুইলার) আটকে দুপুরে অভিযান চালায় পুলিশ। এ সময় পুলিশের সঙ্গে কয়েকজনের চালকের বাগবিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়লে পালিয়ে যায় তারা। ওসিসহ আহত উপ পরিদর্শক (এসআই) মাসুক মিয়া, সহকার উপ পরিদর্শক (এএসআই) হাবিবুর রহমান, কনস্টেবল রিফাত, আমিনুল হোসেন, রফিকুল ইসলাম ও নিশান কান্ত দেবকে হবিগঞ্জ আধুনিক সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। শায়েস্তাগঞ্জ হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লিয়াকত আলী জানান, মহাসড়কে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচলে হাইকোর্ট থেকে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। যে কারণে বৃহস্পতিবার দুপুরে মিরপুর এলাকা থেকে একটি অটোরিকশা আটক করে পুলিশের গাড়ির পেছনে বেঁধে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। এ সময় শ্রমিকরা পুলিশের ওপর হামলা করে এবং ইটপাটকেল ছুড়লে সাত পুলিশ সদস্য আহত হন। পরিস্থিতি শান্ত করতে পুলিশ ৮ রাউন্ড ফাঁকাগুলি নিক্ষেপ করেছে বলেও জানান তিনি। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক শ্রমিক নেতার দাবি, মহাসড়কে সিএনজিচালিত অটোরিক্সা চালানোর জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে মাসোহারা দেওয়া হতো। তবুকে কেন এ অভিযান চালানো হচ্ছে সে জন্য শ্রমিকদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছে। এদিকে সংঘর্ষের পর জেলাজুড়ে কাগজপত্রবিহীন সিএনজিচালিত অটোরিক্সা শ্রমিকদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। গ্রেফতার এড়াতে গা-ঢাকা দিয়েছে মহাসড়কে চলাচলরত সিএনজিচালিত অটোরিক্সা চালকরা। এ ব্যাপারে কথা বলতে মহাসড়কের মিরপুর এলাকায় চলাচলত অটোরিক্সা শ্রমিক নেতাদের মোবাইল ফোনে বার বার কল করলেও বন্ধ পাওয়া যায়। হবিগঞ্জ রোডে চলাচলরত সিএনজিচালিত অটোরিক্সার লাইনম্যান বোরহান উদ্দিন বলেন, গ্রেফতার আতঙ্কে শ্রমিকরা গা-ঢাকা দিয়েছে। মোবাইল ফোনেও তাদের পাওয়া যাচ্ছে না। বাহুবল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আয়েশা হক বলেন, যানজট নিরসনের উদ্দেশ্যে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছিল। শ্রমিকরা পুলিশের সঙ্গে অন্যায় আচরণ করেছে। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

মাসুদ আল রাজী শাবি থেকে :
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বনামধন্য শিক্ষক ও কথা সাহিত্যিক মুহম্মদ জাফর ইকবালের শাবিতে ২৫ বছর পূর্ণ হয়েছে গতকাল। বৃহ¯পতিবার সন্ধ্যা ৬টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে ‘সাস্টে ২৫ বছর’ অনুষ্ঠানে স্মৃতিচারণ করেন মুহাম্মদ জাফর ইকবাল ও ইয়াসমিন হক।
শাহজাদী নওরিন এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানের শুরুতেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে থেকে স্যারকে নিয়ে শৈশব ও জাফর ইকবালের সাথে ক্যা¤পাস লাইফের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন শাবিপ্রবির শিক্ষার্থীরা। এরপর শাবিপ্রবিতে আগমন ও নিজের শিক্ষকতা জীবনের শুরু নিয়ে কথা বলেন ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল এর সহধর্মিণী ড. ইয়াসমিন হক।
তিনি বলেন, ‘আজ আমাদের এই ক্যা¤পাসে ২৫টি বছর পূর্ণ হলো, আমি কখনও এই ক্যা¤পাসে আসতে চাই নি, জাফর এইখানে আসতে চেয়েছিলো বলেই ১৯৯৪ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করি, এই ক্যা¤পাসে আমার অভিজ্ঞতা কম নয় । শাবির প্রায় প্রতিটি প্রশাসনিক পদে থেকেছি । তাই ক্যা¤পাসের সকল নাড়ি নক্ষত্র মুখস্থ হয়ে গেছে। অদ্ভুত এক মায়া জন্মেছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি, যা ভুলবার নয় ।
জাফর ইকবাল স¤পর্কে ড. ইয়াসমিন হক ঠাট্টাচ্ছলে বলেন, ‘খুব অগোছালো মানুষ সে, চরম অগোছালো ছিল বলে একবার এক স্টুডিও তে ছবি তুলতে গেলে তারা পাগল ভেবে তারা বের করে দেয় । সেই আমাকে বই লেখা শুরু করতে উৎসহ যুগিয়েছে, শিক্ষক থেকে লেখকের কাতারে নিয়ে গেছে।’
মুহাম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, ‘আমেরিকা ছেড়ে আমি দেশে চলে এসেছি, কারণ হিসেবে সবাই বলে আমি নাকি দেশ সেবা করতে এসেছি, কিন্তু না, আমি এসেছি কারণ আর কিছুদিন আমেরিকা থাকলে আমি দম বন্ধ হয়ে মারা যেতাম । এদেশ আমাকে পাগলের মত টানে।
কিন্তু সাস্টে আমার ২৫ বছর চলার পথটা সুখকর ছিলো না, সকলের পক্ষে কথা বলতাম বলে প্রশাসন আমাকে দেখতে পারে না । ছাত্রদের পক্ষ নিতাম বলে আমি সবার চক্ষুশূল।’
সাস্টে কোন মজার ঘটনা আছে কিনা জানতে চাইলে মুহাম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, ‘শাবিপ্রবির শুরুর সময় একবার কিছু ছাত্ররা আমাকে আর প্রক্টরকে এসে বললো যে, স্যার, আমরা রাত্রে মাছ রান্না করছি, আপনি আর প্রক্টর স্যার এসে আমাদের সাথে খাবেন, আমি আর তৎকালীন প্রক্টর তাদের সাথে গিয়ে মজা করে খেলাম, পরদিন সকালে শুনলাম তাদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ, তারা নাকি সেই মাছ পাশের এলাকা চুরি করে এনেছে, আর আমাদেরকেও খাইয়েছে যাতে আমরা তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যাবস্থা না নিতে পারি। এসব ঘটনা এখনও আমাকে হাসায় ।
ইয়াসমিন ম্যাডামের সাথে পরিচিত হওয়ার ঘটনাটি জানতে চাইলে স্যার বলেন, ‘তোমাদের বললে বিশ্বাস করবে না, মাত্র একটি শার্ট দিয়ে আমি আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবন পার করেছি, তখন আমার পরিবারের অবস্থা ভালো ছিল না, আমেরিকাতে যখন পিএইচডি করতে যাই তখন আমার কাছে টাকা ছিল না, তাই খরচ চালাতে ইয়াসমিনের কাছ থেকে ২০০ ডলার ধার করি, কিন্তু ধার নিলাম ঠিক, আর তো শোধ করতে পারি না, তাই চিন্তা করলাম বিয়ে করে ফেলি, ২০০ ডলার শোধ করার চেয়ে বিয়ে করা ভালো।’
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানতে চাইলে মুহাম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, ‘আমি বিদেশে যাচ্ছি না আর কোন বিশ্ববিদ্যালয়েও যোগদান করছি না, কারণ আমি চাই সবাই বলুক, জাফর স্যার শুধুই সাস্টের স্যার ছিলেন। আর কয়েকদিন পর আমি একটি সুন্দর নৌকা বানাবো, আমি আর ইয়াসমিন সারাজীবন নদ-নদী, হাওর-বাওড় ঘুরে বেড়াবো।
এছাড়া শিক্ষার্থীদের সাথে তিনি নিজের জীবন ও লেখালেখির হাতে খড়ি সম্পর্কে আলোচনা করেন, তিনি ও ইয়াসমিসন হক শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।
উল্লেখ্য, মুহাম্মদ জাফর ইকবাল ও ইয়াসমিন হক এর শিক্ষকতা জীবন ইতিমধ্যেই শেষ হয়েছে, আর কয়েকদিন পরেই তারা শাবিপ্রবির ক্যা¤পাস ছেড়ে চলে যাবেন।