রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট তৈরী রোধ করুন

22

মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা এখন বড় ধরনের সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। এ সমস্যা মোকাবেলা করা বাংলাদেশের জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ। এমনিতেই লুকিয়ে-ছাপিয়ে কক্সবাজার থেকে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে রোহিঙ্গারা। অন্যদিকে অবৈধ পথে সংগ্রহ করছে বাংলাদেশের পাসপোর্ট। মিয়ানমারের নাগরিক রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশি পাসপোর্ট পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। পাসপোর্টের জন্য প্রয়োজন জাতীয় পরিচয়পত্র। দেখা গেছে ভুয়া এনআইডি, এমনকি জাল জন্মসনদ নিয়ে অনেক রোহিঙ্গা বাংলাদেশি পাসপোর্ট সংগ্রহ করেছে। বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে সৌদি আরব গিয়ে সেখানে আবাস গেড়ে ব্যবসাও করেছিলেন এমন একজনকে কিছুদিন আগে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, গত দেড় বছরে দুই হাজারের বেশি লোকের হাতে পাসপোর্ট তুলে দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের কারিগরি তদন্তদল সম্প্রতি চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে অনুসন্ধান চালিয়ে জানতে পেরেছে, নির্বাচন কমিশনের কিছু কর্মচারী এবং টেকনিক্যাল সাপোর্ট ও ডাটা এন্ট্রি অপারেটরের সহযোগিতায় এই জালিয়াতি চালিয়ে আসছে একাধিক চক্র। রোহিঙ্গাদের এনআইডি কার্ড প্রাপ্তি ও ভোটার হওয়ার চাঞ্চল্যকর ঘটনায় দুদক গঠিত এনফোর্সমেন্ট টিম গত বৃহস্পতিবার দুদক চেয়ারম্যানের কাছে যে প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে, তাতে বলা হচ্ছে, মূলত নির্বাচন কমিশনের দুটি সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট বিপুল অর্থের বিনিময়ে জাতীয় পরিচয়পত্র ও ভোটার তালিকায় নিবন্ধনের মাধ্যমে মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশি নাগরিকত্ব পাইয়ে দিত। প্রতিটি এনআইডি কার্ডের বিনিময়ে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা নেওয়া হতো। এই চক্র দুটি নিয়ন্ত্রণ করতেন ইসির দুই কর্মী। তাঁদের আরো কিছু অবৈধ কার্যক্রমের তথ্য পেয়েছে দুদক এনফোর্সমেন্ট টিম। এর মধ্যে নির্বাচন অফিসের অফিস সহকারী জয়নাল আবেদীনকে গত ১৭ সেপ্টেম্বর ইসির এনআইডি উইংয়ের তদন্তদল আটক করে চুরি হওয়া নির্বাচন কমিশনের একটি নিবন্ধিত ল্যাপটপসহ পুলিশে সোপর্দ করে। তাঁর বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় মামলা করা হয়েছে। দুদকের প্রতিবেদনে নির্বাচন কমিশনের সাতজন কর্মকর্তা-কর্মচারীর সম্পদ অনুসন্ধানের অনুমোদন চাওয়া হয়েছে।
আমরা মনে করি, রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বের সনদ প্রদান, ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তকরণ, এনআইডি প্রদান ও পাসপোর্ট তৈরিতে সহায়তাকারীরা সবাই দেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করেছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই।