স্বশাসিত সংস্থার অলস অর্থ ॥ ২ লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা যাবে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে

34
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বাংলাদেশ সচিবালয়ে মন্ত্রী পরিষদ সভা কক্ষে মন্ত্রী পরিষদ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

কাজিরবাজার ডেস্ক :
স্বশাসিত সংস্থার উদ্বৃত্ত অর্থের ৭৫ ভাগই রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেয়ার বিধান রেখে নতুন একটি আইনের খসড়া অনুমোদন করেছে মন্ত্রী সভা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রী সভার নিয়মিত বৈঠকে আইনের খসড়াটি অনুমোদন করা হয়। স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত, সংবিধিবদ্ধ সরকারী কর্তৃপক্ষ, পাবলিক নন-ফাইন্যান্সিয়াল কর্পোরেশনসহ স্বশাসিত সংস্থাসমূহের উদ্বৃত্ত অর্থ সরকারী কোষাগারে জমা প্রদান আইন, ২০১৯ নামে আইনটি অবিহিত হবে। রাষ্ট্রের জনকল্যাণমূলক প্রকল্পের কাজে এই অর্থ ব্যয় করা হবে বলে বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে। অন্য যে কোন আইনে যাই বলা থাকুক না কেন নতুন এই আইনটি পাস হলে এর বিধানমতেই সকলকে চলতে হবে।
সরকার এসব প্রতিষ্ঠানে দুই লাখ ১২ হাজার ১০০ কোটি টাকা রয়েছে বলে চিহ্নিত করেছে। মোট প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৬৮। তবে বিদ্যুত এবং জ¦ালানিখাতে রয়েছে অলস অর্থের পাহাড়। বিদ্যুত এবং জ¦ালানি বিভাগের যেসব বড় প্রতিষ্ঠান রয়েছে তাদের প্রত্যেকের কাছেই ১০ থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা অলস পড়ে রয়েছে। যার পুরোটাই ব্যাংকে রেখে সুদ নেয়া হচ্ছে। আবার প্রতিষ্ঠানগুলো নিজস্ব ব্যয় প্রকল্পও গ্রহণ করছে না। প্রকল্প গ্রহণের আগে বলা হচ্ছে তাদের আর্থিক সঙ্কট রয়েছে। নতুন আইনে দৈনন্দিন ব্যয় নির্বাহ করার জন্য এসব প্রতিষ্ঠান ২৫ ভাগ অর্থ নিজেদের কাছে রাখতে পারবে। বাকিটা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিতে হবে।
বৈঠক সূত্র বলছে স্বশাসিত সংস্থাগুলো রাষ্ট্রীয় অর্থ নিজেদের কাছে রাখছে। এসব অর্থ তারা বিভিন্ন ব্যাংকে এফডিআর করে সুদ নিচ্ছে। কিন্তু এই অর্থ বিনিয়োগ করে কোন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে না। অন্যদিকে সরকার চড়া সুদে ঋণ নিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। দেখা গেছে এফডিআর করে যে অর্থ রাখা হচ্ছে তার থেকে অনেক বেশি সুদে প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য দেশী বিদেশী ব্যাংক থেকে অর্থের সংস্থান করা হচ্ছে। এমনকি নিজেদের কাছে অর্থ থাকার পরও কোন কোন সংস্থা গ্রকল্প গ্রহণ না করে তৃতীয় কোন পক্ষকে কাজ করার সুযোগ করে দিচ্ছে। এতে সরকারী মুনাফার হার কমছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে বলেন, রাষ্ট্রের স্ব-শাসিত সংস্থাগুলোর আর্থিক স্থিতির পরিমাণ বর্তমানে দুই লাখ ১২ হাজার ১০০ কোটি টাকা। এই টাকা বিভিন্ন ব্যাংকে ফিক্সড ডিপোজিট হিসাবে আছে। তিনি বলেন, এই অর্থ কোন ভাল কাজে বিনিয়োগ হচ্ছে না। এজন্য সরকারের পলিসি হল, নতুন আইনের মাধ্যমে কিছু প্রভিশন রেখে বাকি টাকাটা সরকারী কোষাগারে নিয়ে আসা। আমাদের অনেক প্রকল্প রয়েছে। জনকল্যাণমূলক কাজ, যেগুলোতে আর্থিক সঙ্কট রয়েছে।
খসড়ায় আইনে বলা হয়েছে, এসব সংস্থা চালাতে যে খরচ হয় এবং নিজস্ব অর্থায়নে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে বছরে যে অর্থ প্রয়োজন, তা তাদের নিজস্ব তহবিলে জমা রাখা হবে। এছাড়াও আপদকালীন ব্যয় নির্বাহের জন্য পরিচালন ব্যয়ের আরও ২৫ শতাংশ অর্থ এসব সংস্থা সংরক্ষণ করতে পারবে। ওই সংস্থার কর্মীদের পেনশন বা প্রভিডেন্ড ফান্ডের অর্থও তারা সংরক্ষণ করবে। এরপর যে অর্থ বাকি থাকবে, সেটা সরকারের কোষাগারে জমা দেবে। অর্থাৎ উনাদের বিপদে ফেলা হবে না, উনাদের প্রয়োজনীয় অর্থ রেখে বাকি অর্থটা দেবে।
শফিউল আলম বলেন, এ ব্যবস্থা হলে প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বায়ত্তশাসনে কোন সমস্যা হবে না। আর্থিক ব্যবস্থাপনায়ও কোন সমস্যা হবে না। প্রতিষ্ঠানগুলোর অলস অর্থ সরকার বিনিয়োগ করার জন্যই এই আইন প্রণয়ন করা হয়েছে বলে জানান তিনি। আইনী অধিকারও ক্ষুণœœ করা হয়নি, প্রতিষ্ঠানগুলোর যে টাকার প্রয়োজন হয়, তা তো সরকার দিচ্ছে বলে জানান তিনি। পরিচালন ব্যয় হিসেবে কোন সংস্থা কত টাকা রাখবে, তা প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেই নির্ধারণ করবে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এমন ২৫টি বড় প্রতিষ্ঠানসহ মোট ৬৮টি প্রতিষ্ঠানের একটি তালিকা ইতোমধ্যে করা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এর মধ্যে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের ২১ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা, পেট্রোবাংলার ১৮ হাজার ২০৪ কোটি টাকা, পিডিবির ১৩ হাজার ৪৫৪ কোটি টাকা, চট্টগ্রাম বন্দরের ৯ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা, রাজউকের ৪ হাজার ৩০ কোটি টাকা উদ্বৃত্ত রয়েছে। এই হিসাব গত মে মাস পর্যন্ত।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, তালিকায় শিক্ষাবোর্ডের নামও এসেছে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বোর্ড, ঢাকা, বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ও তালিকায় রয়েছে বলে জানান তিনি।