বিদেশে কাজ করতে গিয়ে মানুষ যেন প্রতারিত না হয় ॥ নজরদারি জোরদারের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

15
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান নীতি-২০১৬ এর অধীন গঠিত অভিবাসন বিষয়ক স্টিয়ারিং কমিটির প্রথম সভায় বক্তব্য রাখছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

কাজিরবাজার ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদেশে যাওয়ার সময় ও দেশের বাইরে কাজ করতে গিয়ে মানুষ যেন প্রতারিত না হয়, সেজন্য ব্যাপক প্রচার চালানোর পাশাপাশি নজরদারি জোরদারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, দেশের বাইরে কাজ করতে গিয়ে মানুষ যেন প্রতারিত না হয়, ধোঁকাবাজিতে না পড়ে সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি দেয়া দরকার। আমাদের নাগরিকরা যে যেই দেশেই যাক, যে কাজেই যাক, আমাদের নজরদারি বাড়ানো দরকার। রবিবার তেজগাঁওতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান নীতি-২০১৬’র আলোকে গঠিত অভিবাসন বিষয়ক জাতীয় ষ্টিয়ারিং কমিটির প্রথম সভায় সূচনা বক্তৃৃতায় প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে বিভিন্ন দিক-নির্দেশনা দিয়ে বলেন, প্রবাসী শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চায় সরকার। কেননা তারা আমাদের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করে তুলতে রেমিটেন্স পাঠানোর মাধ্যমে ব্যাপক ভূমিকা রাখছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষ বিদেশে যাবে এটা একটা স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। কিন্তু কোথাও গিয়ে তারা যেন অকালে হারিয়ে না যায় এবং তাদের নিরাপত্তা ও কল্যাণের দিকে আমাদের বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে। কারণ তারা আমাদেরই নাগরিক। তাদের ভাল-মন্দ দেখার দায়িত্ব আমাদের রয়েছে। তিনি বলেন, বর্তমানে প্রায় এক কোটি বাংলাদেশী বিশ্বের প্রায় একশ’টি দেশে অবস্থান করে দেশে রেমিটেন্স পাঠাচ্ছে। যা আমাদের দারিদ্র্য বিমোচন এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে। তারা দেশে তাদের পরিবারের জন্য যে বিদেশী মুদ্রা পাঠাচ্ছেন তার পরিমাণ জিডিপির ১২ শতাংশের মতো।
বিদেশে লোক পাঠানোর কথা বলে দালালদের মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়ার মতো অনিয়মের কথাও সভায় তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বিদেশে লোক পাঠানোর ক্ষেত্রে সরকারের নানা ব্যবস্থা নেয়া সত্ত্বেও মানুষ অসচেতনতার কারণে দালালের খপ্পরে পড়ে। কিছু দালাল শ্রেণীর মানুষ গ্রামগঞ্জে ঘোরে। সোনার হরিণ ধরার স্বপ্ন দেখিয়ে মানুষের থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে তাদের বাইরে পাঠায়। শুধু বাইরে পাঠিয়ে দিচ্ছে তা না, বাইরে পাঠানোর পর তাদের কোন খবর নেয় না। আত্মীয়-স্বজন যখন চাপ দেয় তাদের থেকে আবার টাকা নেয়। এভাবে কিন্তু একটা অনিয়ম প্রচলিত আছে।
সরকার প্রধান বলেন, বিদেশে পাঠানোর পর সে কোথায় গেছে, সেই খবর কেউ জানে না। মানুষ জমিজমা বিক্রি করে, সবকিছু বন্ধক রেখে দালালকে টাকা দিয়ে বাইরে যায়। কিন্তু যাওয়ার পর সেখানে তাদের কোন খবর থাকে না। অনেক সময় তাদের কোন কাজের ঠিকানাও থাকে না। বাইরে পাঠানোর পর দালাল চক্র তাদের কোন খবরও নেয় না।
এসব অনিয়ম বন্ধ করতে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথাও সভায় তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, অনেক দেশে আমাদের মেয়েরা যায় কাজ করতে। যারা তাদের কাজ করতে পাঠাচ্ছে, কী ধরনের কাজ তারা করতে যাচ্ছে তার জন্য ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা হয় না। ফলে যারা কাজ করতে যাচ্ছে তারা কাজ করতে পারে না। আবার অত্যাচারের শিকার হচ্ছে। এগুলো যাতে বন্ধ হয় সেজন্য ইতোমধ্যে তাদের স্মার্ট কার্ড দেয়া, টেলিফোনের ব্যবস্থা করা, বিশেষ করে মেয়েদের খবর রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা বাইরে যেতে চায় তাদের জন্য সারাদেশে ৫ হাজার ২৭৫টি ডিজিটাল সেন্টার করে দিয়েছি। এর মাধ্যমে রেজিষ্ট্রেশন করবে এবং এই রেজিষ্ট্রেশনের মাধ্যমে তাদের পাঠাব। এসব সুযোগ-সুবিধা থাকার পরও অনেকে দালালদের খপ্পরে পড়ে বিপদে পড়ে যায় মন্তব্য করে সম্প্রতি ভূমধ্যসাগরে নৌকা ডুবিতে অনেক বাংলাদেশীর মৃত্যুর ঘটনা স্মরণ করিয়ে দেন শেখ হাসিনা।
দেশের বাইরে কাজ করতে গিয়ে মানুষ যেন প্রতারণার শিকার না হয়, সেজন্য জনসচেতনতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই জনসচেতনতা সৃষ্টি করে তাদের বোঝানো দরকার, তারা যেন এভাবে বিদেশে না যায়। মানুষ যাতে দালালদের মুখরোচক কথার ধোঁকাবাজিতে না পড়ে সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে। যে দেশে যাচ্ছে সেই দেশের আইন-কানুন সম্পর্কে জানানো, এসব করার চেষ্টা আমরা করছি। পাশাপাশি কর্মক্ষম যুব সমাজকে দক্ষ করে গড়ে তোলার তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, আমাদের দেশে কর্মক্ষম যুবসমাজ রয়েছে, সেটা আমাদের জন্য বিরাট শক্তি। তাদের বিভিন্ন কাজের ট্রেনিং দিয়ে দক্ষতা বাড়াতে হবে। এখন আমরা শুধু লেবার পাঠাব না। স্কিলড ম্যানপাওয়ার, অর্থাৎ দক্ষ জনশক্তি কীভাবে আমরা পাঠাতে পারি, রফতানি করতে পারি, এক্ষেত্রে যে যাবে সেও লাভবান হবে; দেশও লাভবান হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সরকার গঠনের পর থেকে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তাদের জন্য বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করার কাজ করে আসছি। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক করে দিয়েছি, যাতে ব্যাংকের মাধ্যমে প্রয়োজনে বিনা জামানতে ঋণ নিয়ে মানুষ বিদেশ যেতে পারে। যারা কাজের জন্য বিদেশ যাচ্ছে তাদের জীবন বৃত্তান্ত সহযোগে একটি ডাটাবেজ প্রস্তুত করার জন্যও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ প্রদান করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিশেষ করে তারা কোন কাজের জন্য কোন দেশে যাচ্ছে তার বিবরণ থাকতে হবে।’
বিদেশে গমনেচ্ছুরা যে কাজের জন্য বিদেশে যাচ্ছে তার প্রশিক্ষণ এবং সে দেশের ভাষার ওপর দখল থাকার বিষয়ে গুরত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে আমরা যৌথভাবেই প্রশিক্ষণের আয়োজন করতে পারি, যেমনটি অতীতেও করা হয়েছে।’
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান নীতি-২০১৬’র অধীন গঠিত অভিবাসন বিষয়ক জাতীয় ষ্টিয়ারিং কমিটির ১ম সভায় অন্যান্যের মধ্যে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেকসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।