রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান চাই

6

রোহিঙ্গা সংকট ক্রমেই জটিল রূপ নিচ্ছে। গত বছরের নভেম্বরে নেওয়া প্রত্যাবাসন উদ্যোগে কোনো রোহিঙ্গা ফিরে যেতে রাজি হয়নি। এরপর আবার চলতি মাসের ২২ তারিখ থেকে প্রত্যাবাসন কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা ছিল। যানবাহনও প্রস্তুত ছিল। কিন্তু এবারও কোনো রোহিঙ্গা ফিরে যেতে রাজি হয়নি। এর পরও রোহিঙ্গাদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হচ্ছে। কোনো রোহিঙ্গা রাজি হলে তাদের ফেরত পাঠানোর প্রস্তুতি রাখা হয়েছে। কিন্তু ধারণা করা হচ্ছে, তাদের না যাওয়ার সিদ্ধান্ত দলগত ও আরোপিত। বিচ্ছিন্নভাবে কেউ কোনো মতামত দিচ্ছে না বা দিতে পারছে না। এ অবস্থায় এই সংকটের সমাধান কী?
সাক্ষাৎকার নেওয়া প্রায় প্রত্যেকেই একই কথা বলছে—আগে নাগরিকত্ব, নিজ ভূমিতে পুনর্বাসন, লুট হওয়া সম্পদ ফেরত এবং নির্যাতনকারীদের বিচার করতে হবে। মিয়ানমার জাতীয় পরিচয়পত্র দিতে চাইছে এবং পর্যায়ক্রমে নাগরিকত্ব দেওয়া হবে বলে আশ্বাস দিচ্ছে। কিন্তু এই আশ্বাসকে তারা মানতে নারাজ। রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে কর্মরত দেশি-বিদেশি এনজিওর প্রতিনিধিরাও তাদের বোঝাচ্ছে, চার দফা দাবি আদায় না করে মিয়ানমারে ফেরত যাওয়া উচিত হবে না। কিছু আন্তর্জাতিক সংস্থাও প্রকারান্তরে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কণ্ঠ মেলাচ্ছে। কিন্তু এই চার দফা দাবি মেনে নিতে মিয়ানমারকে বাধ্য করার ব্যাপারে তারা কার্যত কোনো পদক্ষেপই নিচ্ছে না। কয়েকজন সামরিক কর্মকর্তার বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া ছাড়া মিয়ানমারের বিরুদ্ধে অবরোধ আরোপের মতো কোনো পদক্ষেপের কথা তারা ভাবছে বলেও মনে হয় না। প্রকারান্তরে তারা মিয়ানমারের দুরভিসন্ধির পক্ষেই কাজ করছে। মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের দেশছাড়া করেছে এবং চাইছে, রোহিঙ্গারা আর যাতে ফিরে না আসে। এভাবে চললে আগামী ১০০ বছরের মধ্যে মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের চার দফা দাবি মেনে নেবে তার কী নিশ্চয়তা আছে? তাহলে এই ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা কি বাংলাদেশে স্থায়ীভাবে থেকে যাবে? তাতে মিয়ানমারের দুরভিসন্ধিরই জয় হবে।

প্রাকৃতিক বনভূমির দিক থেকে কক্সবাজার ছিল বাংলাদেশের সবচেয়ে সমৃদ্ধ একটি অঞ্চল। তা এখন ধ্বংসের শেষ পর্যায়ে। কক্সবাজারের স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবনে নেমে এসেছে চরম দুর্যোগ। এদিকে দৃষ্টি দেওয়া কি সরকারের কর্তব্য নয়? কেন এখনো ভাসানচরে তাদের স্থানান্তর করা যায়নি? কেন আরো কিছু অঞ্চলে তাদের সরানো হচ্ছে না? নানা সূত্রে পাওয়া খবর থেকে জানা যায়, প্রভাবশালী কিছু রোহিঙ্গা এখানে থেকে কোটি কোটি টাকা আয় করছে ভয়ংকর মাদক ইয়াবা চোরাচালানের মাধ্যমে। অস্ত্র চোরাচালানেও তাদের সম্পৃক্ততা আছে। আছে শক্তিশালী সশস্ত্র ক্যাডার বাহিনী। তারাও রোহিঙ্গাদের না যাওয়ার জন্য ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। অনেকেই মনে করেন, মিয়ানমার সীমান্ত থেকে দূরে সরিয়ে নিলে তারা এক দিনও বাংলাদেশে থাকতে চাইবে না। সরকার এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না কেন? তারা এখানে সন্ত্রাস, খুনখারাবিতেও জড়িয়ে গেছে। ২২ তারিখ রাতেও স্থানীয় এক যুবলীগ নেতাকে খুন করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আমরা রোহিঙ্গা সমস্যার দ্রুত সমাধান চাই। তার আগে চাই, কক্সবাজার ও এখানকার বাসিন্দাদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করা হোক।