বিভিন্ন সংগঠনের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ ॥ শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও কাশ্মীরের স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনতে হবে

41
কাশ্মীরে গণহত্যার প্রতিবাদে নগরীতে মহানগর জমিয়তের উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল।

উগ্র হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকার কর্তৃক ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বিলুপ্তি ও কাশ্মীরে গণহত্যার প্রতিবাদে সিলেট মহানগর জমিয়তের উদ্যোগে বিশাল বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব জননেতা মাওলানা আব্দুল মালিক চৌধুরী বলেন, ১৯৪৭ সালে জম্মু-কাশ্মীরকে ভারত সরকার কর্তৃক প্রদত্ত সনদ এবং সংবিধানের ৩৭০ ধারা; যার মাধ্যমে তাদের একটা স্বতন্ত্র এবং স্বায়ত্ত্বশাসন ছিল; হিন্দুত্ববাদি বিজেপি সরকার গায়ের জোরে অস্ত্রের মুখে এই সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে কাশ্মীরী মুসলমানের সে অধিকার কেড়ে নেয়। তিনি আরো বলেন, ১৯৪৮ সালে জাতিসংঘের প্রস্তাবনায় স্পষ্ট বলা হয়েছে যে, কাশ্মীরের জনগণের মতামতের ভিত্তিতেই সেখানকার সমস্যার সমাধান করতে হবে। অথচ ভারত জাতিসংঘের এই প্রস্তাবকে লঙ্ঘন করে পুরো কাশ্মীরকে জুলুমের রাজ্যে পরিণত করেছে। তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, জীবনের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও কাশ্মীরের স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনতে বিশ্ব মুসলিম লড়াই চালিয়ে যাবে।

কাশ্মীরে মুসলিম নির্যাতনের প্রতিবাদে বাংলাদেশ জমিয়ত উলামায়ে ইসলাম এর মানববন্ধনে বক্তব্য রাখছেন জমিয়তের কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব তাহুরুল হক জকিগঞ্জী।

তিনি ৮ আগষ্ট বৃহস্পতিবার বাদ আসর সিলেট মহানগর জমিয়তের উদ্যোগে আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিল পরবর্তী সিটি পয়েন্টের পথ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপরোক্ত কথাগুলো বলেন।
মহানগর জমিয়তে ইসলামের সহ সভাপতি প্রিন্সিপাল মাহমুদুল হাসানের সভাপতিত্বে ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আবু বকর সিদ্দিক সরকারের পরিচালনায় পথ সভায় বক্তব্য রাখেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম সিলেট মহানগর শাখার সহ সভাপতি মুফতি আলতাফুর রহমান, জমিয়তে উলামা ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় নেতা ও সিলেট জেলা জমিয়তের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আব্দুস সালাম, মাও: খায়রুজ্জামান, মাও: শেখ মুজিবুর রহমান, ছাত্রনেতা এম. বেলাল আহমদ চৌধুরী, মাও: ছিফত উল্লাহ, হাফিজ তামীম চৌধুরী, মাও: আলবাব চৌধুরী, মাও: হেলাল আহমদ, মাও: কায়সান মাহমুদ, মাও: আব্দুল হাই আল হাদী, মাও: জাফর ইকবাল, মাও: মাহমুদ, মীম সালমান, দেলোয়ার হোসেন ইমরান, হাফিজ ইব্রাহিম খলিল, হাফিজ আব্দুল্লাহ, হাফিজ ইলিয়াছ আহমদ, হাফিজ মোয়াফিজুল ইসলাম সাকিব, হাফিজ মাহমুদ প্রমুখ।
জেলা ছাত্র জমিয়ত : কাশ্মীরে ভারতীয় আগ্রাসনের প্রতিবাদে ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশ সিলেট জেলা শাখার উদ্যোগে আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিল পরবর্তী পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম সিলেট জেলা সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আতাউর রহমান বলেন, হিন্দুত্ববাদী মোদি সরকার সাংবিধাদের ৩৭০ ধারা বাতিল করে কাশ্মীরীদের অধিকার হরন করেছে। রাজ্য প্রধানদের গ্রেফতার করে পর্যটকদের সরিয়ে অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করে তাঁরা ক্লান্ত হয়নি। ১৪৪ ধারা জারী করে ইন্টারনেট পর্যন্ত বন্ধ করেছে। তিনি আরো বলেন, বিজেপি সরকার প্রতিনিয়ত তাঁদের উপর অত্যাচার করছে। এসবের শেষ চাই। চাই কাশ্মীরের স্বাধীনতা। চাই আমাদের ভাই বোনের নিরাপত্তা, বেঁচে থাকার অধিকার। নেতৃবৃন্দ জাতীসংঘের নিরব ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। বাংলাদেশ সরকারকে কাশ্মীরের পক্ষে কথা বলার আহবান জানিয়ে নেতৃবৃন্দ বলেন, বাংলাদেশ সরকারের নিরব ভূমিকায় জাতি হতাশ। বিশ্ব মানবাধিকার সংস্থাগুলো মুসলিম নির্যাতনের এ দৃশ্য দেখেও না দেখার ভান করে এড়িয়ে যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ভারত মুসলমানদের সহ্য করতে পারছে না, তাই তারা মুসলিম শূণ্য করতেই এধরণের নির্যাতনে পথ বেছে নিয়েছে। ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে বিনা উস্কানীতে মুসলিম নিধন, নির্যাতন, ধর্ষণ করছে কট্টরপন্থি হিন্দু সম্প্রদায়ের সন্ত্রাসী ও জঙ্গিরা।’ কাশ্মীরে আগ্রাসন মুসলিমবিশ্বকে স্তব্ধ করে রেখেছে।
ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশ সিলেট জেলা শাখার উদ্যোগে ৮ আগষ্ট বৃহস্পতিবার দুপুর ৩ টায় শিশু পার্কের সামনে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। মিছিলটি নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে চৌহাট্টা পয়েন্টে শেষ হয়।
জেলা সভাপতি ফরহাদ আহমদের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক ফয়েজ উদ্দিন ও যুগ্ম সম্পাদক ইয়াহিয়া হামিদীর যৌথ পরিচালনায় পথসভায় বক্তব্য রাখেন ও উপস্থিত ছিলেন, সুনামগঞ্জ জেলা জমিয়তের প্রশিক্ষণ সম্পাদক মাওলানা সাজিদুর রহমান, যুব জমিয়তের কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি মাওলানা আখতারুজ্জামান, মহানগর জমিয়তের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ সালিম ক্বাসিমী, জেলা জমিয়তের প্রচার সম্পাদক মাওলানা সালেহ আহমদ শাহবাগী, জেলা যুব জমিয়তের সাধারণ সম্পাদক রায়হান আহমদ, সদর উপজেলা জমিয়তের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা নাজিম উদ্দিন, জৈন্তাপুর উপজেলা জমিয়তের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা কবির আহমদ, জেলা যুব জমিয়ত নেতা মাওলানা জফির উদ্দিন, সুনামগঞ্জ জেলা ছাত্র জমিয়তের সভাপতি ত্বাহা হোসাইন, সিলেট মহানগর ছাত্র জমিয়তের সভাপতি লুৎফুর রহমান, কেন্দ্রীয় ছাত্র জমিয়তের অর্থ সম্পাদক আবুল খয়ের, লুকমান হাকিম, নজরুল ইসলাম, নোমান সিদ্দিকী, হাফিজ আব্দুল্লাহ প্রমুখ।
মাদানী কাফেলা : বঙ্গবন্ধুর ‘সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব’ অনুসারে কাশ্মীর নিয়ে নিজের অবস্থান ঘোষণার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আহবান জানিয়েছেন মাদানী কাফেলা বাংলাদেশের সভাপতি মাওলানা রুহুল আমীন নগরী। বৃস্পতিবার এক বিবৃতিতে মাদানী কাফেলা বাংলাদেশের সভাপতি বলেন, কাশ্মীরে মানবিক সংকট চলঠে। আজ কয়েক দিন ধরে কাশ্মীরে মানুষের খাবার নেই, সবকিছু বন্ধ। এই জিম্মি দশা থেকে মুক্তির জন্য শান্তির বার্তাবাহক হিসেবে কাজ করতে পারে বাংলাদেশ।
বিবৃতিতে বলা হয়, ভারত শাসিত কাশ্মীর নিয়ে সম্প্রতি উত্তেজনা দেখা দিলেও সমস্যাটি দীর্ঘদিনের। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসন থেকে বেরিয়ে ভারত ও পাকিস্তান নামক দুই রাষ্ট্রের জন্মলগ্ন থেকেই সংঘাত শুরু। ফলে উপমহাদেশ বা বিশ্বের বিভিন্ন রাজনীতিক নাড়া দিয়েছে কাশ্মীর ইস্যু। বাংলাদেশের স্থপতি ও স্বাধীনতা সংগ্রামের অবিসংবাদিত নেতা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও কাশ্মীর ইস্যুটি বেশ গুরুত্ব দিয়েছিলেন। কাশ্মীর সংকট সমাধানে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দিয়েছিলেন।
বঙ্গবন্ধুর জীবনীগ্রন্থ ‘কারাগারের রোজনামচা’য় বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে।
কাশ্মীর নিয়ে শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, ‘অত্যাচার আর গুলি করতে কেহ কাহারো চেয়ে কম পারদর্শী নয়। গুলি করে বা গ্রেফতার করে সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়। ভারতের উচিত ছিল গণভোটের মাধ্যমে কাশ্মীরের জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার মেনে নিয়ে দুদেশের মধ্যে একটি স্থায়ী শান্তি চুক্তি করে নেয়া।’
আমরা বাংলাদেশের শান্তিকামী জনতা বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার কাছে দাবী জানাচ্ছি, তিনি যেনো পিতার পথ অনুসরণ করে কাশ্মীরী সমস্যা সমাধানে অনুরুপ ভূমিকা রাখেন।
বাংলাদেশ জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম : বাংলাদেশ জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম-এর কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব জামিয়া লুগাতুল আরাবিয়ার প্রিন্সিপাল তাহুরুল হক জকিগঞ্জী বলেছেন, উম্মাদ হিন্দু জঙ্গীদের হাত থেকে কাশ্মীর তথা ভারতের নিরীহ মুসলিমদের রক্ষায় আমাদেরকে প্রতিবাদী হতে হবে। সকল মুসলিম দেশকে একযোগে ভারতের হিন্দুত্ববাদী জঙ্গি সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে। এক্ষেত্রে আমরা আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশের অবস্থান স্পষ্প করার আহ্বান জানাচ্ছি। মনে রাখতে হবে- জালিমকে প্রশ্রয় দিলে একসময় নিজেকেও মজলুম হতে হবে।
তিনি বৃহস্পতিবার (৮ আগষ্ট) নগরীর উপশহরে বাংলাদেশ জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম সিলেট জেলা শাখার এক বিশাল মানববন্ধনে এ কথাগুলো বলেন।
জমিয়ত নেতা শায়খ আব্দুর রউফ-এর নেতৃত্বে এ মানববন্ধনে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জমিয়ত নেতা মাওলানা ইকরাম সিদ্দিকী, মাওলানা শাহজাহান নিয়াজী, মাওলানা শাহ নিছার আহমদ, মাওলানা শাহ উসমান আলী, মাওলানা শুয়াইব খান, হাফিজ সিরাজুল ইসলাম, ছাত্রনেতা খালিদ সাইফুল্লাহ প্রমুখ। বিজ্ঞপ্তি