শোকের মাস আগষ্ট

26

আগষ্ট বাঙালির শোকের মাস, বেদনার মাস। ইতিহাসে রক্তের আখরে লেখা শোকাবহ মাস আগষ্ট। আজ আগষ্টের প্রথম দিন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট ইতিহাসের এই পৈশাচিক হত্যাকান্ড ঘটে। সেদিন ঘাতকরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে, যা বিশ্ব ইতিহাসের যে কোন বর্বর হত্যাকান্ডকে হার মানায়। ১৫ আগষ্ট শুধু একজন বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেনি ঘৃণ্য নরপশুরা, তারা একে একে হত্যা করেছে বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, বঙ্গবন্ধুর পুত্র শেখ কামাল, শেখ জামাল, শিশুপুত্র শেখ রাসেলসহ পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামালকে। জঘন্যতম এ হত্যাকা- থেকে রক্ষা পাননি বঙ্গবন্ধুর ভাই শেখ নাসের, ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মণি, বেগম আরজু মণি, কর্নেল জামিলসহ ১৬ জন। ঘাতকদের নিক্ষেপিত গোলায় মোহাম্মদপুরে মারা যায় কয়েক সাধারণ নারী-পুরুষও। এসব হত্যার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের মহান আদর্শ ও চেতনাকে মুছে ফেলার চেষ্টা শুরু হয়। যে ডাকে জেগেছিল সাড়ে সাত কোটি প্রাণ রণাঙ্গনে, সেই কণ্ঠকে স্তব্ধ করাই শুধু নয়, জাতির বিকাশকে স্তিমিত করার ঘৃণ্য চেষ্টাকে অবলোকন করেছে বিশ্ববাসী। কিন্তু তারা শেষ পর্যন্ত সফল হয়নি।
যে কোন মানদন্ডের বিচারে বঙ্গবন্ধু ছিলেন এক অনন্য নেতা। সহজ-সরল, সাদামাটা অথচ দৃঢ়চেতা এক মানুষ। গোপালগঞ্জের নিভৃত পল্লীতে জন্মগ্রহণ করেও তিনি একটি পিছিয়ে পড়া জাতিকে পরাধীনতা থেকে মুক্ত করেছেন। দিয়েছেন স্বাধীনতা। বিশ্ব ইতিহাসে যার দৃষ্টান্ত বিরল। বঙ্গবন্ধু আমাদের স্বাধিকার ও স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা। তিনি অবহেলিত বাঙালি জাতিকে একটি অভীষ্ট লক্ষ্যে স্থির করতে পেরেছিলেন- দূরদৃষ্টি, রাজনৈতিক প্রজ্ঞা এবং তাঁর পবিত্র জীবনদর্শন দিয়ে। যে জীবনদর্শনে মিশে আছে সততা, নির্লোভ, মানুষের প্রতি গভীর মমতা, আত্মত্যাগ এবং দুর্মর সাহস। যা তিনি অর্জন করেছিলেন হাজার বছরের চিরায়ত ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি থেকে। একটি দেশ, একটি জাতি, একটি পতাকাÑএই স্বপ্ন বুকে নিয়ে মুক্তির আন্দোলনে তিনি অকুতোভয়চিত্তে দিয়েছেন সর্বোত্তম নেতৃত্ব। তাঁর নামেই পরিচালিত হয়েছে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ। তিনি স্বীকৃত হয়েছেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি হিসেবে। মানুষের অশেষ শ্রদ্ধায় হয়েছেন জাতির পিতা।
এ কথা সত্য যে, একটা সময় ছিল যখন বঙ্গবন্ধুর নাম এক রকম নিষিদ্ধ ছিল। শিশু-কিশোরদের দীর্ঘকাল জানতে দেয়া হয়নি মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস। শুধু বঙ্গবন্ধুকে অস্বীকার করাই নয়, নানাভাবে তাঁর সম্পর্কে অপপ্রচারও করা হয়েছে। তাঁর অবদানকে নানাভাবে খাটো করা, এমনকি অস্বীকারও করা হয়েছে। কিন্তু তাদের সে অপচেষ্টা সময়ের বিবর্তনে নস্যাত হয়ে যায়। বাংলার মাটিতে তাঁর হত্যার বিচারও সম্পন্ন হয়েছে। ঘাতকদের দন্ডাদেশ কার্যকর হয়েছে। পিতৃহত্যার কলঙ্ক থেকে মুক্তি পেয়েছে জাতি।